ঢাকা, বুধবার, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ০২ জিলকদ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০:৪৯, এপ্রিল ৩০, ২০২৫
হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ...

চট্টগ্রাম: বন্দরনগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক প্রযুক্তির অভাব এখন প্রকট। ৬০ লাখ মানুষের এই শহরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ চলছে পুলিশের বাঁশির ফুঁ আর হাতের ইশারায়।

অধিকাংশ সড়ক মোড়ে নেই স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল বাতি।  

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ৮৫০ জন ট্রাফিক সদস্য সামলাচ্ছেন এই গুরুদায়িত্ব।

১৯৯০ এর দশকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের ৩৯টি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি বসিয়েছিল। কিন্তু ২০০৪ সাল নাগাদ এই সিস্টেম পুরোপুরি বিকল হয়ে পড়ে। এরপর ২০১৪ সালে ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং ২০১৯ সালে টাইগার পাস, আগ্রাবাদ মোড়, দুই নম্বর গেইট, ওয়াসা মোড়সহ কয়েকটি এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে বৈদ্যুতিক সিগন্যাল চালু করা হয়। কিন্তু এই ব্যবস্থাও ছয় মাসের মাথায় অকেজো হয়ে পড়ে। বর্তমানে এসব স্থানে সিগন্যাল লাইটের পোস্ট থাকলেও তা কাজ করে না, নেই সুইচিং ব্যবস্থা কিংবা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।  

কাজীর দেউড়ি মোড়ে দেখা গেছে, সিগন্যাল বাতি থাকলেও তা অকার্যকর। মোড়টিতে দুইজন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যকে বাঁশিতে ফুঁ দিয়ে এবং হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে। একই অবস্থা নিউ মার্কেট, জিইসি, চকবাজার, অক্সিজেনসহ প্রায় সব এলাকাতেই।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার (বন্দর) কবির আহমেদ বলেন, শহরের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক সিগন্যাল সিস্টেম বসানো সিটি করপোরেশনের কাজ। আমরা যদি তা হাতে পাই, তখন ব্যবহার করে জনগণকে সেবা দিতে পারব। কিন্তু সিটি করপোরেশন যদি এটি সেটআপ না করে, তবে পুলিশের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়।

তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম শহরে যেসব রাস্তা রয়েছে, তা এই শহরের জনসংখ্যার তুলনায় অনেক কম। ব্যক্তিগত গাড়ি, পণ্যবাহী ট্রাক, রিকশা, সিএনজি অটোরিকশাসহ যাতায়াতের চাপ এখন অনেক বেশি। তার ওপর রাস্তায় বছরের পর বছর খোঁড়াখুঁড়ি ও সংস্কার কাজ চলতেই থাকে, যার কারণে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সমস্যা হচ্ছে।

অতিরিক্ত উপ পুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) মাহমুদা বেগম বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রাম ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছেন মাত্র ৮৫০ জন সদস্য। জনবল সংকট নিয়েই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে। শহরে এখনো কোন স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা নেই, ফলে আমাদের হাতে ইশারার ওপরই ভরসা করতে হচ্ছে।

কাজীর দেউড়ি মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্য মো. বদিউল বলেন, ‘আমরা সিগন্যাল বাতি ছাড়াই হাতের ইশারায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করি। গরমে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কাজ করতে খুব কষ্ট হয়’।

স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল বাতি না থাকায় যানজট ও বিশৃঙ্খলার পাশাপাশি দুর্ঘটনাও বাড়ছে। পথচারী, রোগী, শিশু, শিক্ষার্থী, প্রবীণ-সবাইকেই পাড়ি দিতে হয় ব্যস্ত সড়ক, নিরাপদ পারাপারের ব্যবস্থা নেই অধিকাংশ মোড়ে।

গত ২০ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেনের কাছে ‘স্মার্ট ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ বিষয়ে প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেছে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বিআইটি। প্রস্তাবিত সিস্টেমে থাকবে স্বয়ংক্রিয় ট্রাফিক সিগন্যাল, সিসিটিভি নজরদারি, ডিজিটাল জরিমানার ব্যবস্থা, মুখ শনাক্তকারী প্রযুক্তি এবং পথচারীদের জন্য জেব্রা ক্রসিংয়ের সঙ্গে সংযুক্ত পুশ বাটন ব্যবস্থা।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ রাশিদুল হাসান বলেন, নগরায়নের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিকায়ন হয়েছে, কিন্তু সিগন্যাল ব্যবস্থার আধুনিকায়নে ঘাটতি রয়ে গেছে। আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম অত্যাবশ্যক। একসময় চট্টগ্রামে সিগন্যালিং ব্যবস্থা শুরু হয়েছিল, কিন্তু নানা কারণে তা বন্ধ হয়ে যাওয়া দুঃখজনক। এখন সময় এসেছে নতুনভাবে প্রযুক্তিনির্ভর ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়ার।

বাংলাদেশ সময়: ১০৩৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ৩০, ২০২৫
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।