চট্টগ্রামের বাস কাউন্টার থেকে: পুলিশী আশ্বাস আর নিরাপত্তার পরও ভয় কাটিয়ে উঠতে পারছে না চট্টগ্রামের বাস মালিক-শ্রমিকরা। ফলে যাত্রী থাকলেও মহাসড়কে মিলছে না পর্যাপ্ত গাড়ি।
সম্প্রতি নগর গোয়েন্দা পুলিশের এক বিশেষ প্রতিবেদনেও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল আশঙ্কাজনক হারে কমে যাওয়ার বিষয়টি উঠে এসেছে।
রোববার সকালে নগরীর বিভিন্ন এলাকার বাস কাউন্টারগুলোতে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কাউন্টারই বন্ধ।
নগরীর এ কে খান এলাকায় শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারে কথা হয় হালিশহর থেকে আসা যাত্রী গোলাম মাওলার সঙ্গে। তিনি জানান, পারিবারিক একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাস কাউন্টারে এসেছিলেন। কিন্তু কোন কাউন্টারেই টিকেট পাননি।
“ঝুঁকির পরও চিন্তা করছিলাম ঢাকায় যাবো, কিন্তু বাসই তো পেলাম না। এখন কি আর করা, ফিরে যেতে হবে। সরকার এতো আশ্বাস দিয়ে কি লাভ হল?”
একই এলাকার হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের সামনে অপেক্ষারত অজিত দে নামে এক যাত্রী জানান, চাকরির খোঁজে তিনি খুলনা থেকে চট্টগ্রাম এসেছিলেন। কিন্তু অবরোধের কারণে ফিরতে পারছেন না।
“সন্ধ্যায় টিকেট পাওয়া যাবে বলেছে। তাই কাউন্টারের সামনে অপেক্ষা করছি। ”
বাস না ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে এ কে খান এলাকার শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. আজাদ জানান, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দেওয়া হলেও তারা পরিস্থিতি আরও পর্যবেক্ষণ করে গাড়ি ছাড়বেন। আপাতত, সন্ধ্যা ও রাতে গাড়ি চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
নগরীর গরীবুল্লাহ শাহ’র মাজার এলাকার সৌদিয়া পরিবহনের কাউন্টার ব্যবস্থাপক কাজল ধর জানান, যতই আশ্বাস দিক, অবরোধের মধ্যে গাড়ি চালানোর লোক পাওয়াই তো কষ্টকর। তারপরও শুক্রবার থেকে আমরা সীমিত পরিসরে কিছু বাস চালাচ্ছি।
তিনি বলেন, সকালে কোন কাউন্টার থেকেই টিকেট দেওয়া হচ্ছে না। বিকাল তিনটা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত এই এলাকার কাউন্টারগুলো থেকে গড়ে ২০/৩০টি বাস ছেড়ে যাচ্ছে।
ঈগল পরিবহনের টিকেট বিক্রেতা মো. আলী বাংলানিউজকে জানান, নিরাপত্তার স্বার্থে দিনের বেশীরভাগ সময় বাস চালানো বন্ধ রাখা হয়েছে। বিকেলে যাত্রী বিবেচনায় বাস ছাড়া হবে।
বাস না ছাড়ার কারণ জানতে চাইলে ঈগল পরিবহনের সহকারী মো. হারুন বলেন, ‘গাড়ি চালামু ঠিক আছে, গাড়ির ক্ষতিপুরণ না হয় সরকার দিলো, জানের ক্ষতিপূরণ কে দিবে? আমাদের এসবে কোন বিশ্বাস নেই। ’
সীতাকুণ্ডের বার আউলিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ওসি সৈয়দ মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মূলত ছোট-খাট যানবাহন ও পণ্যবাহী ট্রাকই বেশী চলাচল করেছে।
“পুলিশের পক্ষ থেকে সব ধরণের নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। পরিবহন মালিকরা সকাল-বিকাল যখন নিরাপত্তা চায়, তখনই পুলিশ সহযোগিতা করছে। ”
নগর পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের বিশেষ শাখার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে অবরোধ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রতিদিন গড়ে ১০ শতাংশ হারে যানবাহন চলাচল করছে।
ভোর ছয়টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ গাড়ি মহাসড়কে থাকলেও এরপর বিকাল চারটা পর্যন্ত তা একেবারেই কমে যায়। তবে, বিকালের পর থেকে গাড়ি চলাচল ক্রমান্বয়ে বাড়ে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১১, ২০১৫