বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে নিজ দলের সতীর্থ নাসুম আহমেদকে মেজাজ হারিয়ে মারাতে উদ্যত হওয়ার ঘটনার পর ক্ষমা চেয়েছেন মুশফিকুর রহিম। এরপর নাসুম নিজেও একটি স্ট্যাটাসে জানিয়েছেন, তিনি বড় ভাই এবং অধিনায়ক হিসেবে শাসন করতেই পারেন।
ফেসবুকে নিজের অফিসিয়াল পেজে নাসুম লিখেন, আসসালামু আলাইকুম।
আশাকরি সবাই ভালো আছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। গতকাল ম্যাচের পর থেকে আমাকে আর মুশফিক ভাইকে নিয়ে আপনারা অনেকে যেগুলো লিখছেন এগুলো একদমই কাম্য নয়। টিভি সেটে যা দেখেছেন এগুলো মাঠে হতেই পারে। গতকালকে আমাদের মিস এফোর্টের মাত্রাটা একটু বেশিই ছিল। গতকাল ম্যাচে পার্টিকুলারলি আমি মনে হচ্ছে এফোর্টলেস ছিলাম। মুশফিক ভাই অনেক সিরিয়াস ও ডেডিকেটেড ছিলেন ম্যাচে এবং আমার প্রতি এক্সপেকটেশনটাও বেশি ছিল টিমের। যাই হোক, মাঠের বিষয় আমরা মাঠেই শেষ করে নেই। আর মুশফিক ভাইয়ের সাথে আমার মাঠের বাইরের বোন্ডিংটাও অনেক ভালো। এমনকি এই টুর্নামেন্টে উনি আমাকে ইন্ডিভিজুয়ালি প্রচুর সময় দিয়েছেন কিভাবে ভালো করা যায় এবং দুর্বল দিকগুলা দ্রুত কাটিয়ে উঠা যায় এসব ব্যাপারে। আমাদের মধ্যে কোনো সিরিয়াস কিছু হয়নি। ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে এবং টিম হোটেলে ওনার সাথে অনেকবার কথা হয়ছে। তাছাড়া আমার বড় ভাইয়ের মত। তাই বড় ভাই এবং অধিনায়ক হিসেবে শাসন করতেই পারেন। দয়া করে আমাদের এই ব্যাপারটা নিয়ে আর কিছু লিখবেন না। আজ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ খেলা আছে। সবাই দোয়া করবেন।
জাজাকাল্লাহু খাইরান।
আরও পড়ুন...সতীর্থকে মারতে উদ্যত হওয়ার পর ক্ষমা চাইলেন মুশফিক
এর আগে নিজের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নাসুমের সঙ্গে হাস্যজ্জ্বল একটি ছবি পোস্ট করে মুশফিক ক্যাপশনে নাসুমের পাশাপাশি সমর্থকদের কাছেও ক্ষমা চান।
সবাইকে সালাম জানিয়ে মুশফিক লিখেন, গতকাল ম্যাচ চলাকালীন যে ঘটনাটি ঘটেছে তার জন্য সর্বপ্রথম আমি আমার ভক্ত ও সমর্থকদের কাছে ক্ষমা চাই। আমি ইতোমধ্যে ম্যাচ শেষে আমার সতীর্থ নাসুমের কাছে ক্ষমা চেয়েছি। আমি আমার সৃষ্টিকর্তার কাছেও ক্ষমা চাই। আমি সবসময় নিজেকে সবকিছুর ওপরে মানুষ হিসেবে বিশ্বাস করি এবং আমার দ্বারা যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটি কাম্য ছিল না। ইনশাআল্লাহ আমি নিশ্চিত করে বলছি ভবিষ্যতে মাঠ ও মাঠের বাইরে এমন কিছু হবে না। জাজাকাল্লাহ খায়ের।
এর আগে সোমবার বাঁচা-মরার এলিমিনেটর ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল বেক্সিমকো ঢাকা ও ফরচুন বরিশাল। যেখানে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে তামিম ইকবালদের বরিশালকে ৯ রানে হারিয়ে দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে জায়গা করে নেয় মুশফিকদের ঢাকা। টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় ঘটে বরিশালের।
তবে এ ম্যাচে দ্বিতীয় ইনিংসের ১৭তম ওভারে এক অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছিল মিরপুর স্টেডিয়াম। সেই ওভারের শেষ বলে স্কুপ করতে গিয়ে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন বরিশালের ভরসার প্রতীক আফিফ হোসেন ধ্রুব, কিন্তু ধরা পড়েন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে।
সেসময় ম্যাচ জিততে ১৯ বলে ৪৫ রান প্রয়োজন ফরচুন বরিশালের। বোলার শফিকুল ইসলামের সেই ওভারের আগের পাঁচ বলে ১০ রান উঠেছিল। আফিফকে আউট করার ক্যাচ মুশফিক গ্লাভসবন্দি করলেও ফাইন লেগে দাঁড়ানো নাসুম আহমেদের দিকে আক্রমণাত্মকভাবে তেড়ে যান তিনি, রাগী চোখে নাসুমের মুখে ঘুষি মারার ভঙ্গিমা করেন তিনি।
ঘটনাটি আসলে আফিফের ব্যাটে লেগে বল যখন পেছনের দিকে যাচ্ছিল, মুশফিক আর নাসুমও ধীর পায়ে সামনে এগুচ্ছিলেন। তবে মুশফিক বলের কাছাকাছি চলে যাওয়ায় থেমে যান নাসুম। ক্যাচটি লুফে নেয়ার পর নাসুমের সঙ্গে মৃদু ধাক্কার মতো লাগে মুশফিকের। আর এতেই চটে যান মুশি।
ইনিসের ১৩তম ওভারে এমন আরেকটি ঘটনা ঘটে। বল করছিলেন নাসুম। আফিফ হোসেন মিড অনে বল ঠেলে দেন। তখন দুজনই ফিল্ডিং করতে চলে গিয়েছিলেন সেখানে। নাসুম স্ট্যাম্প ছেড়ে বল ধরতে চলে যান অন্যদিকে কিপিং গ্লাভস হাতে দৌড়ে আসেন মুশফিকও। ঠিক সেসময় স্ট্রাইক প্রান্তটি অরক্ষিত হয়ে পড়ে। বল নেওয়ার পর মুশফিক রেগে গিয়ে নাসুমকে বল ছুঁড়তে মারতে যান।
মুশফিককে এ ম্যাচে আরও কয়েকবার চোটতে দেখা যায়। তবে ম্যাচ জয়ের জন্যই যে তিনি এমন ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও সঙ্গে সঙ্গে অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চান নাসুম, পর মুহূর্তেই আবার তার পিঠ চাপড়ে দেন মুশফিক।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০২০
এমএমএস