ঢাকা, শনিবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ক্রিকেট

মঞ্চ প্রস্তুত পেয়েও ইমরান হতে পারলেন না বাবর

স্পোর্টস ডেস্ক  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৯ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২২
মঞ্চ প্রস্তুত পেয়েও ইমরান হতে পারলেন না বাবর

১৯৯২ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ইংল্যান্ডকে ফাইনালে হারিয়ে বিশ্বকাপ ঘরে তুলেছিল পাকিস্তান। একই মাঠে আজ ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর সুযোগ ছিল বর্তমান দলটির সামনে।

কিন্তু তা হতে দেয়নি ইংলিশরা। সেবার ইমরান খানের অসাধারণ নেতৃত্ব পাকিস্তানের শিরোপা জয়ে রেখেছিল মূল ভূমিকা। এবারও মঞ্চ প্রস্তুত ছিল; কিন্তু ব্যর্থ হয়েছেন বর্তমান অধিনায়ক বাবর আজম।

৩০ বছর আগের সেই বিশ্বকাপ ছিল আলাদা ধরনের। সেবার ছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপ, আর এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু দুই বিশ্বকাপেই আছে অবিশ্বাস্য কিছু মিল। '৯২ বিশ্বকাপে মেলবোর্নেই প্রথম ম্যাচ খেলেছিল পাকিস্তান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১০ উইকেটে হেরে গিয়েছিল ইমরান খানের দল। এবারও একই মাঠে পাকিস্তান খেলেছে প্রথম ম্যাচ। ১৯৯২ সালের মতো এবারও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের কাছে হেরেছে পাকিস্তান।  

১৯৯২ বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচ হারের পর টুর্নামেন্টের সবগুলো খেলাই ছিল পাকিস্তানের জন্য 'নকআউট'। হারলেই বিদায়; এমন সমীকরণ সামনে রেখে তিন জয়ে তারা পৌঁছে যায় সেমিফাইনালে। এবারও সুপার টুয়েলভ পর্ব একইভাবে পেরিয়েছে বাবরবাহিনী। ’৯২ বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৪ রানে অল আউট হয়েও বৃষ্টিতে ১ পয়েন্ট পাওয়ায় রক্ষা পায় পাকিস্তান। এবারও বৃষ্টিতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ ভেসে যায় এবং তাতে ১ পয়েন্ট পায় প্রোটিয়ারা। তারা জিততে না পারাতেই কপাল খোলে পাকিস্তানের।  

’৯২-এর মতো এবারও ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল সেই ইংল্যান্ড-পাকিস্তান। কিন্তু এবার বাবররা পারলেন না ইমরানের দলের মতো শিরোপা উত্সবে মাততে।  

আজ রোববার বিশ্বকাপের রোমাঞ্চকর ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বসেরা হলো ইংল্যান্ড। ৩ বছর আগে তারা ঘরে তুলেছিল ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। সাদা বলের ফরম্যাটে ইংল্যান্ড কতটা দুর্দান্ত দল, তা এই দুই বিশ্বকাপেই বোঝা গেছে। অথচ ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ইংলিশরা হেরেছিল বাংলাদেশের কাছে। এরপর তারা খুব দ্রুত দল পুনর্গঠন করে, যার ফল তারা এখন পাচ্ছে। যদিও সুপার টুয়েলভ পর্বে তারা হেরে বসে আয়ারল্যান্ডের কাছে। কিন্তু ওই একটা ধাক্কা যেন তাদের তাতিয়ে দিয়েছিল। এরপর বাকি সব ম্যাচে তাদের দেখা গেছে রুদ্রমূর্তিতে। প্রতিপক্ষকে তারা প্রায় উড়িয়েই দিয়েছে। ফাইনালে নিয়েছে ৩০ বছর আগের সেই পরাজয়ের প্রতিশোধ।

এবারের ফাইনালে ইংলিশদের সঙ্গে হারলেও অবশ্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপহার দিয়েছে পাকিস্তান। ১৯তম ওভার পর্যন্ত লড়ে গেছেন বাবররা। কিন্তু এমন ম্যাচে নায়ক হতে পারেননি দলটির অধিনায়ক ও বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ব্যাটার বাবর আজম। আজকেও চিরচেনা 'ওয়ানডে স্টাইলে' ব্যাট শুরু করেন তিনি। তার সঙ্গে ইনিংস ওপেন করতে নামা রিজওয়ানও একই ধাচে খেলায় পাওয়ার প্লেতে ভালো সংগ্রহ পায়নি পাকিস্তান। আদতে ম্যাচের সেরা ইংলিশ পেসার স্যাম কারেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে হিমশিম খেয়েছেন পাকিস্তানের দুই ওপেনারই।  

১৪ বলে ১৫ রান করে রিজওয়ান বিদায় নিলে দায়িত্বটা কাঁধে চাপে বাবরের। মোহাম্মদ হারিসের (৮) বিদায়টাও দ্রুত হলে চাপ বাড়ে তার। কিন্তু চাপে ভেঙে পড়েন পাকিস্তান অধিনায়ক। ইংলিশ স্পিনার আদিল রশিদের নিরীহদর্শন এক বলে তারই হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে বাবর ২৮ বলে করেন ৩২ রান; বাউন্ডারি ২টি। তারপরও দলের দ্বিতীয় সংগ্রহ তার। কিন্তু তার দল ভালো সংগ্রহ পায়নি। এরপর ফিল্ডিংয়ের সময় প্রতিপক্ষের অলরাউন্ডার ও ম্যাচের অন্যতম নায়ক বেন স্টোকসের রান আউট মিস করা থেকে শুরু করে বেশকিছু হাফ চান্স কাজে লাগাতে না পারায় হেরে যেতে হয় পাকিস্তানের। বাবর পুরো ম্যাচেই বিশেষ কোনো অবদান রাখতে পারেননি। অথচ পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠার পর থেকেই ইমরান খানের সঙ্গে বাবরের তুলনা করা হচ্ছিল। বেশকিছু মিলের কারণে তো অবশ্যই; সেই সঙ্গে ইমরান ও বাবরের নেতৃত্বের তুলনাও শুরু হয়। '৯২ বিশ্বকাপে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছিলেন ইমরান। বছরখানেক ধরেই দারুণ ছন্দে থাকা বাবরকে ঘিরেও ছিল পাকিস্তানের প্রত্যাশা ছিল একইরকম। কিন্তু বাবর পুরোপুরি প্রস্তুত মঞ্চেও আলো ছড়াতে ব্যর্থ হলেন।  

বাংলাদেশ সময়: ২১৫৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৩, ২০২২
এমএইচএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।