ঢাকা: বাংলাদেশের বর্তমান সময়ের ‘গতিদানব’ তাসকিন আহমেদ ও ঘূর্ণি জাদুকর আরাফাত সানির বোলিং অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করায় ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির তুমুল সমালোচনা চলছে ফেসবুকে। দীর্ঘ ১২ মাস ধরে খেলে আসা এই দুই বোলারের বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মতো গুরুত্বপূর্ণ আসরের ঠিক শুরুতেই কেন এমন সন্দেহ প্রকাশ করা হলো সে নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করছেন তারা।
আনুষ্ঠানিকভাবে আইসিসির পক্ষ থেকে এ সন্দেহ প্রকাশের পর ক্ষোভ প্রকাশ করেন জাতীয় দলের কোচ চন্ডিকা হাতুরেসিংহে। বিশ্বকাপের বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলতে বাংলাদেশ দল এখন ভারতের হিমাচলের ধর্মশালায় রয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) সেখানে সংবাদ সম্মেলন করে হাতুরেসিংহে বলেন, আমার দুই বোলার গত ১২ মাস ধরে খেলছে। আইসিসি এতোদিন কিছু দেখল না? এখন কেন? নাকি শুধু এই ম্যাচেই তারা অন্যভাবে বল করেছে? আইসিসি তাদের বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন তুললে, আমিও আইসিসির অ্যাকশন (কর্মকাণ্ড) নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারি।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্রিকেটপাগল ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। দুর্দান্ত ছন্দে থাকা তাসকিন ও সানির অ্যাকশন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশে আইসিসিকে সমালোচনার শূলে চড়িয়ে তারা বলছেন,এই বোলাররা খেলছেন অনেক দিন ধরে। আইসিসির বিশেষজ্ঞরা তখন কিছু দেখলেন না। সম্প্রতি এশিয়া কাপও খেললেন বোলার দু’জন, তখনও তারা কিছু দেখলেন না। এখন বিশ্বকাপের ঠিক আগে কেন এমন প্রশ্ন তুলছেন?
অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী এজন্য ক্রিকেটের একটি ‘মোড়ল’ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলছেন। তারা তাসকিনের সঙ্গে ভারতীয় বোলার জাসপ্রিত বুমরা ও সানির সঙ্গে ভারতীয় বোলার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের বোলিং অ্যাকশনের স্থির চিত্র তুলনা করে আইসিসির কাছে ব্যাখ্যা দাবি করেন।
তাসকিন ও বুমরার বোলিং অ্যাকশনের মুহূর্তের দু’টি ছবি পাশাপাশি রেখে সেখানে হাতের কনুই ভাঙার জায়গাটি চিহ্নিত করে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা আইসিসির দৃষ্টি আকর্ষণও করেন। এমনকি অনেকে বুমরার অ্যাকশনই সন্দেহজনক বলে সরাসরি অভিযোগ তুলছেন।
আইসিসির এই সন্দেহ প্রকাশকে ‘বিনোদনমূলক’ আখ্যা দিয়ে নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী তার ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘বিনোদিত করার জন্য আইসিসিকে ধন্যবাদ। (তালি হবে, মৃদু)। ’
সাংবাদিক রাজীব হাসান বলেন, ‘তাসকিনের অ্যাকশন 'সন্দেহজনক' হইলে ইন্ডিয়ান পেসার বুমরার অ্যাকশন তো 'সন্দেহদাদা'। (দাদা= জনকের জনক)’
গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘সাবাস তাসকিন! সত্যিকারের ভীতিটা তৈরি করতে পেরেছো বলে! ওরা এতোটাই ভয় পেয়েছে যে- যেকোনো মূল্যে তোমাকে মাঠের বাইরে রাখতে চায়। আইসিসি’র বাংলাদেশের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। ’
প্রচ্ছদশিল্পী চারু পিন্টু বলেন, ‘গুড। আইসিসি যদি আমাদের প্লেয়ারকে বাদ দিতে পারে তবে আইসিসিকে কেন বাদ দেবো না!’
