বিশ্বকাপ জয়টা দলের সঙ্গে থেকে উদযাপন করেছেন পেসার শরিফুল ইসলাম। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের পেসাররা ধারাবাহিক ভাবে ভালো বোলিং করেছে।
বিশ্বকাপ জয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে বাংলানিউজের সঙ্গে কথা বলেছেন শরিফুল ইসলাম। জানিয়েছেন বিশ্বকাপের খুটিনাটি অনেক বিষয়। দেশের এমন সাফল্যের অংশীদার হতে পেরে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন তিনি। তবে এখানেই থেমে না থেকে আরও সামনে এগিয়ে যেতে চান শরিফুল। হতে চান বিশ্বের এক নাম্বার বোলার।
বিশ্বকাপে মূল টার্গেটটা আসলে কী ছিল? এমন প্রশ্নে শরিফুল বলেন, ‘আমাদের টিমটা অন্য টিমগুলো থেকে অনেক ভালো ছিল। আমাদের টার্গেটটাই ছিল আমরা ফাইনাল খেলবো। অনেক গুলো দেশের সঙ্গে আমরা সিরিজ খেলছি সেই তুলনায় তাদের থেকে আমাদের টিমটা ভালো ছিল। সবাই এভারেজে ভালো খেলেছে, ব্যালেন্সড টিম ছিল আমদের। আমদের পুরো আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমরা ফাইনাল খেলবো এবং অধিনায়কও অনেক ভালো ছিল, ওর সিদ্ধান্ত গুলো ভালো ছিল। সব মিলিয়ে আত্মবিশ্বাসের মাত্রাটা বেশি ছিল। ফাইনাল খেলবো এবং জিতবো এমন বিশ্বাস ছিল। ’
মাঠের বাইরে যতই আত্নবিশ্বাস থাকুক মাঠে সেটার প্রয়োগ করাটাই বড় ব্যাপার। মাঠের লড়াইয়ে আত্মবিশ্বাসটা কখন আসলো এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘প্রথম ম্যাচে যখন জিম্বাবুয়েকে হারানোর সময়..টার্গেট ছিল যে আমরা প্রতিটা ম্যাচই ফাইনাল ম্যাচ হিসেবে খেলবো। আর গ্রুপ পর্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচটা আমাদের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যেটা বৃষ্টির কারনে পরিত্যাক্ত হয়েছিল। মূলত ওটাই আমদের টার্নিং পয়েন্ট ছিল, ফাইনালে যাওয়ার জন্য বেশ সুবিধা হয়েছিল আমাদের জন্য। ’
ফাইনালে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতার আনন্দটা অন্যরকম ছিল। এই জুনিয়র টাইগার পেসার জানান মনের সাহস বেশি রেখে লড়াই করার মানসিকতা ছিল বলেই ভারতকে হারানো সম্ভব হয়েছে। শরিফুল বলেন, ‘আমরা ভারতের সঙ্গে খেললে বারবার হারি। আমারা কাছে মনে হয় ভারতের বিপক্ষে ভালো কিছু করলে সবার নজরে আসে। আর ভালো টিমের সঙ্গে ভালো খেললে ভালো লাগে। আপনি দেখেন, জাতীয় দল বলেন আর অনূর্ধ্ব-১৯ দল বলেন, ভারতের বিপক্ষে আমাদের তীরে এসে তরী ডুবে যায়। নিদহাস ট্রফিতে আমরা এক বা দুই রানে হারলাম, ওয়ার্ল্ড কাপে হারলাম, টি-টোয়েন্টিতে হারলাম, অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপে দুইবার হেরেছি, এই জিনিস গুলো খারাপ লাগে। এই ভিডিও গুলো দেখছি তখন প্রতিজ্ঞা করি যে না আর তীরে এসে তরী ডোবাবো না, ম্যাচটা জিতেই বের হবো। ’
তবে বিশ্বকাপ জয়ের পর এখানে থেমে থাকতে চান না শরিফুল। নিজেকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে প্রস্তুত হতে চান। জাতীয় দলের জন্য প্রস্তুত হতে চান। জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে ভালোই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে সেটা শরিফুল ভালোভাবেই জানেন।
তবে চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত শরিফুল। বাংলানিউজকে বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিতেই হবে এবং সেটার জন্য প্রস্তুত আর চ্যালেঞ্জ না নিলে ক্যারিয়ারে ভালো করা সম্ভব না। নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে জাতীয় দলের পেসারদের বিট কররা চেষ্টা করবো, তাদের থেকে ভালো করার চেষ্টা করবো। কারণ আমরা যারা এখন ইয়াং আছি তাদের জন্য জাতীয় দলে ঢোকা সহজ হবে না। যুদ্ধ করে জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে হবে। তাদের (সিনিয়র) কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। ডিপিএলে রুলেল ভাই, মোস্তাফিজ ভাইয়ের সঙ্গে খেলছি। চেষ্টা করছি তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে আধিপত্য দেখানোর। শুধু আধিপত্যের জন্য না নিজের ক্যারিয়ারের জন্য করছি যাতে আরও ভালো জায়গায় খেলতে পারি। ’
সিনিয়র পেসারদের কাছ থেকেও বেশ সহযোগিতা পাচ্ছেন বলে জানান শরিফুল। তিনি বলেন, ‘রুবেল ভাই, মোস্তাফিজ ভাই ভালোই টিপস দিয়েছেন। মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে এখনো কথা হয়নি। তারা বলেছেন যে তুমি ফিটনেস ঠিক রাখো, বোলিং করার সময় ব্যাটসম্যানের মুভমেন্ট দেখে বল করো, অফ স্ট্যাম্পের বাইরে ভালো জায়গায় বল করো। ইয়র্কারটা গুরুত্বপূর্ণ, ইয়র্কার বল করার সময় শরীরটা কিভাবে রাখতে হয় মোটামুটি ভালোই টিপস দিয়েছেন তারা। তারা যেটা করছেন, সেটাই শিখিয়ে দিয়েছেন। ’
ব্যক্তিগত লক্ষ্যের কথা বলতে গিয়ে শরিফুল বলেন, ‘মাত্র তো ক্যারিয়ার শুরু হলো। চেষ্টা থাকবে দেশকে নিজের সেরা দিতে। আর আমার মনের ইচ্ছা যে আমি বিশ্বের এক নাম্বার বোলার হতে চাই। ইনশাআল্লাহ যদি সুযোগ পাই নিজেকে বিশ্বের এক নাম্বার বোলার হিসেবে পরিচিত করতে চাই। আল্লাহ যদি সহায় হোন হতে পারবো। ’
শরিফুলের লক্ষ্যটা কঠিন হলেও অবাস্তব কিছু নয়। তবে এতটুকু বলা যায় যে তার মনের ইচ্ছা শক্তিটাই তাকে অনেক দূর নিয়ে যাবে। মাশরাফি-মোস্তাফিজদের জায়গাটা তো শরিফুলদের জন্যই অপেক্ষা করছে!
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০২০
আরএআর/এমএমএস