একই দিনে পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন দেশের ক্রিকেটের দুই সাবেক তারকা খেলোয়াড় সামিউর রহমান ও মোশাররফ রুবেল। তাদের প্রয়াণে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) সুপার লিগ পর্বে আজ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তিনটি ম্যাচ। মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব ও রূপগঞ্জ টাইগার্স ক্রিকেট ক্লাব। সাভারে চলছে আরো দুটি ম্যাচ। তাদের স্মরণে ম্যাচগুলোর আগে নীরবতা পালন করা হয়েছে।
গত ১৯ এপ্রিল না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডের পেসার সামিউর রহমান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। সামিউর গত দেড় বছর ধরে অসুস্থ ছিলেন। ব্রেন টিউমার হয়েছিল তার, ডিমেনশিয়ায়ও ভুগছিলেন।
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পথচলা শুরু হয় ১৯৮৬ সালের ৩১ মার্চ পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে দিয়ে। সেই ম্যাচে টাইগার পেসার ছিলেন সামিউর রহমান। ছয়দিন পর ক্যান্ডিতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ও শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন।
সামিউর রহমান আজীবন ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন। প্রথম শ্রেণি ও লিস্ট এ ক্রিকেটে আম্পায়ারিং করেছেন ২৮ ম্যাচে। ম্যাচ রেফারি ছিলেন ১১১ ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে ২৫টি ম্যাচেও ম্যাচ রেফারিং করেছেন।
একইদিন বিকেল ৫টায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ক্যানসারে আক্রান্ত জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার মোশাররফ রুবেল। বিকেলে শারিরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ইউনাইটেড হাসাপাতালে নেওয়া হয় রুবেলকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
এর আগে প্রায় তিন বছর ধরে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত ছিলেন জাতীয় দলের এ বাঁহাতি স্পিনার।
২০১৯ সালে রুবেলের ব্রেন টিউমার শনাক্ত হয়েছিল। এরপর তিনি পাড়ি জমান সিঙ্গাপুরে। সেখানে দফায় দফায় চলছিল কেমোথেরাপি। মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে রুবেলের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। এরপর দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু কেমো এবং রেডিও থেরাপির জন্য তাকে নিয়মিত সিঙ্গাপুর যাওয়া-আসার মধ্যে থাকতে হতো। ওই বছরের ডিসেম্বরে সর্বশেষ কেমো দেওয়া হয়। এক বছর ফলোআপে ছিলেন তিনি।
২০২০ সালে সুস্থ, স্বাভাবিক হয়ে মাঠে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন রুবেল। কিন্তু নভেম্বরে আবার অসুস্থ হন। ২০২১ সালের জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে এমআরআই করার পর দেখা গেছে, পুরনো টিউমারটি আবার নতুন করে বাড়ছে। তারপর থেকে আবার শুরু হয় কেমোথেরাপি। সব মিলিয়ে ২৪টি কেমোথেরাপি নিয়েছিলেন রুবেল। গত কিছুদিন রাজধানীর একটি হাসপাতালে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই মৃত্যুবরণ করলেন তিনি।
২০০৮ সালে মোশাররফ রুবেল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখেন। দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ ওয়ানডে খেলে ১ উইকেট পান। এরপর দীর্ঘদিন দলের বাইরে ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে ফের দলে সুযোগ পান রুবেল। কিন্তু কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ না পেয়ে আবার বাদ পড়েন।
২০১৬ সালে আফগানিস্তান সিরিজে রুবেলকে ডাকেন চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। আট বছর পর জাতীয় দলের জার্সিতে মাঠে নেমে ৩ উইকেট পাওয়ার পাশাপাশি দলকে জেতাতে বড় ভূমিকাও রাখেন তিনি। কিন্তু পরের ম্যাচে উইকেট না পাওয়ায় ফের বাদ পড়েন। সেই থেকে জাতীয় দলে আর ফেরা হয়নি তার।
তবে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত ঘরোয়া ক্রিকেটে মোটামুটি নিয়মিত মুখ ছিলেন রুবেল। ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০২২
এমএইচএম