চট্টগ্রাম: শুধু চট্টগ্রাম বন্দর ঘিরেই আগামী তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে তিন বিলিয়ন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আসছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।
আশিক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে যারা ব্যবসা করেন, তারা অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্যবসা করেন।
আমার কাছে গতকালও চাইনিজ ইনভেস্টর এসেছে। আরও তিনজন চাইনিজ ইনভেস্টর বাংলাদেশে আসার কথা বলেছেন। উনাদের প্রত্যাশা হচ্ছে যে, আমি উনাদের সঙ্গে কন্ট্রাক্ট সাইন করবো আর ছয় থেকে বারো মাসের মধ্যে উনারা কারখানা চালু করবেন। এখন গ্যাস, ইলেকট্রিসিটি, রাস্তা- এসবের ব্যবস্থা এর মধ্যে করে দেওয়ার তো অপরচুনিটি আমার কাছে নেই। আমার কাছে ইনভেস্টর রেডি, কিন্তু আমার অপরচুনিটি রেডি না আনফরচুনেটলি। আমাদের যত দ্রুত সম্ভব, এই সমস্যাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতে হবে।
চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্প পরিদর্শনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমি লালদিয়া টার্মিনাল এলাকায় গিয়েছি, সেখানে ৮০০ মিলিয়ন ডলার এফডিআই আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তারপর আমরা বে-টার্মিনালে গেলাম। সেখানে দুইটা অপারেটরের কথা বলা হচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের এক বিলিয়ন ডলার করে ইনভেস্ট করার প্ল্যান আছে। এরপর আমরা এনসিটিতে গিয়েছিলাম, সেখানেও ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো কথাবার্তা হচ্ছে। এই যে আমরা তিন বিলিয়ন ডলারের কথা বলছি, এটা হয়তো নেক্সট তিন থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে আসতে শুরু করবে, যদি আমরা সবকিছু সাকসেসফুলি করতে পারি। আমি তিন বিলিয়ন ডলারের ইনভেস্টমেন্ট পাচ্ছি শুধু পোর্টে। এছাড়া কর্মসংস্থানের জন্যও এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি পোর্টগুলো করতে পারি, শুধু বে-টার্মিনালেই ২৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হবে।
তিনি বলেন, ‘শ্রীলংকায় টোটাল পোর্ট আছে সাতটা। তাদের যে হ্যান্ডলিং ক্যাপাসিটি সেভেন পয়েন্ট সেভেন এইট মিলিয়ন টিইইউস। বাংলাদেশের ক্যাপাসিটি এখন ওয়ান পয়েন্ট থ্রির কাছাকাছি। ভিয়েতনামে টোটাল পোর্ট আছে ৪৪টা। তাদের ক্যাপাসিটি ৪৭ মিলিয়ন টিইইউস। আমরা বলি যে, আমরা ভিয়েতনামের সঙ্গে কম্পিটিশন করবো, কিন্তু তাদের ক্যাপাসিটি আমাদের চেয়ে ২০ গুণ বেশি। কম্বোডিয়া খুবই ছোট্ট একটা দেশ, তাদের পোর্ট হচ্ছে ২৬টা।
আশিক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের মূলনীতি হলো, আমাদের দেশে বিশ্বের সেরা পরিচালিত বন্দর থাকতে হবে। আমাদের তো আসলে ৪৪টা বন্দর করার কোনো সুযোগ নেই। আমাদের হয়তো ৩টা, ৫টা, ৭টা- এ কয়টা পোর্টের মধ্যে আমাদের থাকতে হবে। আমাদের যেহেতু জায়গা কম। তবে আমাদের মাস্টাপ্ল্যান আছে যে, আমরা সেভেন পয়েন্ট এইট মিলিয়ন টিইউসের দিকে চলে যাব, ৫-৭ বছরের মধ্যে, যদি আমাদের সব প্রজেক্ট সাকসেসফুল হয়, তাহলে আমরা শ্রীলংকার কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছাব। যেহেতু ল্যান্ড লিমিটেড, যেহেতু আমাদের অপশনস লিমিটেড, তাহলে আমাদের বিশ্বের মধ্যে মোর অ্যাফেক্টিভ ও বেস্ট ম্যানেজমেন্ট পোর্ট গড়ে তুলতে হবে। তাহলে আমাদের ঠিকভাবে প্রতিযোগিতা যেন করতে পারি, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। ’
চট্টগ্রামকে ঘিরে বিশাল সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা এখন যে ম্যানুফ্যাকচার করি, সেটা আসলে আমাদের ক্যাপাসিটি বা ক্যাপাবিলিটির তুলনায় কিছুই না। চট্টগ্রামে আমরা চাইনিজ একটা ইকোনমিক জোনের ঘোষণা দিয়েছি। আনোয়ারাতে একটা কোরিয়ান ইপিজেড আছে। সেখানে কিছু প্রবলেম ছিল, সেগুলো আমরা সমাধান করেছি। মীরসরাইতে আমাদের ন্যাশনাল ইকোনমিক জোন যেটা আছে, আমরা মনে করছি যে বাংলাদেশে যত ইকোনমিক জোন আছে, তার মধ্যে এটা হচ্ছে ফ্ল্যাগশিপ ইকোনমিক জোন। ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের লং টার্ম ভিশন যেটা আমাদের, সেটা কিন্তু পুরোটাই চট্টগ্রামকে ঘিরে।
‘দুদিন আগে আমরা একটা ন্যাশনাল কমিটি গঠন করেছি, ফ্রি ট্রেড জোনের জন্য। তো সেই ন্যাশনাল কমিটি যে জায়গাগুলো ফ্রি ট্রেড জোনের জন্য দেখছে, যে দুই-তিনটা জায়গা দেখা হয়েছে, প্রত্যেকটিই চট্টগ্রামে। তো, ফ্রি জোনটাও চট্টগ্রামের কোনো একটা জায়গায় হবে। তো, আমরা বলছি যে প্রোডাকশনের মেজরিটি হবে চট্টগ্রামে। তাহলে এক্সপোর্ট এবং ইম্পোর্ট- এ দুটির কানেকটিভিটিও আমাদের চট্টগ্রামকে ঘিরেই করতে হবে। অবশ্য মোংলা পোর্ট আছে, প্রাইমারি কানেকটিভিটি অব বাংলাদেশ, কিন্তু এনটায়ার কানেকটিভিটিটা হবে চট্টগ্রাম।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মো. শফিকুল ইসলাম বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ও ভবিষ্যতের চাহিদার কথা মাথায় রেখে, বাংলাদেশকে গ্লোবাল ফ্যাক্টরি বানাতে হবে যাতে বিদেশিরা বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে পারে। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম বন্দরের পণ্য সরবরাহ আরো দ্রুত সময়ে দিতে হবে যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ে। চট্টগ্রাম বন্দরকে পর্যাপ্ত আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন ও সম্পূর্ণ অটোমেশনের আওতায় আনতে হবে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এসএম মনিরুজ্জামানের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, বিভাগীয় কমিশনার ড. মো. জিয়াউদ্দীন, সরকারি কর্মকর্তা এবং উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪০ ঘণ্টা, মে ৮, ২০২৫
এআর/পিডি/টিসি