ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১ কার্তিক ১৪৩১, ১৭ অক্টোবর ২০২৪, ১৩ রবিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হাজারো ফানুস উড়লো এক বিহারেই

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২২ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৪
হাজারো ফানুস উড়লো এক বিহারেই ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: সন্ধ্যা নামতেই একে একে ওড়ানো হলো সহস্রাধিক ফানুস। ফানুসে ছেয়ে যায় আকাশ।

ছোট, বড়, মাঝারি আকারের বিচিত্র সব আকাশ প্রদীপ নজরকাড়ে নগরবাসীর। কিছু ফানুসে ছিল সংগঠনের নামসহ চমৎকার শিল্পকর্মও।
 

প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বুধবার (১৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের চিত্র ছিল এমনই। বিহারের উপাধ্যক্ষ ড. জিনবোধি ভিক্ষু মন্ত্র পড়ে, আগুন জ্বালিয়ে ফানুস পর্বের উদ্বোধন করেন। এ উৎসবে যোগ দেন হাজার হাজার তরুণ-তরুণী, বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা। ঢোল, বাদ্য আর আতশবাজিতে রঙিন হয়ে ওঠে ডিসি হিল এলাকা। প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করেছেন।  

ড. জিনবোধি ভিক্ষু বাংলানিউজকে বলেন, প্রবারণা পূর্ণিমা উপলক্ষে দিনব্যাপী কর্মসূচি ছিল বিহারে। সকাল সাড়ে ৫টায় বিশ্বশান্তি কামনায় বুদ্ধবাণী পাঠ করা হয়েছে। এরপর একে একে বুদ্ধপূজা, পঞ্চশীল, অষ্টশীল গ্রহণ, সংঘদান, অষ্টপরিষ্কার দান, ভিক্ষু সংঘকে পিণ্ডদান, অতিথি ভোজন, দুপুরে মেডিটেশন (ভাবনা), প্রভাতী সদ্ধর্ম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রতিযোগিতা, সম্মিলিত পুষ্পপূজা, প্রদীপ প্রজ্বালন, ধর্মদেশনা ইত্যাদি সম্পন্ন করা হয়েছে। এবার প্রবারণা উৎসবের উদ্বোধন করেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।  

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এবার বৌদ্ধ তরুণ-যুবকরা সহস্রাধিক ফানুস উড়িয়েছেন।  

সূত্র জানায়, শুভ আষাঢ়ী পূর্ণিমা তিথিতে রাজকুমার সিদ্ধার্থ (গৌতম বুদ্ধ) দুঃখমুক্তি লাভের আশায় রাজ্য, রাজত্ব, ভোগ-বিলাস, ধন-সম্পদ, সংসার সবকিছু ত্যাগ করে সন্ন্যাসব্রত গ্রহণ করেন। এ সময় ভাবলেন, ‘আমি এখন সন্ন্যাসী, রাজকীয় এ বাহারি চুল আমার কিবা প্রয়োজন। তাই তরবারি দিয়ে নিজের চুলের গোছা নিজেই কেটে নিলেন এবং মনে মনে ভাবলেন, যদি আমার মধ্যে বুদ্ধ হওয়ার মতো পারমী থাকে তাহলে এই চুলের গুচ্ছ মাটিতে পড়বে না, আকাশেই স্থিত থাকবে। এই সংকল্প করে চুলের গোছা ওপরের দিকে নিক্ষেপ করলেন রাজকুমার। আশ্চর্যের বিষয় একটি চুলও মাটিতে পড়ল না। বৌদ্ধ ধর্ম মতে, স্বর্গের ইন্দ্ররাজা এই চুলগুলো হীরা, মণিমাণিক্য খচিত স্বর্ণপাত্রে ধারণ করে, এ চুলকে কেশ ধাতু হিসেবে স্থাপন করে তাবতিংস স্বর্গে একটি চৈত্য নির্মাণ করেন এবং এই চৈত্যের নাম রাখা হয় চুলামনি চৈত্য। সেই বিশ্বাস থেকে বৌদ্ধরা স্বর্গের সেই চুলামনি চৈত্যকে পূজা করার উদ্দেশে আকাশে ফানুস বা আকাশ প্রদীপ উত্তোলন করেন।

ডিসি হিলের চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহার ছাড়াও নগরের কাতালগঞ্জের নবপণ্ডিত বিহার, পাথরঘাটা জেতবন শান্তিকুঞ্জ বিহার, ইপিজেড সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার ও মৈত্রী বনবিহার, চান্দগাঁও সর্বজনীন বৌদ্ধবিহার, মোগলটুলী শাক্যমুনি বৌদ্ধবিহার, বন্দর বৌদ্ধবিহারসহ রাউজান, ফটিকছড়ি, রাঙ্গুনিয়া, পটিয়া, বাঁশখালী, আনোয়ারা, বোয়ালখালী, হাটহাজারীসহ বিভিন্ন উপজেলার বৌদ্ধ বিহারগুলোতে প্রবারণা পূর্ণিমা উদযাপিত হয়েছে।  

বাংলাদেশ সময়: ২২১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০২৪ 
এআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।