শুক্রবার (১৬ নভেম্বর) রাজধানীর মিরপুরের সিটি ক্লাব মাঠে আয়োজিত অ্যামেচার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল ম্যাচ চলাকালে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে একথা জানালেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন।
টাইগার পেসার রুবেল হোসেন দীর্ঘ দিন থেকেই জাতীয় দলের নিয়মিত পারফর্মার।
‘রুবেল খেলার জন্য ফিট। কিন্তু আমরা আসলে চেষ্টা করছি কিছু খেলোয়াড়কে আলাদা করে ফেলার, যাদেরকে আমরা শুধু টেস্টে চিন্তা করব, কাউকে হয়তো শুধু ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টিতে বিবেচনা করব। আসলে তাদের উপর চাপটা কমাতে চাইছি। খেলোয়াড়রাও তেমনটাই চাইছেন। ভবিষ্যতে হয়তো আমরা এটা করে ফেলব। '
রুবেলের টেস্ট পারফরম্যান্স নিয়ে খুব একটা খুশি নন নির্বাচকরা, এমনটাই জানালেন বাশার। ‘রুবেল অবশ্যই ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে খুব ভালো বল করে। তবে তার টেস্ট পারফরম্যান্স নিয়ে আমরা খুব একটা খুশি নই। এজন্যই খালেদের মতো নতুনদের দিয়ে চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে খেলবে না তা নয়, তবে এই মুহূর্তে না। '
তার মানে কি টেস্টের জন্য আলাদা দল গঠন করতে চলেছে বিসিবি। তার কথায় সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। ‘আমাদের ভবিষ্যত পরিকল্পনা আসলে সেটাই। কারণ সামনে আমাদের প্রচুর খেলা আছে। একজন খেলোয়াড় সব ফরম্যাটের চাপটা নিতে পারবেন কি না সেটা ভাবতে হবে। '
এদিকে আসন্ন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের জন্য এখনও স্কোয়াড ঘোষণা করেননি নির্বাচকরা। এবার কি তাহলে দলে কোনো পরিবর্তন আনার চিন্তা আছে? এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাবিবুল বাশার বলেন, ‘খুব বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচ আছে। সেখানে কিছু খেলোয়াড়কে আমরা দেখতে চাই। এজন্য স্কোয়াড দিতে আমরা একটু বিলম্ব করছি। আজ-কালের মধ্যে হয়তো দেওয়া হবে। এমনও হতে পারে স্কোয়াড হয়তো ১১ কিংবা ১২ জন দিলাম। বাকিদের হয়তো প্রথম প্র্যাকটিস ম্যাচে দেখার পর নিতে পারি। '
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে চারজন নতুন খেলোয়াড়ের অভিষেক হয়েছে। এই চারজন হলেন- আরিফুল হক, নাজমুল ইসলাম অপু, খালেদ আহমেদ ও মোহাম্মদ মিঠুন। পরবর্তী টেস্ট সিরিজেও তাদের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনার কথাই জানালেন এই নির্বাচক।
‘আসলে এটা কন্ডিশনের উপর নির্ভর করে। চট্টগ্রামের কন্ডিশনের উপর নির্ভর করেই দল বাছাই করা হবে। তবে খুব বেশি পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা কম। আসলে সাকিব-তামিম অনেক বড় ইস্যু। তাদের খেলা- না খেলার উপর অনেক কিছু নির্ভর করে। '
তাদের চারজনের পারফরম্যান্স নিয়ে তার মূল্যায়ন, ‘এটা নিয়ে এখনই সিদ্ধান্তে আসা একটু জলদি হয়ে যায়। তাদের প্রায় সবাই ওয়ানডে খেলেছে। কেউই একেবারে নতুন নয়। মিঠুন অনেকদিন ধরেই খেলছে। শেষ টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে খুব দারুণ একটা ইনিংস খেলেছে। খালেদ উইকেট না পেলেও বেশ ভালোই করেছে। সবমিলিয়ে তাদের ভবিষ্যত ভালো বলেই মনে হচ্ছে। '
এদিকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে নিয়মিত ভালো খেললেও টেস্টে খুব একটা ভালো কাটছে না লিটন দাসের। বিশেষ করে টপ অর্ডারে তার পারফরম্যান্স হতাশাজনক। এটা নিয়ে চিন্তিত নির্বাচকরাও।
‘ওর টপ অর্ডারে পারফরম্যান্স নিয়ে আমরাও চিন্তিত। দুটি টেস্টেই টপ অর্ডারে সে খুব একটা ভালো করতে পারেনি। তবে চারটা ইনিংস দেখেই সিদ্ধান্তে আসাটা মুশকিল। ওর প্রথম শ্রেণির পারফরম্যান্স কিন্তু দারুণ। ডাবল সেঞ্চুরিও আছে। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ভালো খেলছে। ওই যে বললাম, আমাদের হাতে অপশন আছে। কাউকে হয়তো আলাদা করে টেস্টের জন্য বাছাই করা হবে। '
সৌম্য সরকার ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়মিত পারফর্ম করছেন। ওয়ানডে দলে ফিরেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করে ম্যাচ জিতিয়েছেন। তবু টেস্ট দলে জায়গা হয়নি তার। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের দলে রাখা হয়েছে তাকে। তার মানে কি তাকে টেস্টের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে? সুমন অবশ্য এখনই নিশ্চিত করছেন না।
‘এখনই বলা যাচ্ছে না। অবশ্যই যে যোগ্য প্রার্থী। আমরা আসলে প্র্যাকটিস ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাচ্ছি। সেখান থেকেই আসলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারি। '
এদিকে জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয়েছেন নাজমুল ইসলাম অপু। সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিলেট টেস্টে ব্যাট হাতে দুই ইনিংসে করেছেন মাত্র ৫ ও ১৩ রান। এর আগে জাতীয় দলের হয়ে এশিয়া কাপের তিন ইনিংসে করেছেন যথাক্রমে- ৭, ৭, ৬। তার এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স সত্ত্বেও তাকে নিয়ে আশার কথাই শোনালেন হাবিবুল বাশার।
‘শান্তকে নিয়ে আমরা খুবই আশাবাদী। দুর্ভাগ্যবশত ওর শুরুটা ভালো হয়নি। অনেক আন্তর্জাতিক খেলোয়াড় আছেন যাদের শুরুটা ভালো হয়নি, কিন্তু পরবর্তীতে কিন্তু তারা ভালো করেছেন। ওর বয়স অনেক কম। কেবলই শুরু করেছে। দলে সুযোগ না পেলেও ও আমাদের রাডারে থাকবে। ও যদি ঘরোয়া ক্রিকেটে ভালো খেলে নিজেকে প্রমাণ করতে পারে তাহলে আবার ফিরে আসবে। '
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠেয় প্রথম টেস্ট ম্যাচের আগে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে ১৮ নভেম্বর বিসিবি একাদশের বিপক্ষে দুই দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ৩০ নভেম্বর থেকে মিরপুরের শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে গড়াবে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট মাচ।
মিরপুরেই ডিসেম্বরের ৯ তারিখ থেকে শুরু হবে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। সিরিজের বাকি দুই ম্যাচ যথাক্রমে মিরপুর ও সিলেটে আয়োজিত হবে ১১ ও ১৪ ডিসেম্বর।
এরপর ১৭ ডিসেম্বর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ গড়াবে সিলেটে। আর বাকি দুই ম্যাচ মিরপুরে অনুষ্ঠিত হবে ডিসেম্বরের ২০ ও ২২ তারিখে।
বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৮
এমএইচএম