ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

গুমাই বিলে ধান কাটার উৎসব

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৯, ২০২৪
গুমাই বিলে ধান কাটার উৎসব ছবি: সোহেল সরওয়ার

চট্টগ্রাম: শস্যভাণ্ডার খ্যাত রাঙ্গুনিয়ার গুমাই বিলে আমন ধানের ভালো ফলন হয়েছে। পেকে গেছে ধান।

এখন চলছে ধান কাটার উৎসব। প্রায় ৩ হাজার হেক্টর আয়তনের এই বিলে এক মৌসুমে উৎপাদিত ধান দিয়ে একসময় সারাদেশের আড়াই দিনের খাদ্যের চাহিদা মেটানো যেতো।

দেশের অন্যতম বৃহৎ এই বিলে ধানের জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে ভরাটপূর্বক গড়ে তোলা হয়েছে বসত-ঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা। অনেক জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে ফসল বিধ্বংসী ইটভাটা। এতে কমে যাচ্ছে ফসলি জমি।  


উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, গুমাই বিলে কৃষকরা ব্রি-৫১, ৫২, ৪৯, ৭৫ জাতের ধানের চাষ করেছেন। প্রতি হেক্টরে পাঁচ দশমিক তিন মেট্রিক টন ফলন হয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা, মরিয়মনগর, হোসনাবাদ, স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া, লালানগর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ৭, ৮ এবং ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে গুমাই বিলের অবস্থান। বিলের জমিতে প্রতি বছর ইরি ও আমনের বাম্পার ফলন হয়। পাকিস্তান আমল থেকে এই বিলে ধান চাষ শুরু হলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সরকারগুলো এখানে আধুনিক সেচের ব্যবস্থা করে।  

স্থানীয় বাইনালার ছড়া, সোনাইছড়ি, মুন্দরী, কুরমাই, ইছামতি, বারঘোনিয়া, ঘাগড়া হ্রদ খাল ও গুট্টাকার খালের সংযোগ রয়েছে গুমাই বিলের সঙ্গে। এর মাধ্যমে পরিকল্পিত সেচ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে কৃষি বিভাগ। শুরুতে এই বিলের আয়তন ছিল ৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি। আবাদি এই বিলে অপরিকল্পিত আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের কারণে রাঙ্গুনিয়ায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে।

দেখা গেছে, গুমাই বিলে পাকা ধানের সমারোহ। কেউ ধান কাটছেন আবার কেউবা ধান মাড়াইয়ে ব্যস্ত। মাঠে কৃষকের পাশাপাশি ব্যস্ত কৃষাণীরাও। সাগর মিয়া নামে এক চাষি বলেন, এবার ৪ হেক্টর জমিতে আমন চারা রোপণ করেছেন। ধান পেকেছে, এখন কেটে ঘরে তোলার কাজ চলছে।

গত আগস্টের বন্যায় গুমাই বিলের বড় অংশ পানিতে তলিয়ে যায়। এতে রোপণ করা ধানের চারা নষ্ট হয়ে যায়। পানি নেমে যাওয়ার পর কৃষকরা আবারও চারা রোপণ করেন।

স্থানীয় কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, দেড় কানি জমিতে চাষ করেছি। বন্যার কারণে তুলনায় এবার ফলন কম হয়েছে। পানিতে কিছু ফসল নষ্ট হয়েছে।  

কৃষক আবুল হোসেন বলেন, তিন কানি দুই গণ্ডা জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। পানি নেমে যাওয়ার পর আবারও চারা রোপণ করতে হয়েছে। খরচ হয়েছে ৩৫ হাজার টাকা। ধান কেটে ঘরে নিতে খরচ হবে আরও ২৫ হাজার টাকা। ৬০ হাজার টাকা খরচ করে ধান পাবো ১৩০ আড়ি। এই ধান বিক্রি করলে ৭০ হাজার টাকা পাবো।

রাঙ্গুনিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, গুমাই বিলে ধান কাটা শুরু হয়েছে। এবছর ধানের ভালো ফলন হয়েছে।  বন্যায় বেশকিছু জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে ব্রি-৫১, ৫২ জাতের ধান পানিসহিষ্ণু। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রণোদনা দিয়েছি।

ধান কাটার মৌসুমে নেত্রকোনা, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, রংপুর, সাতকানিয়া, বাঁশখালীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের শ্রমিকেরা এখানে আসেন। দৈনিক দুইবেলা খাবার এবং সাড়ে তিন শ থেকে চার শ টাকা মজুরিতে গুমাই বিলে ধান কাটেন তারা। ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত চলে ধান কাটার উৎসব।  

কাঁধে করে বাড়ির উঠানে বয়ে আনা হয় সেই ধান। সেখানে চলে ধান মাড়াইয়ের কাজ। কেউ মাঠেই সেরে নেন মাড়াই। এরপর সোনালী ধানে ভরে ওঠে কৃষকের গোলা।

বাংলাদেশ সময়: ১৩০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর  ০৯, ২০২৪
এমআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।