মিরপুর থেকে: ২০১১ সালের বিশ্বকাপে বাংলাদেশে প্রথমবার আসেন আমেরিকা প্রবাসী পাকিস্তানি সমর্থক মোহাম্মদ বশির। ভালোবেসে ‘বশির চাচা’ বলেই ডাকেন সবাই।
ভালোবাসেন ভারতের অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিকেও। একবার পাক-ভারত ম্যাচের টিকিট কিছুতেই সংগ্রহ করতে পারছিলেন না বশির চাচা। পরে ধোনিই তাকে দিয়েছিলেন একটি টিকিট। এরপর থেকেই ধোনিভক্ত তিনি। দ্বিতীয়বার বাংলাদেশে এসে হয়ে গেছেন টাইগারসমর্থক। মাশরাফির দলের পারফরমেন্স মুগ্ধ করছে তাকে। ০২ মার্চ মিরপুরে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পর নিজ আগ্রহেই বুকে জড়ান বাংলাদেশের পতাকা। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপারটি নিয়ে মিথ্যা-গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
অভিযোগ উঠে পাকিস্তানি ওই সমর্থককে জোর করে বাংলাদেশের পতাকা জড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। তাকে লাঞ্চিত করা হয়েছে আওয়ামী লীগের এমপি ইলিয়াস মোল্লার উপস্থিতিতে। ফেসবুকে দেয়া ছবিটিতে অনেকটা এভাবেই সাজানো সব। এমন গুজব ছড়ানোয় ক্ষুব্ধ বশির চাচা।
বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমি বাংলাদেশকে ভালোবাসি, ভালোবেসেই আমি পতাকা বুকে নিয়েছি। আমাকে কেউ জোর করেনি। বাংলাদেশের মানুষ অনেক ভালো। তবে দু-একজন আছে কিছুটা বিরক্ত করে আমাকে। এটা গ্যালারিতে হয়েই থাকে। বাংলাদেশে খেলা হলেই আমি বার বার এখানে আসবো। ক্রিকেট বোর্ডের আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি’র (বিসিবি পরিচালক) সঙ্গে আমার ভালো বন্ধুত্ব।
পাকিস্তানের লাহোরে জন্ম নেয়া ক্রিকেটভক্ত মোহাম্মদ বশির ৪৮ বছর ধরে আমেরিকার শিকাগোর শহরে বসবাস করেন। সেখানকার রেস্তোরা ‘খাওয়াব নওয়াজ’ এর মালিক তিনি। বিয়ে করেছেন ভারতের হায়দ্রাবাদে। এজন্য গায়ে লম্বা জাসির অর্ধেকে থাকে পাকিস্তানি পতাকা, অর্ধেক থাকে ভারতের। ক্রিকেটের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করেন ৫৯ বছর বয়সী বশির চাচা। ৬ মার্চের ফাইনাল (বাংলাদেশ-ভারত) শেষে আমেরিকায় ফিরবেন তিনি।
মজার ব্যাপার হলো, ফাইনালে গ্যালারির চেনামুখ টাইগারভক্ত শোয়েব আলী এই বশির চাচাকে বাংলাদেশ-সমর্থন দিতে অনুরোধ করেছেন। অন্যদিকে ভারতীয় কট্টর সমর্থক সুধীর গৌতম তার দেশকেই বলছেন সমর্থন দিতে। ফাইনালে তাই কোন দলকে সমর্থন দেবেন সেটা নিয়ে চিন্তিত বশির চাচা! তিন দেশের এ তিন ক্রিকেটভক্ত মিলেমিশে থাকছেন মিরপুরের প্রিন্স হোটেলে। ভিন্ন ভাষাভাষি, ভিন্ন বয়সের এই তিন ক্রিকেটভক্ত সৃষ্টি করেছেন সৌহার্দ্যের এক অনন্য নজির।
বাংলাদেশ সময়: ২১২০ ঘণ্টা, ০৪ মার্চ ২০১৬
এসকে/এমআর