চট্টগ্রাম: ‘২৬ মার্চ’ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন। মহান স্বাধীনতা দিবসের এই মাহেন্দ্রক্ষণে যখন পুরো দেশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বেল, ঠিক তখনই এক ভিন্নধর্মী মানবিক উদ্যোগ গ্রহণ করলেন বিএনপি নেতা ও শিক্ষানুরাগী সাঈদ আল নোমান।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে তিনি ‘শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম শিক্ষাবৃত্তি’ প্রদান করলেন এমন কিছু শিক্ষার্থীকে, যারা জীবনের পথে লড়াই করে এগিয়ে চলেছেন।
এই শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছেন জুলাই বিপ্লবে আহত ছাত্র যোদ্ধারা, মেধাবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতা জয় করে পথচলা ক্ষুদে মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (২৬ মার্চ) বিকেলে নগরীর রেডিসনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সাঈদ আল নোমান বলেন, জুলাই বিপ্লবের শহীদদের জাতি কখনো ভুলবে না। ইতিহাস সাক্ষী, বাংলাদেশের প্রতিটি সংকটে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ লড়াই মুক্তির পথ দেখিয়েছে। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে সর্বশেষ ফ্যাসিস্ট হাসিনাবিরোধী জুলাই বিপ্লব প্রতিটি আন্দোলনেই ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়।
তিনি আরও বলেন, ছাত্রদের এই আত্মত্যাগ ও দেশমাতৃকার প্রতি তাদের ত্যাগকে সম্মান জানাতেই আমরা এই শিক্ষাবৃত্তি দিয়েছি। আহত ছাত্র যোদ্ধারা শুধু ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হননি, বরং তারা গণতন্ত্র ও অধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে জাতির জন্য বড় ত্যাগ স্বীকার করেছেন। আমাদের ক্ষুদ্র এই প্রয়াস তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর একটি ছোট প্রয়াস মাত্র।
এই শিক্ষাবৃত্তির আরেকটি বিশেষ দিক ছিল মেধাবী দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, আমাদের প্রতিভা অনেক সময়ই সমাজের চোখে পড়ে না। কিন্তু আজ এই স্বীকৃতি আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে।
সাঈদ আল নোমান বলেন, শিক্ষা সবার জন্য। শুধু সুস্থ ও স্বাভাবিক শিক্ষার্থীরা নয়, যারা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী কিংবা যাদের চলার পথে প্রতিবন্ধকতা আছে, তাদেরও সমান সুযোগ পাওয়া উচিত। এই শিক্ষাবৃত্তি দিয়ে আমরা বলতে চাই তোমরা একা নও, আমরা আছি তোমাদের পাশে।
অনুষ্ঠানে কিছু ক্ষুদে মেধাবী শিক্ষার্থীও শিক্ষাবৃত্তি পেয়েছে, যারা চরম আর্থিক সংকটেও পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। সাঈদ আল নোমান বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ এই ছোট্ট মেধাবীরা। অর্থের অভাবে যদি তারা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়, তাহলে দেশের জন্য সেটি হবে এক বড় ক্ষতি। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম শিক্ষাবৃত্তির মাধ্যমে আমরা তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।
সাঈদ আল নোমান শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, বৈষম্যহীন, সুন্দর বাংলাদেশ বিনির্মাণে তারেক রহমান যে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ঘোষণা করেছেন, তা বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে। ছাত্রসমাজই জাতির চেতনার মূল চালিকাশক্তি। তাদের ঐক্যবদ্ধ শক্তিই পারে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক, সুশাসনভিত্তিক রাষ্ট্রে পরিণত করতে।
অনুষ্ঠানে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা জুলাই বিপ্লবের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আরও সক্রিয় হওয়ার আহ্বান জানান।
শহীদদের আত্মত্যাগের স্মৃতিচারণা আর শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে এমন একটি আয়োজন নিঃসন্দেহে শিক্ষাক্ষেত্রে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। স্বাধীনতা দিবসের এই শুভক্ষণে এমন মানবিক উদ্যোগ ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখাবে নতুন প্রজন্মকে।
বাংলাদেশ সময়: ০২০২ ঘণ্টা, মার্চ ২৭, ২০২৫
এমআই/টিসি