চট্টগ্রাম: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান যেন ঠিক থাকে। রোগী মারা ডাক্তার যেন তৈরি না হয়।
তিনি বলেন, চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করার জন্য নতুন ডাক্তার হবে। তারা যাতে যথাযথভাবে মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করে সত্যিকার মানুষের সেবা করার মনোভাব নিয়ে যেন নিজেদেরকে তারা ভবিষ্যৎ ডাক্তার হিসেবে গড়ে তোলে।
“ডাক্তার হয়ে শুধু পয়সা কামানো না, নিজের ভাগ্য গড়া না, মানুষের সেবা করা। এটা কিন্তু সেবামূলক কাজ। এ কথাটা সবসময় প্রত্যকটা চিকিৎসককে মনে রাখতে হবে। মানুষের সেবা করাটাই সবচেয়ে বড় কাজ। ’
শনিবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৫টি আর্মি মেডিক্যাল কলেজসহ ১১টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
এসময় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রাম আর্মি মেডিক্যাল কলেজেরও উদ্বোধন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাড়িয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ কিভাবে চলবে সে দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। মানুষ কিভাবে উন্নত জীবনযাপন করবে সে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করেছিলেন। তার মধ্যে স্বাস্থ্য সেবা ছিল অন্যতম। সেদিন বাংলাদেশের মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা স্পষ্ঠভাবে বলেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে বাংলাদেশের জনগণ বহু আগেই দারিদ্রের হাত থেকে মুক্তি পেত। বাংলাদেশের জনগণ চিকিৎসা সেবা পেত। বাংলাদেশের জনগণ উন্নত জীবন পেত। বাংলাদেশ বিশ্বে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারতো। আমাদের দুর্ভাগ্য ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে স্ব পরিবারে হত্যা করা হয়। এরপর জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। মুক্তিযোদ্ধাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। রাজনৈতিক নেতাদের উপর অমানবিক অত্যাচার নির্যাতন চলে। বাংলাদেশ যে লক্ষ্য নিয়ে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল তার থেকে অনেক পিছিয়ে যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসা সেবা মানুষের মৌলিক অধিকার। মানুষ ধুকে ধুকে মারা যাবে বা মায়ের কোলে কোন শিশু রোগে ধুকে ধুকে মরবে কোন ওষুধ পাবে না চিকিৎসা পাবে না এটা অন্তত স্বাধীন বাংলাদেশে হতে পারে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে প্রথম ক্ষমতায় আসার পর প্রতি ছয় হাজার জনগোষ্ঠীর জন্য একটি করে ক্লিনিক তৈরি এবং সেখানে চিকিৎসা সেবা দেওয়া লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করি। এ চিন্তা থেকে আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক বাস্তবায়ন শুরু করি। ১১ হাজার ভবন নির্মাণ করি। চার হাজার ভবন চালু করি। মানুষ সেবা পেতে শুরু করে। বাংলাদেশের মানুষের দুর্ভাগ্য হলো ২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট যখন ক্ষমতায় আসলো সমস্ত কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো বন্ধ করে দেয়। মানুষ সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাত বছর পর ২০০৯ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন আমরা উদ্যোগ নেই, কিভাবে মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা যায়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো আবার চালু করি। কমিউনিটি ক্লিনিক এবং ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রায় ৩০ প্রকারের ওষুধ মানুষকে বিনামূল্যে দিচ্ছি।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য সেবা দিতে গেলে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন হচ্ছে ডাক্তার এবং নার্স। আমাদের শুধু ডিপ্লোমা নার্স ছিল। এখন গ্রাজুয়েট নার্স যাতে তৈরি হয় সেটা চালু করেছি। নার্সের মর্যাদাও বৃদ্ধি করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ডাক্তার সংখ্যা খুবই সীমিত। একেকজন ডাক্তারের উপর খুবই চাপ পড়ে। ডাক্তার তৈরি করতে হলে সব থেকে আগে দরকার আরও অনেক বেশি মেডিক্যাল কলেজ। বাংলাদেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে।
