ঢাকা: এশিয়া কাপ টি-২০ টুর্নামেন্টের ফাইনাল ম্যাচে লাল-সবুজের জার্সি পরে দেশের মাটিতে খেলবেন মাশরাফিরা। সেই খেলা মাঠে বসে না দেখলে হয়! তাই তো একটি টিকিটের আশায় বিক্রি শুরুর ৪২ ঘণ্টা আগ থেকে লাইনের সবার আগে মিরপুর বাংলা কলেজের ডিগ্রির ছাত্র রেজওয়ান।
‘বাংলাদেশের ম্যাচ বলে কথা, রাত জাগা কোনো ব্যাপারই না, যে করে হোক একটা টিকিট চাই’, বাংলানিউজকে বলেন রেজওয়ান। তিনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন বৃহস্পতিবার (৩ মার্চ) বিকেল ৪টায়।
রেজওয়ানের মতো হাজার হাজার ক্রিকেটপাগল নারী-পুরুষ এখন সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কেবল একটি টিকিটের আশায়। নারী-পুরুষের জন্য লাইনও আলাদা। নারীদের লাইনটি ছোট হলেও ধীরে ধীরে তা দীর্ঘ হচ্ছে।
শুক্রবার (৪ মার্চ) দিনগত রাত একটার দিকে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, ইউসিবি ব্যাংকের সামনে থেকে শুরু হওয়া পুরুষদের লাইনটি তিন পথ পেঁচিয়ে লেজ ঠেকেছে মূল সড়কে। দীর্ঘতর হচ্ছে সেই লেজ।
বৃহস্পতিবার বিকেলে দাঁড়িয়ে লাইনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় অবস্থানে আছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী আরিফ ও ব্যবসায়ী শহীদ। মিরপুরের ব্যবসায়ী শহীদ বলেন, বাংলাদেশের খেলা তো দেখতেই হবে।
কিশোরগঞ্জ থেকে আসা কলেজ ছাত্র রনি লাইনে দাঁড়িয়েছেন বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায়। লাইনে তার অবস্থান চতুর্থ। এক নিঃশ্বাসেই বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশ দলের জন্য এসেছি। টিকিট নেবো, ম্যাচ দেখবো, জয়ীর বেশে বাড়ি ফিরবো।
ইউসিবি ব্যাংকের সামনে থেকে লাইন ধরে এগোতেই বায়তুল মোশাররফ সিনিয়র মাদ্রাসার গলি ধরে দেখা গেলো অন্ধকারের মধ্যে কেউ মাদুর, কেউবা খবরের কাগজ পেতে বসে আছেন লাইনে। সময় কাটাতে তাস, লুডু খেলছেন কেউ কেউ। কেউবা একটু জিরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ গাইছেন দেশের ক্রিকেট নিয়ে গান।
একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো আজমলের গলিতে কয়েক বন্ধু মিলে মশার কয়েল জ্বালিয়ে বসে গল্প করছেন। সেখানে ঢাকার দোহার কলেজের ছাত্র রফিকুল ইসলাম বলেন, কষ্ট বলতে কিছু নাই, টিকিট পাইলেই হইছে। নিজের দেশের জন্য সব করতে পারি। বাংলাদেশের ম্যাচ মাঠে না দেখলে হয়?
দোহার থেকে তারা ২০ জন এসে শুক্রবার সন্ধ্যায় লাইনে বসে পড়েছেন। লাইন ঠিক রেখে পালা করে খেয়ে আসছেন, কেউবা ক্লান্তি কাটাতে হেঁটে আসছেন।
লাইনে থেকে টিকিট পাবেন কিনা তা নিয়েও শঙ্কা কারও কারও মধ্যে। সোহেল নামে মিরপুর দুই নম্বর এলাকার এক যুবক চেরিব্লসম স্কুলের গলিতে লাইনে দাঁড়িয়ে বলেন, এবার ভিড় বেশি। টিকিট পাওয়া গেলে ভাগ্য বলতে হবে। তবে লাইন ঠিক রাখলে টিকিট নিশ্চিত।
একই লাইনে দাঁড়ানো রোহান নামে এক তরুণ বলেন, নিজ দেশের খেলার জন্য কোনো অলসতা নাই।
রাত দু’টার দিকে মূল সড়কে লাইনের শেষ মাথায় হুড়োহুড়ির সময় হঠাৎ লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এতে ডান হাত ভেঙে যায় মিরপুর এভিনিউ ফাইভ এলাকার আব্দুস সালামের ছেলে শাকিলের।
ওই সময় পুলিশকে বলতে শোনা যায়, টিকিট নিতে এসেছে, জুয়া কেন? পুলিশের লাঠিচার্জে কিছু সময়ের জন্য ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় লাইন। পরে শাকিলকে স্থানীয় আজমল হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পাঠানো হয় পঙ্গু হাসপাতালে।
এর আগে মিরপুর থানার এএসআই মাহফুজুল হক বলেন, সন্ধ্যা থেকে এখানে ২৮ জন পুলিশ সদস্য ডিউটি করছেন। উপরের নির্দেশ আছে। কেউ যেন লাইনে অবৈধভাবে ঢুকতে না পারে। টিকিট নিয়ে সবাই খেলা দেখতে পারলে আমরা খুশি।
টিকিট নিতে কেবল মধ্য রাতের মধ্যেই জড়ে হয়েছেন ৪/৫ হাজার ক্রিকেটপ্রেমী, বলেন তিনি।
এদিকে টিকিটপ্রত্যাশীদের আগমনে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের বেচাকেনাও তুঙ্গে। আজমলের গলিতে বিসমিল্লাহ স্টোরের মাসুদ বলেন, অনেক বেশি দর্শক, সবাই টিকিট পাবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
ভ্রাম্যমাণ দোকানে বিরিয়ানি বিক্রি করছিলেন আবুল হোসেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের ম্যাচের জন্য লোক বেশি। বেচাবিক্রিও ভালো।
বাংলাদেশ সময়: ০৬৫৬ ঘণ্টা, মার্চ ৫, ২০১৬
এমআইএইচ/আরএম