চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম কলেজ ক্যাম্পাসে রক্ত ঢেলে আট দফা দাবি আদায়ের চেষ্টা করেছে ছাত্রলীগ। শনিবার দুপুর একটার দিকে কলেজের অধ্যক্ষ কার্যালয়ের প্রবেশপথে রক্ত ঢেলে কলেজ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ছাত্রলীগ।
নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি এ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দেন। সংগঠনের প্রায় ২৯জন নেতাকর্মীর রক্ত সংগ্রহ করে এ কর্মসূচি পালন করে ছাত্রলীগ।
কর্মসূচি পালনের বিষয়ে নুরুল আজিম রনি বাংলানিউজকে বলেন, ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দাবিতে আমরা নিজেদের রক্ত দিলাম। এর মাধ্যমে আমরা কলেজ কর্তৃপক্ষকে জানাতে চাই কলেজকে সশস্ত্র শিবির ক্যাডারমুক্ত করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা রক্তও দিতে পারি। ’
কলেজ সূত্র জানায়, আট দফা দাবিতে সকাল সাড়ে দশটা থেকেই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে। এসময় তারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মিছিল করে।
দুপুর ১২টার দিকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সমাবেশে বক্তব্যদানকালে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি।
পরে দুপুর একটার দিকে অধ্যক্ষের কার্যালয়ের প্রবেশপথে রক্ত ঢেলে দাবি আদায়ের চেষ্টা চালায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এসময় কার্যালয়ের বাইরে চত্বরে রক্ত দিয়ে লেখা হয় ‘জয় বাংলা’।
এর আগে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নুরুল আজিম রনির নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা কলেজের অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আট দফা দাবিসহ বিভিন্ন বিষয়ে অধ্যক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আট দফা দাবি মেনে নিতে অনুরোধ করেন নুরুল আজিম রনি।
এসময় অধ্যক্ষ জেসমিন আক্তার বলেন, ‘তোমাদের দাবিগুলো শুনেছি। এগুলো বাস্তবায়ন করতে সময় প্রয়োজন। এজন্য আমাদের সময় দিতে হবে। তোমরা আমাদের প্রতিপক্ষ না, তোমরা কেনো আমাদের প্রতিপক্ষ ভাবছ?’
অধ্যক্ষের সঙ্গে আলোচনায় সন্তুষ্ট না হয়ে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বের হয়ে আসেন এবং কার্যালয়ের প্রবেশপথে রক্ত ঢেলে দেন।
পরে কলেজ কর্তৃপক্ষের অনুরোধে দুপুর আড়াইটার দিকে কর্মসূচি স্থগিত করে ছাত্রলীগ। তবে দাবি মেনে না নিলে রোববার থেকে পুনরায় কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন নেতাকর্মীরা।
এদিকে শীতকালীন ছুটি শেষে শনিবার (২ জানুয়ারি) থেকে কলেজ খুললেও কোন ক্লাস অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় কলেজ ক্যাম্পাসে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া কলেজের মূল ফটক ছাড়া অন্যান্য ফটকগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে আট দফা দাবির কথা জানায় নগর ছাত্রলীগ। ওইসময় দাবি মেনে না নিলে চট্টগ্রাম কলেজ ও সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ খুলতে দেবে না বলে জানিয়েছিল ছাত্রলীগ নেতারা।
ছাত্রলীগের আট দফা দাবির মধ্যে আছে, কলেজ ক্যাম্পাসে স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন, মূল ফটক ছাড়া বাকি ১৬টি প্রবেশপথ বন্ধ করে দেওয়া, ক্যাম্পাসের ভেতরে সব ধরনের আবাসিক স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়া, শিবির ক্যাডারদের পৃষ্ঠপোষক হোস্টেল সুপার-মসজিদের ইমাম ও খতিবকে অপসারণ করা, অস্থায়ী ও খণ্ডকালীন কর্মচারীদের অপসারণ ও দোকান বন্ধ করে দেওয়া, তিন দশক ধরে ছাত্র সংসদের নামে আদায় করা অর্থের হিসাব সাধারণ শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন, ছাত্রাবাস ও ছাত্রী নিবাসের নামে মিনি ক্যান্টনমেন্টগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং নাশকতা মামলার আসামি ছাত্রদের গ্রেফতার ও ছাত্রত্ব বাতিল।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০২, ২০১৫
টিএইচ/আইএসএ/টিসি
** আটদফা দাবিতে চট্টগ্রাম কলেজে ছাত্রলীগের অবস্থান