মিরপুর থেকে: ইতিহাস তৈরির প্রত্যুষে লাইন ধরে দাঁড়িয়েছে কয়েকশ’ তরুণ! দু:খিত প্রত্যুষে বললে ভুল হবে, কেননা এই তরুণদের ভিড় গতকাল (শনিবার) রাত থেকে। রাতের ডিউটিতে থাকা পুলিশ চলে গেছে আবার দিনের ডিউটিতে এসে গেছে আরও পুলিশ।
প্রতি সেকেন্ডে লাইন বাড়ছে। বাড়ছে লাইনের উপর চাপ। তাই নিজেকে টিকিয়ে রাখতে লাইনের বাঁশের সঙ্গে হাত পেছিয়ে ধরে থাকার চেষ্টায় তারা।
শুধু যে তরুণরা লাইনে দাঁড়িয়ে তা কিন্তু নয়! বিভিন্ন বয়সের নারীরাও লাইন ধরেছেন। কেউ তাদের ছোট্ট শিশুদের নিয়েও লাইনে আছেন।
শুধু টিকিট চাই আর কিছু নয়-বার বার যখন পুলিশ তেড়ে আসে এইকথা বোঝাতে সাদা কাগজ মেলে সেখানে কয়েক তরুণ লিখেছে ‘আমরা সবাই ছাত্র উশৃঙ্খলাতা চাই না, একটা করে টিকিট চাই’।
‘২৭ হাজার টিকিট, আমাদের টিকিট গেল কই?’ -লাইন থেকে এমনটি একটি সাদা পোস্টার মেলেও ধরেছ তারা। ক্রিকেট পাগল তরুণদের এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। উত্তর একটু হয়তো বোঝা যাবে মাশরাফির কথা শুনলে। সংবাদ সম্মেলনে হাতের পাঁচ আঙ্গুল দেখিয়ে তিনি বলেছিলেন আমি মাত্র ৫টি টিকিট পেয়েছি। বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের এই যখন অবস্থা। ২৫টি টিকিট চেয়ে পেয়েছেন মাত্র ৫টি। তখন ক্রিকেটপ্রেমীদের কি হবে?
তরুণদের একটা অংশের ভিড়ের লক্ষ্য ইউসিবি ব্যংক। কিন্তু ব্যাংক আজ কোনো টিকিট দিচ্ছে না। তবু নিরাপত্তায় ব্যাংকের সামনে পুলিশের অবস্থান চোখে পড়ে।
তবু বেড় বাড়ছে বাড়ছে লাইন-যেকোন সময় ভিড় থেকে বিশৃঙ্খলা ছড়াতে পারে। ক্রিকেট ভক্তরা যেকোন মূল্যেইতো চাইছে টিকিট। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের গাড়ি। গাড়ি থেকে গরম পানি বা মরিচের গুড়া ছড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হবে যেকোন বিশৃঙ্খলা।
লাইনে ফাঁক ফোকর নেই। ঠাসা ভিড়। এই ভিড়ের লক্ষ্য টিকিট। মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ারেম সামনের বুথ থেকে টিকিট নিতে দীর্ঘতর হচ্ছে লাইন।
ইনডোর স্টেডিয়ামের পাশে দুপুরে পড়ে আছে ময়লা-আবর্জনার ডাস্টবিন। সেই ডাস্টবিন ছড়িয়ে গেছে লাইন। গন্ধ ছড়াচ্ছে আশপাশে। গন্ধের ভয়ে লাইন ছাড়লে হারতে হবে টিকিট যুদ্ধে। দেখা হবে না ক্রিকেট যুদ্ধ। তাই নাক বন্ধ রেখে রুমাল চেপেও লাইনে ঠিকে থাকার চেষ্টায় তরুণেরা।
লাইন উপস্থিতি বাড়ছে। তাই ঠেলাঠেলিও কম হচ্ছে না। সামনে থেকে পেছনে পেছন থেকে সামনে ধাক্কাধাক্কি সামলে লাইনে থাকার যুদ্ধটাতেও জিততে হবে।
দিনের তাপমাত্রার উত্তাপ কিন্তু বাড়ছে। কিন্তু লাইন ছাড়া যাবে না! এই পণ মাথায় নিয়ে পত্রিকা দিয়ে একটু ছায়া দিয়েই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
ক্লান্ত হয়ে পড়া লাইন যেন। মাথায় পত্রিকা বিছিয়ে দিয়েছেন সেই ক্লান্ত লাইনের একজন। পরণের গেঞ্জিটা উপরে তুলেছেন একটু যদি হাওয়া লাগে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৪ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৬
এসএ/এসএইচ
** মিরপুরে ক্রিকেটপ্রেমীদের অন্যরকম সকাল