স্বল্প পুঁজি নিয়েও মেহেদী হাসান মিরাজের ঘূর্ণিজাদুতে ভালোই লড়াই উপহার দিল চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স। তবে শেষ পর্যন্ত ওই স্বল্প পুঁজির কারণেই হারতে হলো তাদের।
শুক্রবার অষ্টম বিপিএলের উদ্বোধনী ম্যাচে চট্টগ্রামকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে বরিশাল। শুরুতে ব্যাট করে ৮ উইকেট হারিয়ে ১২৫ রানের সংগ্রহ গড়ে চট্টগ্রাম। জবাবে ৬ উইকেট হারালেও ৮ বল হাতে রেখেই লক্ষ্য পেরিয়ে যায় সাকিববাহিনী।
ম্যাচটা বেশিরভাগ সময় বরিশালের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। তবে মিরাজের এক ওভারে ৩ উইকেট পড়ে যাওয়ায় খেলা জমে ওঠে। সেই অবস্থা থেকে বরিশালকে জিতিয়েছেন জিয়াউর এবং ব্র্যাভো।
রান তাড়ায় নেমে ফরচুন বরিশালের যাত্রাটাও শুভ হয়নি। দলীয় ৩ রানে মেহেদি মিরাজের ঘূর্ণিতে বোল্ড হয়ে যান নাজমুল হোসেন শান্ত (৬ বলে ১)। অন্য ওপেনার সৈকত আলীর সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক সাকিব। স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্ব এই ব্যাটার মিরাজের দ্বিতীয় শিকার হওয়ার আগে ১৬ বলে ১৩ রান করতে পেরেছেন। মেরেছেন ২টি বাউন্ডারি। এরপর ৩৪ রানের জুটি গড়ে বিপদ সামাল দেন অপর ওপেনার সৈকত আলী এবং তৌহিদ হৃদয়। প্রথম ১০ ওভারে আসে ৫৫ রান। ১২তম ওভারে মুকিদুলের বলে তৌহিদ হৃদয় (১৬) আউট হলে ভাঙে সেই জুটি।
সৈকতের সঙ্গী হন ইরফান শুকুর। ১৫ নম্বর ওভারে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন মিরাজ। তার করা প্রথম বলে স্ট্রেইট ড্রাইভে বল সীমানার বাইরে উড়িয়ে ফেলেন সৈকত। পরের বল মিডউইকেট দিয়ে ওড়াতে গিয়ে একবারে সীমানা দড়ির ওপর তিনি ধরা পড়েন। শেষ হয় তার ৩৫ বলে চার ২ ছক্কায় ৩৯ রানের ইনিংস। পরের বলে ইরফান শুকুরকেও (১৬) লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। কিন্তু হ্যটট্রিক হয়নি। পঞ্চম বলে আফিফ হোসেনের দারুণ থ্রোয়ে রান-আউট হয়ে যান সালমান হোসেন (০)।
দ্রুত উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে যায় বরিশাল। ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান দিয়ে চট্টগ্রাম অধিনায়কের সংগ্রহ ৪ উইকেট। এমন পরিস্থিতিতে হাত খুলে মেরে বরিশালের আশা ফের জাগিয়ে তোলেন জিয়াউর রহমান। সঙ্গী ডোয়াইন ব্র্যাভো। তাদের ব্যাটে চড়ে কাঙ্ক্ষিত জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় ফরচুন বরিশাল। ব্র্যাভো ১০ বলে ১ ছক্কায় ১২* এবং জিয়াউর ১২ বলে ২ চার ১ ছক্কায় ১৯* রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে চট্টগ্রাম। শের-ই-বাংলার সেই চিরচেনা উইকেটে তারা ৬ রান তুলতেই ওপেনার কেনার লুইসের উইকেট হারায়। তাকে নাজমুল ইসলাম শান্তর ক্যাচে পরিণত করেন নাঈম হাসান।
তিনে নেমে আফিফ হোসেন একটি ওভার বাউন্ডারি মেরে অন্য কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যারিবীয় পেসার আলঝারি জোসেফের বলে ১২ রান করে ধরা পড়েন উইকেটকিপারের গ্লাভসে। এরপর মঞ্চে আবির্ভাব বরিশাল অধিনায়ক সাকিবের। তার বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়েন দীর্ঘদিন ধরে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটের বাইরে থাকা সাব্বির রহমান।
চট্টগ্রামের ইনিংস আরও বড় ধাক্কা খায় ওপেনার উইল জ্যাকস (১৬) বরিশালের পেসার জ্যাক লিন্টটের বলে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়লে। এরপর দলীয় ৫৬ রানে ড্রেসিং রুমে ফেরার মিছিলে যোগ দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। চট্টগ্রামের অধিনায়ক ৯ রান করে নাঈম হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন। এরপর দলটির শেষ স্বীকৃত ব্যাটার শামিম হোসেন পাটোয়ারী টিকে থাকার লড়াই চালিয়ে ২৩ বলে ১৪ রানের ইনিংস খেলে জোসেফের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন।
৬৩ রানে ৬ উইকেট হারানো চট্টগ্রাম শেষদিকে কিছু মূল্যবান রানের দেখা পায় বেনি হাওয়েল ও নাঈম ইসলামের ব্যাটে। নাঈম ১৮ বলে ১৫ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন জোসেফের তৃতীয় শিকার হয়ে। তবে একপ্রান্তে ঝড় তোলেন হাওয়েল। ২০ বলের মোকাবিলায় ৪১ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেন তিনি। ডোয়াইন ব্র্যাভোর বলে ক্যাচ আউট হওয়ার আগে তিনি ৩টি করে চার ও ছক্কা হাঁকান।
বল হাতে ৩ উইকেট তুলে নিয়েছেন জোসেফ। নাঈম ঝুলিতে পুরেছেন ২ উইকেট। ১টি করে উইকেট গেছে সাকিব, ব্র্যাভো ও লিন্টটের ঝুলিতে। তবে সাকিব ছিলেন অনবদ্য। ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচ করেছেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হয়েছেন চট্টগ্রামের মেহেদী হাসান মিরাজ।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৯ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০২২
এমএইচএম