ঢাকা : বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও রবি আজিয়াটা লিমিটেড যৌথভাবে আয়োজন করে ‘রবি ফাস্ট বোলার হান্ট’। ১৭ জানুয়ারি থেকে ১৬ ফেব্রুয়ারি এই এক মাস সময়ে দেশের ১৬টি ভেন্যু থেকে বাছাই করে ঢাকায় আনা হয়েছে ৫১ জন ছেলে, ৩ জন মেয়ে ও ২ জন প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারকে।
ফাস্ট বোলার হান্টে প্রথমে অবশ্য প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের জন্য বাছাই প্রক্রিয়ার ব্যবস্থা ছিলো না। তাদের আগ্রহের কারণে পরে আলাদা ক্যাটাগরি করা হয়। রংপুরে তিন শারীরিক প্রতিবন্ধী বোলার উত্তীর্ণ হন প্রাথমিক বাছাইয়ে। যাদেরকে ন্যাশনাল ডিজঅ্যাবলড ক্রিকেট টিমের জন্য প্রস্তুত করা হবে।
এই তিনজনের একজন নীলফামারীর মোহাম্মদ গোলাম রব্বানী। রংপুরে ট্রায়াল দিতে এসে ঘন্টায় ৯৫ কিলোমিটার বেগে বল ছুড়ে টিকে যান বাছাইয়ে। জন্মগতভাবেই বাঁ-হাতের কব্জি অনেকটাই বাঁকা ২৩ বছর বয়সী এ তরুণের। শারীরিকভাবে সুস্থ-সবল ক্রিকেটারদের সাথে খেলেই বোলিংটা রপ্ত করেন গোলাম রব্বানী।
ক্রিকেটের প্রতি এত আগ্রহ, পাগলামি দেখে অনেকেই রব্বানীর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকাতেন। উৎসাহ দেয়া দূরে থাক; নিরুৎসাহিত-ই হতে হতো সবসময়। তারপরও দমে যাননি রব্বানী। মানুষের নেতিবাচক মন্তব্যকে আমলে না নিয়ে মনের জোর আর আত্মবিশ্বাস ধরে পথ পাড়ি দিয়েছেন। নিজের প্রতি সুদৃঢ় বিশ্বাস তাকে নিয়ে এসেছে দারুন এক প্ল্যাটফর্মে।
ফাস্ট বোলার হান্টে প্রাথমিক বাছাইয়ে টেকা সকল ক্রিকেটারের ঠিকানা এখন শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠ। এখানেই ঠিকানা হয়েছে রব্বানীরও। তাদের ক্যাম্প চলবে ১৩ মার্চ পর্যন্ত। জিম সুবিধার সঙ্গে থাকছে উন্নতমানের প্রশিক্ষণ।
স্বপ্ন পূরনের প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে বাংলানিউজকে জানালেন তার স্বপ্নের কথা, ‘আমার ভবিষ্যৎ চিন্তা-ভাবনা হচ্ছে আমাদের যে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টিমটা আছে ওটাকে অনেক দূর এগিয়ে নেয়া। যদি সুযোগ পাই তবে আমি সাধ্যমতো চেষ্টা করবো। আমার একটা উইকেটের জন্য যদি বাংলাদেশ ম্যাচ জিততে পারে তাহলে আমার চেয়ে সুখী কেউ এ পৃথিবীতে হবে না। ’
ফাস্ট বোলার হান্টে আসার পেছনে নীলফামারী জেলার কোচের সহযোগিতার কথা উল্ল্যেখ করে রব্বানী বলেন, ‘নীলফামারী জেলার কোচ মেহেদি ভাই আমাকে বললো তুই প্র্যাকটিস কর। তোদের জন্য নতুন টিম তৈরী করা হয়েছে। তখন অনুপ্রেরণা পেলাম, আমি যদি ভালোভাবে প্র্যাকটিস করি..। আমি প্র্যাকটিসে যেতাম। তো মেহেদি ভাই রংপুরের রবি ফাস্ট বোলার হান্টে আমাকে নিয়ে গেল। ঘন্টায় ৯৫ কিলোমিটার গতিতে বোলিং করলাম। ওখান থেকে নির্বাচিত হলাম। তারপর এখানে আসলাম। ’
মোহাম্মদ রব্বানী সরলভাবে বলে গেলেও কতটা কঠিন ছিল এ পথটা তা বোঝা গেল পরক্ষণেই, ‘আমি ক্রিকেট খেলি এটা দেখে বিভিন্ন জন বিভিন্ন মতামত দিত। বলতো, তুই কেন প্র্যাকটিসে যাবি। তোকে দ্বারা হবে না-এরকম। তবে আমার মনে আত্ববিশ্বাস ছিলো, আমি পারবো। ’
কঠিন এক পথ পাড়ি দিয়ে ডিজ্যাবল ক্রিকেট দলে ঢোকার পথে রব্বনী। সীমাবদ্ধতাকে পেছনে পেলে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন দেখছেন এ তরুণ। শারীরিকভাবে যারা অক্ষম তাদেরকে দারুণ এক বার্তা দিয়ে গেলেন আত্মবিশ্বাসী এই তরুণ, ‘আমাদের মতো যারা আছে তাদেরকে বলবো, মানুষের নেতিবাচক কথায় যেন মন ভেঙ্গে না যায়। আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আমি এখন পারছি, তারাও পারবে-এই আত্মবিশ্বাস যেন থাকে। আত্মবিশ্বাসটাই আসল। তাহলে অনেক দূর যাওয়া যায়। ’
ফাস্ট বোলার হান্টের আয়োজক রবি ও বিসিবিকে ধন্যবাদ জানাতে ভুল করেননি রব্বানি। বিদায় বেলায় তিনি জানান, ‘বিসিবি ও রবি এত বড় একটা উদ্যোগ নিয়েছে তাই আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানাই তাদের। তারা যেন অনেক দিন ধরে কাজটা করতে পারে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
এসকে/আরএম