ঢাকা, রবিবার, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ, ২ মাসে শতাধিক দুর্ঘটনা

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৫
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক যেন মরণফাঁদ, ২ মাসে শতাধিক দুর্ঘটনা লোহাগাড়ায় সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ১১ জন

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় তিন দুর্ঘটনায় ১৫ জনের মৃত্যু হয়; আহত হয়েছেন অন্তত ৩০ জন। শুধু জাঙ্গালিয়া এলাকা নয়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে প্রায় প্রতিদিন ঘটছে ছোট-বড় সড়ক দুর্ঘটনা।

এ মহাসড়ক যেন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। গত দুই মাসে ছোট-বড় প্রায় শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রশস্ত সড়ক, লবণ পানিতে মহাসড়ক পিচ্ছিল থাকা, অদক্ষ চালক, বেপরোয়া গতি, বিপজ্জনক বাঁক, ওভারটেকিং, মহাসড়কে নিষিদ্ধ ছোট যানবাহন চলাচল, ধারণক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত ওজন নিয়ে চলাচল ও সড়কের দুইপাশে উঁচু-নিচু অংশ থাকাসহ বেশ কয়েকটি কারণে ঘটছে এই সড়ক দুর্ঘটনা।  

টানা দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ হওয়ার ঘটনায় কক্সবাজার চট্টগ্রাম মহাসড়ক চার লেনে উন্নতি করণের দাবি জোরালো হচ্ছে। মরণফাঁদ থেকে বাঁচতে জনদাবি নিয়ে সর্বস্তরের মানুষ মানববন্ধন, বিক্ষোভসহ সভা- সমাবেশ করছে। চার লেনের সড়কের দাবিতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন কার্যালয়, সাতকানিয়া, লোহাগাড়ায় মানববন্ধন করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)-র নেতাকর্মীরা। এছাড়াও সরকারের প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।  

জানা যায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার দেশের ব্যস্ততম মহাসড়কের একটি। এ সড়কের বেশিরভাগ অংশের প্রশস্ততা মাত্র ১৮-৩৪ ফুট। ফলে দূরপাল্লার গাড়ি স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারে না। ১৪৮ কিলোমিটার পথ বাসে যেতে সময় লাগে ৫ থেকে সাড়ে ৫ ঘণ্টা। অতিরিক্ত বাঁক, উপসড়ক থেকে যত্রতত্র ছোট বড় গাড়ি মহাসড়কে উঠে আসার কারণে সড়কটি হয়ে উঠেছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা প্রবণ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পলিথিন বিহীন ট্রাক ভর্তি লবণ পরিবহন। যেটি টেকনাফ, উখিয়া কক্সবাজার, মহেশখালী, পেকুয়া, বাঁশখালীতে উৎপাদিত লবণ। যার কারণে রাতের কুয়াশার সাথে লবণ পানি একাকার হয়ে সড়কটি মারাত্মক পিচ্ছিল করে তুলছে। এতে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে ১৫৮ কিমি দীর্ঘ চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক।

এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটির অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। বিশেষ করে মহাসড়কের হাশমতের দোকান, ঠাকুরদীঘি, উপজেলার পদুয়া, লোহাগাড়া শহর, আধুনগর, হাজি রাস্তা, চুনতি, জাঙ্গালিয়া এলাকা, চকরিয়া অংশের ইসলাম নগর ইমাম বুখারী মাদ্রাসা এলাকা, বানিয়ারছড়া ওরি আমগাছ তলা, হারবাং লালব্রীজ এলাকা আজিজ নগর, চকরিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এলাকা, লক্ষ্যারচর জিদ্দা বাজার টার্নিং পয়েন্ট, মালুমঘাটের রিংভং ছগিরশাহকাটা ঢালা, ডুলাহাজারার পাগলিরবিল, খুটাখালী জাতীয় উদ্যান, নাপিত খালী, রামু রাবার বাগান।