শেখ হাসিনা বলেন, এবার চিন্তা করেছি, আরও দুটো মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় করবো। একটা চট্টগ্রাম অন্যটি রাজশাহী। লক্ষ্য আছে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগীয় শহরে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার। সাতটি বিভাগ আছে। আরও একটা বিভাগ বাড়ানোর ইচ্ছে আমাদের আছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরও বেশি চিকিৎসক আমাদের প্রয়োজন। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ১১টি মেডিক্যাল কলেজ আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি। সারা বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যাও বাড়ানো হচ্ছে। আমাদের লক্ষ্য প্রত্যেকটা জেলায় একটা করে বিশ্ববিদ্যালয় হোক। যাতে দেশের ছেলে মেয়েরা নিজের এলাকায় বসে যাতে পড়াশোনা করতে পারে। একদিকে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। অপরদিকে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ হবে। ইতিমধ্যে প্রায় ১২হাজারের কাছাকাছি ডাক্তার নিয়োগ দিয়েছি। যে পরিমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন সেটা নেই। মেডিক্যাল কলেজ দিকটা খুবই অবহেলিত। আমরা এটা আর অবহেলিত রাখতে চাই না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশে আরো সরকারি মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এছাড়া ইতোমধ্যে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়েছে। এর সঙ্গে শিগগিরই আরো ৬টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ চালু হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করবো, মেডিক্যাল কলেজগুলোর মান যেন ঠিক থাকে।
তিনি বলেন, দেশে ওষুধ প্রস্তুত করছি। এর মান অত্যন্ত উন্নত। সে মানটাও যাতে সবসময় বজায় থাকে সেটাও লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশের মানুষ যাতে খুব অল্প পয়সায় ওষুধ পাই সেটাও দেখতে হবে।
ভিডিও কনফারেন্সে চট্টগ্রাম থেকে যোগ দেন পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। তিনি বলেন,‘নতুন আরও একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠা চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য সেবার প্রয়োজনীয়তা অনেকখানি পূরণ করবে । ’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মন্ত্রী বলেন,‘২০০৯ সালের নির্বাচনের আগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন চট্টগ্রামের দায়িত্ব আপনি নিবেন। চট্টগ্রামের ব্যাপক উন্নয়ন প্রমাণ করে আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন। ’
অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল সাব্বির আহমেদ বলেন,‘আর্মি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে চট্টগ্রামে উচ্চতর শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এখানে শিক্ষা অর্জনের পর শিক্ষার্থীরা মানব সেবায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। এখানে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমাদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা ও অধ্যবসায় বজায় থাকবে। ভবিষ্যতে এ মেডিক্যাল কলেজকে বিশ্বমানের চিকিৎসা শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ, সাংসদ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভি, মোস্তাফিজুর রহমান ও সাবিহা মুসা এবং নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম মো. জাহাঙ্গীর। ও আর্মি মেডিক্যাল কলেজ চট্টগ্রামের অধ্যক্ষ ইমাদউদ্দিন।
চট্টগ্রাম সেনানিবাসের ভেতরে সিএমএইচ (সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল) সংলগ্ন এলাকায় প্রাথমিকভাবে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হয়েছে এ মেডিকেল কলেজের যাত্রা। হাটহাজারী-ভাটিয়ারি লিংক রোডের পাশে খিল্লাপাড়া এলাকায় স্থায়ী ক্যাম্পাস ও হাসপাতাল নির্মাণ করা
এছাড়া ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দেড়’শ জনে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। ৩০ একর জায়গার উপর নির্মিত এ কলেজের সঙ্গে থাকছে ৫০০ শয্যার হাসপাতালও।
প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে চট্টগ্রামের আর্মি মেডিক্যাল কলেজসহ একইসঙ্গে ১১টি মেডিক্যাল কলেজ উদ্বোধন করেছেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩৮ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫
** চট্টগ্রামে আর্মি মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু