ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

উৎসবের রং চট্টগ্রামের একুশে বইমেলায়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০০২ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
উৎসবের রং চট্টগ্রামের একুশে বইমেলায় বইমেলার প্রথমদিনে একটি স্টলে পাঠকের ভীড়। ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: নতুন বই, নতুন স্বপ্ন লেখক ও প্রকাশকের। কৌতূহলী পাঠকের আনাগোনা স্টলে স্টলে।

আকর্ষণীয় রং লেগেছে মেলার তোরণে। আলোকিত বইমেলা মঞ্চ।
দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতিও বেশ। পুরো মেলা মাতিয়ে রেখেছে সালেহ জহুর স্কুলের নীল-সাদা পোশাকের ছাত্রীরা। কথামালা, আড্ডা, কুশল বিনিময়ের মধ্যে কেটেছে চট্টগ্রামের একুশে বইমেলার প্রথম দিন।  

বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে এমনটি দেখা গেছে এমএ আজিজ স্টেডিয়ামের জিমনেশিয়াম মাঠের অমর একুশে বইমেলায়। বেশিরভাগ স্টল সাজানোর কাজ শেষ। হাতেগোনা কয়েকটি স্টল ছিল বইশূন্য। দুই-এক দিনের মধ্যে মেলা পরিপূর্ণতা পাবে এমনটি আশা প্রকাশকদের। প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৩০০ বর্গফুট জায়গায় ৩২টি ডাবল ও ৭৬টি সিঙ্গেল স্টলে চট্টগ্রাম ও ঢাকার সৃজনশীল প্রকাশনা সংস্থা অংশ নিচ্ছে।  

এর মধ্যে রয়েছে প্রথমা, বাতিঘর, শৈলী, বলাকা, প্রজ্ঞালোক, ইতিহাসের খসড়া, চন্দ্রবিন্দু, রাদিয়া, মনন, কথন, পূর্বা, নন্দন, সালফি, কিডস, ঝিলমিল, বিদ্যানন্দ, গল্পকার, কথাবিচিত্রা, হাওলাদার, কাকলী, ভোরের কাগজ, তাম্রলিপি, আদিগন্ত, বাবুই, রোদেলা, চারুলিপি, চর্চা গ্রন্থ প্রকাশ, চন্দ্রাবতী একাডেমি, শিশু একাডেমি, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব ইত্যাদি।  

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, একাত্তরে যে চেতনার ভিত্তিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে পুরো জাতি এক হয়ে লড়েছিল সে চেতনার ধারা আজ দুর্বল হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর অকাল প্রয়াণের পর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ক্ষমতা দখল করে জনগণ বিশেষ করে শিশুদের মগজধোলাই করে তাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। বইমেলার মাধ্যমে মিথ্যার প্রাসাদ ভেঙে জনগণের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পুনর্জাগরিত করতে এই বইমেলার আয়োজন করা হয়েছে। বইমেলার প্রতিটি বই হয়ে উঠুক মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের অস্ত্র।

ভাষা আন্দেলনের তাৎপর্য থেকে শুরু করে স্বাধীনতাযুদ্ধের পরিকল্পনা সমস্তটাকেই জনগণের কাছে পৌঁছাতে সহযোগিতা করেছে বই। এজন্য চট্টগ্রামবাসীর হাতে-হাতে বই তুলে দিতে এই বইমেলার আয়োজন। ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানাচ্ছি যারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহার করছেন না তারা সাইনবোর্ডে বাংলা ব্যবহার করুন। চট্টগ্রামবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা মেলায় আসুন, নতুন প্রজন্মের হাতে মোবাইল নয়, বরং বই তুলে দিন।  

প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেন, রাষ্ট্রের উন্নয়নে চাই শিক্ষার উন্নয়নে। আর, ভালো মানের বই ছাড়া ভালো শিক্ষা ব্যবস্থা গড়া সম্ভব নয়। এই বইমেলা চট্টগ্রামের হাজারো বইপ্রেমীর পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে, যা আমাদের একটি উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লড়াইয়ে সাহস জোগাবে।

সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, বই বর্তমানের সঙ্গে অতীত আর ভবিষ্যৎের মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করে।  

উপস্থিত ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাফফর আহমদ, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সভাপতি সালাহ্উদ্দিন মো. রেজা, বই মেলার আহ্বায়ক কাউন্সিলর নিছার উদ্দিন আহমেদ (মঞ্জু), কাউন্সিলর গাজী মো. শফিউল আজিম, হাসান মুরাদ বিপ্লব, নাজমুল হক ডিউক, আবদুস সালাম মাসুম, মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী, মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, সংরক্ষিত কাউন্সিলর তছলিমা বেগম নুরজাহান, রুমকি সেনগুপ্ত  চসিক সচিব খালেদ মাহমুদ, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, প্রধান শিক্ষা কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার, মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেম,  রাজস্ব কর্মকর্তা সৈয়দ শামসুল তাবরীজ, শিক্ষা কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা, আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম, স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজন, উপ-সচিব আশেক রসুল চৌধুরী (টিপু), নির্বাহী প্রকৌশলী মীর্জা ফজলুল কাদের, জনসংযোগ ও প্রটোকল কর্মকর্তা আজিজ আহমদ এবং সিবিএ সভাপতি ফরিদ আহমদ, সিনিয়র সহ সভাপতি জাহিদুল আলম চৌধুরী, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বিপ্লব কুমার চৌধুরী প্রমুখ।

এবারের মেলার অনুষ্ঠানমালায় রয়েছে নজরুল দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস-২১ ফেব্রুয়ারি, লোক উৎসব, রবীন্দ্র উৎসব, তারুণ্য উৎসব, নারী উৎসব, বসন্ত উৎসব, মরমী উৎসব, আবৃত্তি উৎসব, নৃগোষ্ঠী উৎসব, লেখক সমাবেশ, যুব উৎসব, শিশু উৎসব, পেশাজীবী সমাবেশ, মুক্তিযুদ্ধ উৎসব, ছড়া উৎসব, কুইজ প্রতিযোগিতা, চাটগাঁ উৎসব, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও আলোকচিত্র প্রদর্শনী, বইমেলার সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।

মেলা প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা ও ছুটির দিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। দেশের খ্যাতিমান কবি-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বুদ্ধিজীবী, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ প্রতিদিনের বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নেবেন।
 
বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৮, ২০২৩
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।