গত বুধবার (৩ এপ্রিল) সকালে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি এলাকায় ভয়াবহ এক সড়ক দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান ১১ জন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হন প্রেমা নামের এক নারী। পরে তাকে উদ্ধার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থা শুক্রবার (৪ এপ্রিল) তার মৃত্যু হয়। একই  দুর্ঘটনায় প্রেমার বাবা শামীম ফকির (৪০), মা সুমি আক্তার (৩৪), দুই বোন আনিসা (১৪) ও মাত্র চার মাস বয়সী ছোট বোন, এবং খালা তানিফা ইয়াসমিন (৩৫) মারা যান।

লোহাগাড়ায় গত ৩১ জানুয়ারি সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টার মধ্যে চারটি সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। সবগুলো দুর্ঘটনাই ঘটেছে চুনতি ইউনিয়ন এলাকার ২ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে।

গত মঙ্গলবারও রাত ৮টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার ছদাহা রাজঘাটা এলাকায় এসআই পার্কের সামনে লবণের পানিতে পিচ্ছিল সড়কে বাইক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাইফুদ্দিন জামিল নামে এক যুবক নিহত ও তার বন্ধু রেজাউল করিম আহত হন। পরেরদিন বুধবার রাত ২টার দিকে হাসমতের দোকান এলাকায় পিচ্ছিল সড়কে সবজি বোঝাই একটি ট্রাক উল্টে যায়। এছাড়া, ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে ঠাকুরদীঘি ছগির আহমদ অটো ফিলিং স্টেশনের সামনে দুটি কাভার্ড ভ্যানের মুখোমুখি সংঘর্ষে অন্তত ৫ জন আহত হন।

২০২৩ সালের ১৮ মার্চ রাত ১টার দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে চুনতি ইউনিয়নের বনপুকুর এলাকায় বাস-লরি ও রাত দেড়টায় আধুনগর ব্রিজ এলাকায় বাস-ট্রাক মুখোমুখি সংঘর্ষে ১৯ জন আহত হন। এইদিন ভোর ৫টার দিকে লোহাগাড়া ও চকরিয়া উপজেলা সীমান্তবর্তী আজিজনগর এলাকায় কক্সবাজারগামী সিমেন্ট বোঝাই ট্রাক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লেগে উল্টে যায়। এতে চালক এরশাদ মন্ডল (৩০) ও হেলপার শিব্বির আহমদ মারুফ (১৯) ঘটনাস্থলে নিহত হন। গত ৫ মার্চ একই স্থানে বিজিবির বাসের সঙ্গে যাত্রীবাহি লেগুনার মুখোমুখি সংঘর্ষে ৫ জন নিহত হন।

লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল হচ্ছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক। ফলে বিপজ্জনক এ মহাসড়কে প্রতিদিন দুর্ঘটনায় বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। লবণবাহী গাড়িতে ত্রিপল ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না।  

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিন শত শত ট্রাকে লবণ পরিবহন করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এতে লবণের পানি পড়ে পিচ্ছিল হচ্ছে সড়ক। মহাসড়কটির কক্সবাজারের ঈদগাঁও থেকে চকরিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ ও পটিয়া পর্যন্ত এলাকায় লবণবাহী ট্রাক চলছে অবাধে। বেশিরভাগেরই নেই পর্যাপ্ত লবণ পানি আটকে রাখার ব্যবস্থা।  

সস্প্রতি মহাসড়কটির চকরিয়া উপজেলায় ১৫টি দুর্ঘটনায় ১০ জনের প্রাণহানি ও আহত হয়েছেন অনেকে। ত্রিপল ছাড়া খোলা ট্রাকে লবণ পরিবহনের কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ।