লেখক কাসাফাদ্দৌজা নোমান বলেন, ‘তাসকিনের বোলিং অ্যাকশন সন্দেহজনক! -আইসিসি// আইসিসির সাথে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অবৈধ সম্পর্কের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। -জনৈক ক্রিকেটপ্রেমী। ’
ক্ষোভ প্রকাশ করে মডেল-অভিনেত্রী আলিশা আশরীন বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ব্যাকআপ ইনশাল্লাহ শক্তিশালী আছে। আবু হায়দার রনিকে দিয়ে আর অপরদিকে সাকিব, নাসির আর মাহমুদুল্লাহ দলের হাল ধরলেই কাজ সহজ হবে’।
ভয়ানক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ফেসবুক ব্যবহারকারী হোসেন আরমান বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রিকেটকে ধ্বংস করার পাঁয়তারা করছে আইসিসি নামক ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। বোলিং অ্যাকশন শুধুই কি ইন্ডিয়া বাদে অন্য সব টিমের বোলারদের জন্য? নাকি এটাও আইসিসির নীতি যে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ বা বাংলাদেশের কোনো বোলার ভালো বল করলেই তার বিরুদ্ধে অ্যাকশনের অভিযোগ বাধ্যতামূলক? বোলিং অ্যাকশন যদি অবৈধ হয়ে থাকে তাহলে তা একমাত্র অশ্বিনের হওয়া উচিত। ’
আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী নীলুফা আক্তার বলেন, ‘আইসিসির কেন এমন সিদ্ধান্ত! তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এটি আমার কাছে চক্রান্ত মনে হচ্ছে। এতো দিন কিছু হলো না, আর বিশ্বকাপ শুরু হলো- সঙ্গে সঙ্গেই এমন অভিযোগ! যদি করতেই হয় তাহলে অশ্বিনকে করেন, বুমরাকে করেন না কেন?’
রাশেদুল ইসলাম বাবর বলেন, ‘ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে ফেলেছে। আর মুখ বন্ধ রাখতে পারলাম না। যখনই কোনো বোলার ভারতের জন্যে অাতঙ্ক হয়, তখনই তারা তাকে বাদ দিতে উঠে পড়ে লাগে। যেমনটা ঘটেছিল সাঈদ অাজমল ও সুনীল নারিনের ক্ষেত্রে। ’
এখন টাইগার ক্রিকেটের বিস্ময়বালক মুস্তাফিজুর রহমানের বিরুদ্ধেও এই অভিযোগ আইসিসি করে কিনা- আতঙ্কে সেই সন্দেহও প্রকাশ করেন রাশেদুল ইসলাম বাবর।
ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন বিস্ময়কর পদক্ষেপে বাবরের মতো অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ‘আইসিসি এবার তামিম-সাব্বিরদের ব্যাটিং অ্যাকশন অবৈধ বলে শঙ্কা প্রকাশ করতে পারে’ বলেও উপহাস করেন।
তবে, কিছু ক্রীড়া বিশ্লেষক ফেসবুক ব্যবহারকারী এটাকে ‘মোড়ল’ কারও ‘মাইন্ড গেম’ হিসেবেই দেখছেন। তারা বলছেন, এমন সন্দেহ প্রকাশ করে একটি দলের মনোভাবে দুর্বলতা আনা যায়। আগে ক্রিকেটাররা প্রতিপক্ষের মনোসংযোগে ব্যাঘাত ঘটাতে যে স্লেজিং করতেন, এখন সেটা ‘সাংগঠনিক’ রূপ পেয়েছে এই ধরনের ‘সন্দেহ প্রকাশ’র নামে।
বাংলাদেশ সময়: ২২২৩ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬/আপডেট ০০৪৫ ঘণ্টা
আইএ/এইচএ/