বুধবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাদ যোহর মরহুমের প্রথম নামাজে জানাজা হবে নাজিম উদ্দিন রোডের হোসনি দালান মসজিদে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে দ্বিতীয় নামাজে জানাজা বিকেল সাড়ে তিনটায়।
আলতাফ হোসেনের জন্ম অবিভক্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। কিন্তু ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় দুই ভাইকে হারানোর পর মাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকায় চলে আসেন। এরপর একসময় এদেশে ক্রিকেটের মহীরুহ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন তিনি।
বাংলাদেশে ক্রিকেট কোচিংয়ের অগ্রদূত ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার প্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আলতাফ হোসেন ছিলেন পাকিস্তান টেস্ট দলে ডাক পাওয়া প্রথম বাঙালি ক্রিকেটার। ডানহাতি মিডিয়াম পেসার হিসেবে তখন তার খ্যাতি ছিল দেশজুড়ে। ওই দলের অধিনায়ক ছিলেন পাকিস্তানের কিংবদন্তি ক্রিকেটার হানিফ মোহাম্মদ। স্কোয়াডে ডাক পেলেও অবশ্য সেসময় টেস্ট খেলা হয়নি আলতাফ হোসেনের। তবে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে তখন বৈষম্যের মাঝেও তাকে ডাকতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানের ক্রিকেট বোর্ড।
খেলোয়াড়ি জীবনে ঢাকার ক্রিকেটের অন্যতম বড় তারকা ছিলেন আলতাফ হোসেন। খেলেছেন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স, পিডব্লুডি, ইস্ট পাকিস্তান জিমখানা ও শান্তিনগরের মতো ক্লাবে। এছাড়া পঞ্চাশেরে দশক থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে পূর্ব পাকিস্তান ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন। পাকিস্তানের ঘরোয়া ক্রিকেটের বড় দুই আসর- কায়েদে আজম ট্রফি ও আইয়ুব ট্রফিতেও খেলেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে আলতাফ হোসেনের অবদান অনস্বীকার্য। তার হাত ধরে বহু ক্রিকেটার গড়ে উঠেছিলেন। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে কিছুদিন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের আম্পায়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও একসময় জড়িয়ে পড়েন কোচিংয়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে ২৫ বছর কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। কোচিংকে তিনি দিয়েছিলেন ভিন্ন মাত্রা। আর এর প্রস্তুতি হিসেবে ভারতের পাতিয়ালায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্পোর্টস থেকে কোচিং কোর্স করেন তিনি। এছাড়া ইংল্যান্ড থেকেও কোচিং কোর্স করে এসেছেন।
২০০১ সালে পর্যন্ত জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কোচের দায়িত্বে থাকার পাশাপাশি আশির দশকে জাতীয় দলেরও কোচিং করিয়েছেন আলতাফ হোসেন। তার হাত ধরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে হাঁটতে শুরু করে বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে শ্রীলঙ্কায় আর ১৯৯০ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে তার কোচিংয়ে অংশ নেয় বাংলাদেশ।
আরেকটা তথ্য হয়তো অনেকেই জানেন না, আলতাফ হোসেনের হাত ধরেই বাংলাদেশে নারী ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ১৯৯৭ সালে নারী দলের কোচ হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। ২০০৬ সাল পর্যন্ত সেই দায়িত্বে থেকে নারী ক্রিকেট দলকে গড়ে তুলতে বড় ভূমিকা রাখেন।
সফল কর্ম জীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হন আলতাফ হোসেন। দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার (১৯৯৯ সালে) পাওয়া প্রথম কোচ তিনি।
সৈয়দ আলতাফ হোসেনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করে আজ ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টের ম্যাচগুলোর আগে এক মিনিট করে নীরবতা পালন করা হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৯
এমএইচএম