দোহাজারী হাইওয়ে পুলিশের ওসি খাঁন মোহাম্মদ এরফান বাংলানিউজকে বলেন, শুধুমাত্র লবণবাহী ট্রাকের কারণেই দুর্ঘটনা বাড়ছে-এমন কিন্তু নয়। বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে চালকদের অসতর্কতা, ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গাড়ি চালানো, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, প্রতিযোগিতা দিয়ে গাড়ি চালানো ইত্যাদি কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, রাতে ও ভোরে মহাসড়কটির অবস্থা দেখলেই বুঝা যাবে- পরিবহনের সময় ট্রাক থেকে নিঃসৃত লবণ পানিতে পিচ্ছিল হয়ে উঠছে এ মহাসড়ক। ব্রেক কষলেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মহাসড়ক থেকে ছিটকে পড়ছে যানবাহন।  

চাঁদাবাজি

লবণবাহী গাড়িতে ত্রিপল ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও তা মানছেন না চালকেরা। এতে লবণবাহী ট্রাক থেকে নিঃসৃত পানিতে পিচ্ছিল হচ্ছে সড়ক। এসব গাড়ি হাইওয়ে পুলিশ আটক করলেও টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যার কারণে চালকেরা ত্রিপল ব্যবহারের অনীহা দেখায়। এ বিষয়ে পুলিশকে কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশিষ্টজনেরা।

কক্সবাজারের টেকনাফ, পেকুয়া, চকরিয়া ও মহেশখালীতে উৎপাদিত শত শত মেট্রিক টন লবণ প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত অর্ধশতাধিক ট্রাকে করে সড়ক পথে পরিবহন করা হয়। নিয়ম না মেনে অপরিশোধিত লবণ বোঝাই ট্রাকগুলো পটিয়ার ইন্দ্রপুল পরিশোধনাগারসহ চট্টগ্রামের মাঝিরঘাট ও বিভিন্ন শিল্প মিলে নিয়ে যায়। এ সময় ট্রাক থেকে লবণাক্ত পানি পড়ে সড়ক পিচ্ছিল হয়ে যায়। এসব লবণবাহী ট্রাকে জিও ট্যাক্স (মোটা ত্রিপল) ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা মানছেন না। রাতের বেলা কুয়াশার কারণে লবণ মিশ্রিত পানি ও কাঁচা মাটি রাস্তায় আঠালো আস্তরণ তৈরি করে। ফলে গাড়ি ব্রেক করলেই পিছলে গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা ঘটে।

নতুন চালক ও ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বেশিরভাগ যাত্রীই পর্যটন নগরীর। দূর-দূরান্ত থেকে নতুন চালকেরা আসেন এ সড়কে। এ সড়কে রয়েছে বহু ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। এর মধ্যে শুধু লোহাগাড়ায় রয়েছে প্রায় ১৪টি বাঁক। এছাড়াও পটিয়া, চন্দনাইশের দোহাজারী বাজার, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়া, পদুয়া, আধুনগর, চুনতি, চকরিয়া, ঈদগাঁহ সহ বিভিন্ন এলাকায় বাঁক রয়েছে। মহাসড়কে ঘন ঘন বাঁকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা।

ভয়ংকর ‘জাঙ্গালিয়া'

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি ইউনিয়নের জাঙ্গালিয়া এলাকায়। জাঙ্গালিয়া সড়কের দুইপাশে ঘন বনাঞ্চল, বাঁক ও ঢালু রাস্তার কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পর্যটন নগরী কক্সবাজার আসেন পর্যটকরা। দূর–দূরান্ত থেকে আসা চালকদের এই সড়কের ব্যাপারে অভিজ্ঞতা না থাকাও দুর্ঘটনার অন্যতম একটি কারণ। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জাঙ্গালিয়া এলাকায় মাইক্রোবাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ১০ জন গুরুতর আহত হন।

গত বছরের ২১ ডিসেম্বর সকালে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এই এলাকায় দুর্ঘটনায় অপু সরকার নামে এক যুবক মারা যান। তার মোটরসাইকেলটি পিচ্ছিল সড়কে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে গেলে অজ্ঞাত একটি গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যায়। অপু ঢাকা থেকে বাইকার গ্রুপের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছিলেন।

