চট্টগ্রাম: ৯ বছর আগে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি গঠিত হয়েছিলো। এ সময়ের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির রদবদল হয়েছে পাঁচবার।
সাবেক ছাত্রনেতারা বলছেন, ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামে বীর চট্টলার ছাত্রলীগের বলিষ্ঠ ভূমিকা ছিল। নেতৃত্ব তৈরির ‘প্লাটফর্ম’ নগর ছাত্রলীগের এমন দৈন্যদশা কাম্য নয়।
২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর ছাত্রলীগের এক বছর মেয়াদি কমিটি হয়। সেই একবছর যেন আর শেষ হয়েও হয় না। কাটা হয়ে গেছে দশটি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কেক। চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ হয়েছে আট বছর দুই মাস আগে। বর্তমানে কমিটির সদস্যরা কাগজে–কলমে এখনো পদ আঁকড়ে আছেন। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির নেতাদের মধ্যে কোন্দল প্রকট হয়ে সাংগঠনিক বিশৃঙ্খলতা তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘসময় দায়িত্বে থাকায় নেতারা স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘ অপেক্ষাতেও নতুন কমিটি না আসায় সাংগঠনিক কার্যক্রমে অনেকটা ভাটা পড়েছে। কমিটিতে পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মধ্যেও হতাশা দেখা দিয়েছে। তাদের ভাষ্যমতে, ‘নতুন কমিটির মুখ দেখা যেন স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। একের পর এক কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃত্বে পরিবর্তন এলেও সংগঠনের গঠনতন্ত্রের ২১ (ক) ধারা অনুযায়ী প্রতিবছর জেলা শাখাগুলোর বার্ষিক সম্মেলন করার কথা থাকলেও বিগত ৯ বছরে চট্টগ্রাম মহানগরে এসেছে মাত্র একটি কমিটি। কেন্দ্রে বারবার যোগাযোগ করেও কোনও পরিবর্তন আসেনি। এমনকি গ্রুপিং কোন্দলে কমিটি গঠনের পর থেকেই আলোচনা-সমালোচনার শীর্ষে রয়েছে এ ইউনিট। ফলে নানান জটিলতার মধ্য দিয়ে সময় পার করছে নেতা-কর্মীরা।
দীর্ঘদিন একই কমিটি থাকার কারণে বঞ্চিতদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। ফলশ্রুতিতে নগরের আনাচে কানাচে গ্রুপ, উপ-গ্রুপ ও কিশোর গ্যাং-এর দাপট বাড়ছে। জানা গেছে, বর্তমানে নগর ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে আটটি গ্রুপ রয়েছে। সক্রিয় রয়েছে দুইটি গ্রুপ। এছাড়া একাধিক উপ-গ্রুপও সক্রিয়। কর্মীর চেয়ে নেতার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তৈরি হয়েছে বিশৃঙ্খলা। গ্রুপগুলো বিভক্ত হয়ে জাতীয় দিবস পালন, মিছিল-মিটিং ও শোডাউনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনেও এক হতে পারেনি নগর ছাত্রলীগ।
এ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ ও চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছে পদপ্রত্যাশীরা। তাদের হাত ধরে কমিটিতে জায়গা করে নিতে চলছে নানা সমীকরণ।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের একাধিক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের পাঁচটি কমিটি পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু নগরে একটি কমিটিও পরিবর্তন হয়নি। নগরে নেত্বত্ব সংকট রয়েছে, নতুন কোনও নেতা তৈরি হচ্ছে না। নগর সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ইচ্ছা অনুযায়ী সভা, মিছিল-মিটিং হয়।
মহানগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল বলেন, ‘নগর ছাত্রলীগের কমিটি নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। আমরা মেয়াদোত্তীর্ণ এই কমিটি বাতিলের জন্য আন্দোলন করেছি। প্রায় ৯ বছর আগে দেওয়া এ কমিটির কারোই নিয়মিত ছাত্রত্ব নেই। বর্তমান মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির ৭০ শতাংশই বিবাহিত।
চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, আমরা সম্মেলন করার জন্য প্রস্তুত আছি। কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেলে সম্মেলন করতে পারবো।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৪, ২০২৩
এমআই/টিসি