চট্টগ্রাম: মো.আনোয়ার হোসেন একসময় প্রবাসে শ্রমিকের কাজ করতেন। বছর দুয়েক আগে দেশে এসে বোরহান নামে এক ব্যক্তির কাছে মোটসাইকেল চুরির কৌশল শিখেছেন।
চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা থেকে মো.সাজ্জাদকে সঙ্গে নিয়ে আনোয়ার মোটরসাইকেল চুরি করে কক্সবাজারের রামু গিয়ে বিক্রি করতেন।
নগরের বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত মো.আনোয়ার হোসেন ও তার ৩ সহযোগীকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ গ্রেফতার করার পর জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে এসব তথ্য। তাদের হেফাজত থেকে ৭টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সাংবাদিকদের মুখোমুখি করা হয় এই চোর চক্রকে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোখলেসুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে নগরের বিভিন্ন এলাকা ও চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে কীভাবে মোটরসাইকেল চুরি করে তার বিস্তারিত কাহিনি।
গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সাতকানিয়ার উত্তর ঢেমশার নুরুল আলমের ছেলে মো.আনোয়ার হোসেন (৩৫), পূর্ব গাটিয়াডাঙ্গা এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে মো.সাজ্জাদ (২৭), কক্সবাজারের রামু থানার মধ্যম মেরংলোয়া এলাকার মকবুল হোসেনের ছেলে মো.জাহেদুল ইসলাম (২০) ও ঘোনারপাড়ার আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে মো.ইউসুফ প্রকাশ মেকানিক ইউসুফ (২৪)।
উপ-কমিশনার মোখলেসুর রহমান বলেন, আনোয়ার ও সাজ্জাদ সরাসরি মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে জড়িত। একটি মোটরসাইকেল চুরি করতে তাদের দুইজন সদস্য স্পটে থাকে। একজনের কাজ হচ্ছে মোটরসাইকেল মালিকের গতিবিধি লক্ষ্য করা, অন্যজন মোটরসাইকেলটি কিছু সময় পর্যবেক্ষণ করে। মাত্র ৪৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিটের মধ্যে মাস্টার চাবি দিয়ে লক ভেঙে মোটরসাইকেল চালু করে। সহযোগীকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল চালিয়ে সরাসরি কক্সবাজারের রামুতে মো.ইউসুফের কাছে বিক্রি করতো।
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.নাজিম উদ্দিন মজুমদার বাংলানিউজকে বলেন, পাঁচলাইশ থানা এলাকার মোটরসাইকেল চুরি যাওয়ার সকল ঘটনাস্থল, রাস্তা, কর্ণফুলী টোল প্লাজাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ৬৫০টি সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। ফুটেজ পর্যালোচনা করে মোটরসাইকেল চোর মো. আনোয়ার হোসেন ও মো.সাজ্জাদকে শনাক্ত করা হয়।
‘এক ঘটনায় দেখা যায়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পূর্ব গেইটের পাশে রাখা একটি মোটরসাইকেলের ওপর বসে পড়ে আনোয়ার। মো. সাজ্জাদ চতুর্দিকে রাস্তার ক্লিয়ারেন্স দেওয়ার জন্য কানে মোবাইল ধরে কৌশলে ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে। আনোয়ার ক্লিয়ারেন্স পেয়ে তার হাতে থাকা মাস্টার চাবি দিয়ে মোটরসাইকেলটির লক খুলে ইঞ্জিন চালু করে’। চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এলাকা থেকে মো. আনোয়ার হোসেন ও মো.সাজ্জাদকে গ্রেফতার করা হয়।
পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আফতাব হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিরা স্বীকার করেছে- তারা দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, দুই নম্বর গেইটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করেছে। এ ব্যাপারে পাঁচলাইশ থানায় চারটি মামলা, বিভিন্ন থানায় মোটরসাইকেল চুরির একাধিক মামলা রয়েছে। চোর চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতারের পর অন্য সদস্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
মোটারসাইকেল চুরির মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) লুৎফর রহমান সোহেল বাংলানিউজকে বলেন, গ্রেফতার আনোয়ার হোসেন মোটরসাইকেল চোর চক্রের প্রধান। তিনি এক সময় প্রবাসে ছিলেন। বছর দুয়েক আগে দেশে এসেছেন। বোরহান নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে মোটরসাইলে চুরির শিক্ষা নিয়ে এ কাজে জড়িয়ে পড়েন। বোরহান এখন প্রবাসে। আনোয়ারের বাড়ি সাতকানিয়ায় হলেও নগরের অক্সিজেন কয়লার ঘর এলাকায় বসবাস করেন। আনোয়ার একটি মোটরসাইকেল চুরির পর মাস দুয়েক মোটরসাইকেল চুরি করা বন্ধ রাখতেন। যার কারণে তাকে গ্রেফতার করতে সময় লেগেছে। আবার চোরাইকৃত মোটরসাইকেলের নম্বর প্লেট পরিবর্তন করতেন। একটি নম্বর প্লেট পরিবর্তন করে চোরাই অন্য একটি মোটরসাইকেলে নম্বর প্লেট লাগানো হতো, যাতে সহজে চোরাই মোটরসাইকেল শনাক্ত করা না যায়।
চুরি হওয়া এক মোটরসাইকেলের মালিক ওষুধ কোম্পানির এমআর মো.মুরাদ বাংলানিউজকে বলেন, মোটরসাইকেল শুধু একটি দ্বিচক্রযানই নয়, প্রয়োজনীয়তা, বাস্তবতা ও একটি স্বপ্ন। মোটরসাইকেল চুরি হয়ে গেলে স্বপ্নটা শুধু ভেঙে যায় না, প্রয়োজনীয়তা এবং বাস্তবতা হয়ে পড়ে কঠিন। আমাদের কাজ- সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছানো। চমেক হাসপাতালে আমাদের যেতেই হয়। মোটরসাইকেল নিচে রেখে ওয়ার্ডে যাওয়ার সময় সাধারণত অতিরিক্ত তালা লাগানো হয় না। এর সুযোগ নেয় চোরচক্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০২৩
এমআই/টিসি