মূলত ১৯৭৫ সাল থেকে শুরু হওয়া আসরটির সর্বশেষ ১১ সংস্করণের ক্রিকেটাররা জায়গা পেয়েছেন নির্বাচনটিতে। জরিপে অংশ নিয়েছেন ক্রিকইনফোর ২২ জন বিশেষজ্ঞ।
একমাত্র পাকিস্থানি পেসার ওয়াসিম আকরাম ছিলেন সবার পছন্দের তালিকায়। বাকি দশ ক্রিকেটার জায়গা পেয়েছেন ভোটের ভিত্তিতে। তালিকায় স্থান হয়নি সময়ের অন্যতম সেরা তারকা বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্সদের মতো ক্রিকেটারদের। গত আসরে ভারতকে দ্বিতীয় শিরোপা এনে দেওয়া মহেন্দ্র সিং ধোনিও নেই তালিকায়।
ওপেনিংয়ে আছেন অস্ট্রেলিয়ান হার্ডহিটার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ও বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক শচীন টেন্ডুলকার। ‘গিলি’ ছাড়াও ব্যাটসম্যান-উইকেটরক্ষক হিসেবে মিডলঅর্ডারে জায়গা পেয়েছেন কুমার সাঙ্গাকারা। ২০১৫ বিশ্বকাপে চার সেঞ্চুরি করা লঙ্কান তারকাকে অবশ্য লড়তে হয়েছে স্বদেশী সনাৎ জয়াসুরিয়া এবং স্টিভ ওয়াহ, কপিল দেব ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো হেভিওয়েট ক্রিকেটারের সঙ্গে।
চার ব্যাটসম্যান, দুই অলরাউন্ডার, দুই পেসার ও দুই স্পিনার নিয়ে গঠিত তালিকাটিতে সর্বোচ্চ চার অজি ক্রিকেটার রয়েছেন। পাকিস্থান ও শ্রীলঙ্কা থেকে আছেন দু’জন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের একজন করে। অধিনায়কের আর্মব্যান্ড উঠেছে ১৯৯২ সালে পাকিস্থানকে প্রথম ও একমাত্র বিশ্বকাপ এনে দেওয়া ক্রিকেটার ও পাকিস্তানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বাহুতে।
নিচে তালিকায় থাকা ক্রিকেটারদের সংক্ষিপ্ত বিশ্বকাপ পরিসংখ্যান দেওয়া হলো:
অ্যাডাম গিলক্রিস্ট (উইকেটরক্ষক)
তিনটি বিশ্বকাপ খেলা গিলক্রিস্ট ৩১ ম্যাচে করেছেন ১০৮৫ রান। ৯৮.০১ স্ট্রাইক রেটে তার গড় ৩৬.১৬। ডিসমিসাল ৫২টি। ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গিলির ১৪৯ রানের ঝড়ে শিরোপা উৎসব করেছিল অজিরা। তবে গ্লাভসে ‘স্কোয়াশ’ বল নিয়ে ব্যাট করায় সেবার বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন তিনি।
শচীন টেন্ডুলকার
‘ক্রিকেট ঈশ্বর’ হিসেবে দুনিয়াজোড়া খ্যাতি তার। সম্প্রতি ৪৬ বছরে পা রেখেছেন ‘লিটল মাস্টার’ খ্যাত শচীন টেন্ডুলকার। ১৯৯৬ ও ২০০৩ বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক ছিলেন তিনি। ২০১১ বিশ্বকাপেও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রহ করে ভারতকে দ্বিতীয় শিরোপা জেতাতে সাহায্য করেছেন। রেকর্ড ৬টি বিশ্বকাপ খেলা শচীন ৪৫ ম্যাচে ৪৫.৯৫ গড়ে করেছেন ২২৭৮ রান। স্ট্রাইক রেট ৮৮.৯৮। ১৫ অর্ধশতকের পাশাপাশি হাঁকিয়েছেন ৬টি শতক।
রিকি পন্টিং
অস্ট্রেলিয়া যে বিশ্বকাপে টানা ৩৪ ম্যাচ অপরাজিত থাকার রেকর্ড গড়েছিল তার অর্ধেক অবদান পন্টিংয়ের। অজিদের ইতিহাস গড়া হ্যাটট্রিক শিরোপার দু’টি এসেছে তার নেতৃত্বে। কেবল তা নয়, ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে একাই ১৪০ রান করে শিরোপা জেতান তিনি। ৪৬ ম্যাচে ৪৫.৮৬ গড় ও ৭৯.৯৫ স্ট্রাইকরেটে তার রান ১৭৪৩। বিশ্বকাপে ৫টি শতক ও ৬টি অর্ধশতক আছে তার। এছাড়া আউটফিল্ডার হিসেবেও বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ক্যাচ নিয়েছেন পন্টিং।
ভিভ রিচার্ডস
সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার মানা হয় তাকে। ব্যাটিংয়ের ব্যাকরণটাই পাল্টে দিয়েছেন বোলারদের তুলোধুনো করা ভিভ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দু’বার বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। ২০১৫ সালে জুরিদের নির্বাচনে ‘সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার’ নির্বাচিত হওয়া ভিভ বিশ্বকাপে ২৩ ম্যাচে ৩ শতক ও ৫টি অর্ধশতক হাকিয়ে করেছেন ১০১৩ রান। ৬৩.৩১ গড়ের পাশাপাশি তার স্ট্রাইকরেট ৮৫.০৫। অসাধারণ ফিল্ডার হিসেবেও খ্যাতি আছে ভিভের।
কুমার সাঙ্গাকারা
২০১৫ বিশ্বকাপে চারটি সেঞ্চুরির ইতিহাস গড়েন সাঙ্গাকারা বিবেচিত হন আধুনিক ক্রিকেটের মানসপুত্র হিসেবে। বিশ্বকাপের এক আসরে ৫০০ রানের মাইলফলক ছোঁয়া চতুর্থ ক্রিকেটার তিনি। এই লঙ্কান উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান ৩৭ ম্যাচে ৫ শতক ও ৭ অর্ধশতকে করেছেন ১৫৩২ রান। গড় ৫৬.৭৪ ও স্ট্রাইকরেট ৮৬.৫৫।
ইমরান খান (অধিনায়ক)
পাকিস্থানের প্রধানমন্ত্রীর মতো সেরা একাদশেরও প্রধান ইমরান খান। ১৯৯২ বিশ্বকাপে ‘আন্ডারডগ’ দলকে নিয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন তিনি। অলরাউন্ডার খান ২৮ ম্যাচে ৩৫.০৫ গড়ে করেছেন ৬৬৬ রান। বোল হাতে তার শিকার ৩৪ উইকেট।
ল্যান্স ক্লুজনার
১৯৯৯ বিশ্বকাপে অাগুন ঝরানো বল করে টুর্নামেন্টের ‘প্লেয়ার অব দ্য সিরিজ’ হয়েছিলেন ল্যান্স ক্লুজনার। প্রোটিয়া পেসার বিশ্বকাপে খেলেছেন মাত্র ১৪ ম্যাচ। বল হাতে ২২.১৩ গড়ে নিয়েছেন ২২ উইকেট। আর ব্যাট হাতে ১২৪.০০ গড়ে তার সংগ্রহ ৩৭২ রান।
ওয়াসিম আকরাম
‘সুলতান অব সুইং’ নামেই খ্যাত তিনি। প্রজন্মের সেরা বাঁহাতি পেসার ওয়াসিম আকরামের সুইং জাদুতে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জিতে পাকিস্তান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপেও দলকে ফাইনালে তুলেছিলেন তিনি। বিশ্বকাপে ৩৮ ম্যাচ খেলে আকরাম উইকেট নিয়েছেন ৫৫টি। দুইবার ৪ উইকেট নেওয়ার পাশাপাশি একবার শিকার করেছেন ৫ উইকেট। ইকোনমি রেট ৪.০৪।
শেন ওয়ার্ন
সর্বকালের সেরা বলটি বেরিয়েছে শেন ওয়ার্নের হাত থেকে। ‘স্পিন জাদুকর’ খ্যাত এই অজি ডানহাতি লেগস্পিনার বল হাতে ১৭ ম্যাচে ৩.৮৩ ইকোনমি রেট শিকার করেছেন ৩২ উইকেট। ৪ উইকেট নিয়েছেন চারবার। অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৯৬ বিশ্বকাপ জেতাতে না পারলেও ১৯৯৯ বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন ওয়ার্ন।
মুত্তিয়া মুরালিধরণ
মুত্তিয়া ক্যারিয়ারে বিখ্যাত ছিলেন বিচিত্র বোলিংয়ের জন্য। অভিষেক বিশ্বকাপেই (১৯৯৬) শ্রীলঙ্কার হয়ে শিরোপার স্বাদ পান তিনি। ২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপেও লঙ্কানদের তুরুপের তাস ছিলেন মুত্তিয়া। ক্রিকেটের সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৪০ ম্যাচ খেলে ৩.৮৮ ইকোনমি রেটে নিয়েছেন ৬৮ উইকেট। ওয়ার্নের মতো তারও আছে চারবার ৪ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব।
গ্লেন ম্যাকগ্রা
৩৯ ম্যাচে ৭১ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ডটা এখনো অক্ষত রেখেছেন ম্যাকগ্রা। ২০০৭ বিশ্বকাপে একটি হ্যাটট্রিকের পাশাপাশি রেকর্ড ২৬ উইকেট নিয়েছেন এই অজি পেসার। সেবার প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্টর পালকটিও যুক্ত হয় তার মুকুটে। বিশ্বকাপে ম্যাকগ্রার বোলিং ইকোনমি রেট ৩.৯৬। ৫ উইকেট পেয়েছেন দুইবার।
বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৫, ২০১৯
এমএমএস