চট্টগ্রাম: অযৌক্তিক করের বোঝা ও নীতিগত সহায়তার অভাবে দেশের সিমেন্ট শিল্প অস্তিত্ব সংকটের মুখে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আমিরুল হক।
সম্প্রতি বাংলানিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দায় অনেক প্রতিকূলতার মধ্যে সিমেন্ট কোম্পানিগুলো লোকসানের মুখে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার আমদানির ওপর প্রায় ২ শতাংশ অগ্রীম আয়কর (এআইটি) আরোপ করা হয়েছে। কর কর্মকর্তারা কাঁচামালের অতিরিক্ত দামে শুল্কায়ন করেন, ফলে অসম চাপ তৈরি হচ্ছে এ শিল্পে।
ধরুন, প্রতি টন ক্লিংকার ৪৫ বা ৪৭ ডলারে কেনা হয়, কর কর্মকর্তারা প্রতি টন ৫২ দশমিক ৫ ডলার ধরে এআইটি নির্ধারণ করেছেন। স্ল্যাগের ওপর আরও ৩ শতাংশ এআইটি আরোপ করা হয়। প্রতি টন ৩০ ডলারে শুল্কায়ন করা হয় যেখানে প্রকৃত মূল্য ১৯ ডলার। চুনাপাথর আমদানির ওপর ৫ শতাংশ এআইটি, ফ্লাই অ্যাশের ওপর ৩ শতাংশ এবং জিপসামের ওপর ৫ শতাংশ। এই বৈষম্য কোম্পানিগুলোকে বেশি অগ্রীম কর দিতে বাধ্য করে, যা তাদের নগদ প্রবাহ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে।
যদি আমরা (সিমেন্ট প্রস্তুতকারক) আন্ডার-ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করি, তাহলে আমাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। যোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, অগ্রীম কর পরিশোধের পর, একজন উৎপাদক ৯০ দিন পরে পণ্য বিক্রি করে, যখন তাকে বিনিয়োগকৃত অর্থের ওপর সুদ দিতে হয়। দুঃখের বিষয় হলো, যখন একজন সিমেন্ট প্রস্তুতকারক আয়কর দেন তখন যথাযথ সতর্কতার সাথে ফেরত বা সমন্বয় করা হয় না। যদিও আমদানি পর্যায়ে অগ্রীম কর রয়েছে, বিক্রয় পর্যায়েও এআইটি রয়েছে। এটি দ্বিগুণ কর।
সিমেন্ট শিল্পে কেউ লাভ করছে না দাবি করে এ শিল্পপতি বলেন, আমরা সরকার, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং সংশ্লিষ্টদের বিষয়গুলো বলে আসছি। সম্প্রতি 'বৈষম্যমুক্ত' বাংলাদেশের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি কিন্তু কর প্রশাসনের কেউই মনোযোগ দেয়নি -- কেউ আমাদের কথা শোনেনি।
মোহাম্মদ আমিরুল হক বলেন, বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশ দুই-তিন দশকের মধ্যে আমদানিকারক দেশ থেকে সিমেন্ট উৎপাদনকারী দেশে পরিণত হয়েছে। ২০০০ সাল থেকে বাংলাদেশ আর সিমেন্ট আমদানিকারক দেশ নয়।
শাহ সিমেন্ট, প্রিমিয়ার, বসুন্ধরা, ক্রাউন, সেভেন রিংস, মেঘনা, আকিজের মতো বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা নিরলস প্রচেষ্টায় এই খাতে বিনিয়োগ করে আসছে। আমদানিমুখী খাতকে রপ্তানিমুখী খাতে পরিণত করার জন্য রাষ্ট্রকে তাদের কৃতিত্ব স্বীকার করতে হবে। দেশের সিমেন্ট খাতে আনুমানিক ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। যা একটি মূলধন-নিবিড় শিল্প।
তিনি বলেন, অনেক কোম্পানি লাভের জন্য নয় বরং ঋণ, কর্মচারীদের প্রতিশ্রুতি এবং চুক্তিগত বাধ্যবাধকতার কারণে তাদের কারখানা চালিয়ে যাচ্ছেন। এর অর্থ হলো এত বড় শিল্প পরিচালনার পর, যদি কেউ লাভ করতে না পারে, তাহলে কেউ আবার এই শিল্পে বিনিয়োগ করতে চাইবে না।
দেশের সামগ্রিক ব্যবসায়িক পরিবেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলোর সাথে তুলনা করলে, আমাদের ব্যবসার খরচ অনেক বেশি। যখন স্থানীয় বাজার অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক, তখন এই খরচ ভোক্তাদের কাছে হস্তান্তর করা প্রায় অসম্ভব।
এআর/টিসি