২০২৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি জাঙ্গালিয়ার পাশেই রাত ১টার দিকে শ্যামলী বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ৮ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছে দুই গাড়ির চালক ও হেলপার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দীর্ঘদিন চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। একই বছর ১০ ফেব্রুয়ারি এসি বাস ও ট্রাকের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহত অবস্থায় ৭ জনকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সড়ক দুর্ঘটনার ৫৩ শতাংশ ঘটে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে। আর ৩৭ শতাংশ চালকদের বেপরোয়া মনোভাবের কারণে। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ দুর্ঘটনা ঘটে চালকের বেপরোয়া মনোভাব ও গতির কারণে। আর ১০ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনার জন্য প্রতিযোগিতার মনোভাব ও পথযাত্রীর অসাবধানতা দায়ী। জাতীয় মহাসড়কগুলোয় সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৫০ শতাংশই ঘটে থাকে। সড়কে ফিটনেসবিহীন অনেক গাড়ি চলমান, যা সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অনেকাংশে দায়ী। সড়ক দুর্ঘটনার অন্য কারণগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে- ট্রাফিকবিধি লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত বোঝাই ও চালকদের ওভারটেকিং, বিরতিবিহীন লম্বা সময় ধরে গাড়ি চালানো, ছোট গাড়ির চালক বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে সতর্কতার অভাব, দূরপাল্লার সড়ক ও জনবহুল এলাকায় ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন এবং সড়কের বেহাল অবস্থা।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের এই দুরবস্থায় অভিযোগ দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে বলে জানিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। তারা বলছে, খোলা ট্রাকে পরিবহনের সময় লবণ পানি নিঃসৃত হয়ে সরাসরি মহাসড়কের ওপর গিয়ে পড়ায় বিটুমিনের কার্পেটিংয়ের প্রলেপও উঠে যাচ্ছে। বিটুমিনাসের নিচের স্তর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে সড়কের আয়ুষ্কাল কমে যাচ্ছে। এ নিয়ে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে পত্র দেওয়া হলেও কোনও কাজ হচ্ছে না।

লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রথমত বলতে চাই বেপরোয়া গাড়ি চালাচ্ছে। দ্বিতীয়ত লবণ পানি পড়ে রাস্তা পিচ্ছিল হয়ে যাচ্ছে। যে মুহূর্তে ব্রেক করে, সাথে সাথে দুর্ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি এখানে যে রোড ইঞ্জিনিয়ারিং ও বাঁক আছে, সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা দরকার।

দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুভরঞ্জন চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকার যে স্থানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সেটি অত্যন্ত ঢালু। ভোরে সড়কে যানবাহন কম থাকে। ওই সময় ফ্রি রুটে যানবাহনের গতি থাকে বেশি। যেসব চালক নতুন তাদের এ সড়ক সম্পর্কে ধারণা থাকে না। যে কারণে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, জাঙ্গালিয়া এলাকায় সড়ক যে ঢালু অবস্থায় রয়েছে তা সংস্কার প্রয়োজন। এত দুর্ঘটনার পরও সড়ক ও জনপদ বিভাগের এ বিষয়ে কোনও তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ সড়ক বিভাগে অতিরিক্ত দায়িত্বরত নির্বাহী প্রকৌশলী রোকন উদ্দিন খালেদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, লবণ পানির কারণে সড়ক পিচ্ছিল থাকে। এছাড়াও সকালে কুয়াশার কারণেও ভেজা থাকে সড়ক। এসব কিছুকে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়াও যানবাহনের তুলনায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি সরু। এ কারণেও দুর্ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি প্রশস্ত করার একটি প্রকল্প রয়েছে। প্রকল্পটি বর্তমানে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মধ্যে আছে। সড়ক প্রশস্ত করা গেলে দুর্ঘটনা কমে আসবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩২৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৮, ২০২৫ 
বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।