ঢাকা, মঙ্গলবার, ২২ বৈশাখ ১৪৩২, ০৬ মে ২০২৫, ০৮ জিলকদ ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

মানববন্ধন থেকে তুলে নিয়ে মামলা-বহিষ্কার, ৩ বছর পর মুক্তি পেলেন চবি শিক্ষার্থী

মুহাম্মাদ আজহার, ইউনিভার্সিটি করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯:১৯, মে ৫, ২০২৫
মানববন্ধন থেকে তুলে নিয়ে মামলা-বহিষ্কার, ৩ বছর পর মুক্তি পেলেন চবি শিক্ষার্থী ডানে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, বামে অভিযুক্ত শিক্ষক।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: দীর্ঘ ৩ বছর পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) প্রশাসনের দায়ের করা সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন সোহাগ।  

রোববার (৪ মে) এ মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পুরো ঘটনা তুলে ধরেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষার্থী।

 

জোবায়ের হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের সীমাহীন জুলুমের বিরুদ্ধে অনলাইন ও অফলাইনে সোচ্চার থাকা, অন্যায়ের প্রতিবাদ করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকারের প্রশ্নে আপোষহীন লেখালেখি ও আন্দোলনের কারণে আমি চবি কর্তৃপক্ষের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হই।  

‘তারই ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ২৪ আগস্ট সিএনজি অটোরিকশা চালকদের সিন্ডিকেট, অন্যায্য ভাড়া ও ক্যাম্পাসে ছাত্রদের মারধরের প্রতিবাদ এবং চক্রাকার বাস চালুর দাবিতে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন থেকে তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আইন বিভাগের শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ আমাকে ধরে নিয়ে যায়।

এরপর ২ ঘণ্টার মতো জিজ্ঞাসাবাদ ও দীর্ঘ ১০ ঘণ্টা প্রক্টর অফিসে আটকে রেখে মানসিকভাবে নির্যাতন ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশাসন আমার বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিল। এরপর পুলিশ দিয়ে আমাকে গ্রেপ্তার করানো হয়। দীর্ঘ তিন মাস কারাবরণ ও রিমান্ডের নামে পুলিশের অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে আমি জামিনে মুক্তি পাই’।  

জোবায়ের হোসাইন আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখানেই ক্ষান্ত হয়নি। এরপর আমাকে দুই বছরের জন্য বহিষ্কারও করা হয়। এ যেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’। তাদের এসব জুলুম আমার ক্যারিয়ার ও জীবনকে অসহনীয় করে তোলে। আমার পরিবারেরও তখন খুব কষ্টে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। অবশেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর স্বৈরাচারের দিন শেষ হয়েছে। আমি নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি।

এছাড়া নানান অভিযোগে ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট চবি সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আইন বিভাগের শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ’র অব্যাহতির দাবি জানান আইন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা, গণহত্যাকে সমর্থন, নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি, মাদকের আসর বসানোসহ বেশকিছু অভিযোগ তুলে ধরেন ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে।  

এদিকে রোববার (০৪ মে) সকালে চবির আইন অনুষদের একে খান অডিটোরিয়ামে ‘ন্যায়বিচারের ভবিষ্যৎ পুনঃকল্পনা’ শীর্ষক আইন বক্তৃতা ২০২৫ অনুষ্ঠানে অংশ নিতে দেখা যায় অভিযুক্ত শিক্ষককে। যেখানে মূল বক্তা ছিলেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ। আইন অনুষদ ও একে খান ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই  অনুষ্ঠানের একটি গ্রুপ ছবিতে বিচারপতির পাশেই  বিতর্কিত শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ’র ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। বিষয়টি সামনে আসার পর বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দেন শিক্ষার্থীরা।  

অভিযোগের বিষয়ে জানতে শিক্ষক হাসান মুহাম্মদ রোমান শুভ’র সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।

আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. এম জাফর উল্লাহ তালুকদার বাংলানিউজকে বলেন, এটা ছিলো আইন অনুষদের একটা প্রোগ্রাম। এছাড়া বিচারপতি আসায় সব শিক্ষকরাই অংশগ্রহণ করেছেন। শিক্ষক রোমান শুভও সেই হিসেবে এসেছেন হয়তো।  

অভিযুক্ত শিক্ষক এখন কোনো ক্লাস নেন কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, রোমান শুভ শিক্ষা ছুটির জন্য আবেদন করেছেন। বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন। এ অবস্থায় কোর্স বন্টন করা হয় না। সেই হিসেবে নতুন সেশনে এখন ক্লাস নেওয়ার সুযোগ থাকার কথা না। এই বিষয়টি বিভাগের চেয়ারম্যান দেখেন।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, আমি, উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য স্যার আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে গিয়েছি। ওখানে যাওয়ার পর ওই শিক্ষকের উপস্থিতির বিষয়টি বিভাগের সভাপতিকে জানিয়েছি। এছাড়া তার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তদন্ত কমিটি সেগুলোর কাজ করছে।

চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমাদেরও চোখে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাকে বেশ কয়েকবার চিঠি পাঠিয়েছি। প্রতিবার তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করে চিঠির উত্তর দিয়েছেন। পরবর্তীতে আমরা তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এক সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি। প্রতিবেদন পাওয়ার পর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০৯ ঘণ্টা, মে ০৫, ২০২৫ 
এমএ/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।