গেল ৩ নভেম্বর সিলেটে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা সফরকারী দলটির প্রথম ইনিংসে ২৮২ রানের জবাবে স্বাগতিক টাইগার শিবির অলআউট হয়েছিল মাত্র ১৪৩ রানে। ডাকসাইটে টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের অপরিনামদর্শী ব্যাটিংয়ের ডামাডোলে ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার প্রতিযোগিতা দেখে তখন একটি শঙ্কাই উঁকি দিচ্ছিলো, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের মতো এই ম্যাচেও সাদা পোষাকে পুরোনো দিন ফিরবে না তো!
সেই পুরোনো দিন আসলে কি? যেদিনগুলোতে ৫ দিন মাঠে থাকা হতো না লাল-সবুজের দলের।
কেননা দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে তৃতীয় দিনে জিম্বাবুয়ে ১৮১ রানে অলআউট হলে জয়ের জন্য বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩২১ রান। হাতে ছিলো ১০ উইকেট ও দুই দিনেরও বেশি সময়। যদিও ম্যাচটি জিততে বাংলাদেশকে রেকর্ড করতে হতো। কেননা দ্বিতীয় ইনিংসে দলটি কখনোই এত রান তাড়া করে জেতেনি।
টেস্ট ক্রিকেটের ১৮ বছরের ইতিহাসে আজ অব্দি রান তাড়া করে পাওয়া বাংলাদেশের তিন জয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২০০৯ সালে। সে ম্যাচে ২১৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। গত বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিজেদের শততম টেস্টে জয়টি এসেছিল ১৯২ রান তাড়া করে। আর ঘরের মাঠে রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড কেবল একটিই। এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০১৪ সালে, ১০১ রান তাড়া করে জিতেছিল টাইগাররা।
কাজেই শঙ্কা থাকাটা অমূলক কিছু ছিলো না। অবশেষে সেই শঙ্কাই বাস্তবে পরিণত হলো। প্রায় দেড় দিন বাকি থাকতে ১৬৯ রানে গুটিয়ে গেল ওয়ানডে ফরম্যাটে এশিয়ার উঠতি পরাশক্তি এই দলটি। আর এর কারণ হিসেবে ব্যাটসম্যানদেরই দায়ী করলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক সময়ের পেস সেনসেশন হাসিবুল হোসেন শান্ত।
‘ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ যে ধরনের ক্রিকেট খেলে আসছে তাতে একটা টেস্ট দেখে মূল্যায়ন করাটা ঠিক হবে না। টিম অনুযায়ী বাংলাদেশের আরও ভালো খেলা উচিত ছিলো। আমার মনে হয় আমাদের ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্ব নিয়ে খেলা উচিত ছিলো। সেই জায়গায় ওইভাবে ক্লিক করেনি। ’
বাংলাদেশের দুই ইনিংসে টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা ব্যাটিংয়ের দৈন্যদশা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান এসেছে লোয়ার মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আরিফুল হকের (৪১) ব্যাট থেকে। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেছেন মুশফিকুর রহিম। আর বাকি প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যানের রান যথাক্রমে- ৯, ৫, ১১, ৫, ০।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওপেনিং জুটিতে ৫৬ রান যোগ করেন দুই ওপেনার লিটন দাস ও ইমরুল কায়েস। কিন্তু কেউই নিজেদের ইনিংস বড় করতে পারেননি। লিটন আউট হন ২৩ রানে আর ইমরুল ফেরেন ৪৩ রানে। তিনে নামা মুমিনুল (৯) এই ইনিংসেও ব্যর্থ। কিন্তু যে দু'জনের ব্যাটে ভরসা খুঁজছিল বাংলাদেশ, সেই মুশফিক (১২) ও মাহমুদউল্লাহ (১৬) ফের ব্যর্থ। শেষদিকে রানের দেখা পেয়েছেন শুধু আরিফুল (৩৮)।
প্রশ্ন উঠেছে ম্যাচটিতে এক পেসার খেলানোর যৌক্তিকতা নিয়েও। আবু যায়েদ রাহি ছাড়া স্পেশালিস্ট পেসার কেউই ছিলেন না। শান্তও বললেন বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট এখানে অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন।
‘দু'জন পেসার হলে ভাল হতো। প্রতিটি টেস্টেই দু'জন পেস বোলার ও একজন স্ট্রাইক বোলার খুবই দরকার। ’
বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট কিউরেটর সঞ্জিব আগারওয়ালকে হয়তো স্পিন ট্র্যাকের নির্দেশ দিয়েছেন। তাই রুবেল হোসেন কিংবা মোস্তাফিজুর রহমানের মতো পেসারদের উপেক্ষা করে দুই তরুণ পেসার আবু যয়েদ রাহি ও আরিফুল হকের ওপর দল নির্ভর করেছে। দুঃখজনক হলেও সত্য নিজেদের পাতা এই জালে নিজেরাই ফেঁসেছে লাল-সবুজের টিম ম্যানেজমেন্ট। কেননা দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ১০ উইকেটের ৯টিই নিয়েছেন স্পিনাররা। ব্রেন্ডন মাভুতা ৪টি, সিকান্দার রাজা ৩টি ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ২টি উইকেট নিয়েছেন।
সাফল্য পেয়েছেন বাংলাদেশের স্পিনারাও। দুই ইনিংসে জিম্বাবুয়ের ২০ উইকেটের মধ্যে বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম একাই পেয়েছেন ১১টি উইকেট, নাজমুল ইসলাম অপু ৪টি ও মেহেদি মিরাজ ৩টি। বাকি ২টি আবু যায়েদ রাহি ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। কিন্তু তাতে লাভের খাতা দিন শেষে তাদের শূন্যই থেকে গেছে। নির্মম হারে দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্টে ১-০ তে পিছিয়ে গেছে স্বাগতিক শিবির।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৬, ২০১৮
এইচএল/এমএইচএম