চট্টগ্রাম: ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর। যুদ্ধে হেরে গিয়ে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করে এদিন।
পত্রিকার সম্পাদক এম এ মালেক নিজেও আগ্রহী। ঘোষণা দিলেন অবশ্যই পত্রিকা বের হবে। বাকিটা ইতিহাস। ওইদিন রাতভর একটানা কাজ করে গেলেন সবাই। সকালেই বের হল পত্রিকা। খুব বড় আকারে নয়, ডিমাই ওয়ান ফোর সাইজের ছোট্ট পত্রিকা। দিনটি ছিল ১৭ ডিসেম্বর, ১৯৭১।
সেদিনের পত্রিকার লিড নিউজে বড় লাল হরফে লেখা ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’। রচিত হল ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ১৭ই ডিসেম্বর সকালে পুরো বাংলাদেশে এই একটিই পত্রিকা বেরিয়েছিল।
এর আগে ২৬শে মার্চে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এই পত্রিকা কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এরপর থেকে বন্ধ ছিল পত্রিকা প্রকাশ।
চলতি বছর ৫৭তে পা দিয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পত্রিকাটি। এ উপলক্ষে বাংলানিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আজাদী সম্পাদক এম এ মালেক স্মৃতিচারণ করেছিলেন পত্রিকাটি নিয়ে।
তিনি বলেছিলেন, ১৯৬০ সালে কাগজ বের করার পর বাবা দু’বছরের মতো চালাতে পেরেছিলেন। প্রথম দিকে এত উৎসাহী ছিলাম যে কলেজে যাওয়ার সাইকেলে আত্মীয়-স্বজন ও পরিচিতদের বাসায় কাগজ পৌঁছে দিতাম, সঙ্গে থাকত ভাগিনা মরহুম ডা. আলী রেজা। এভাবে দু-এক মাস পত্রিকা বিলি করেছি। তখন তো আর হকার ছিল না। ১৯৬২ সালে বাবা ইন্তেকাল করলেন।
এরপর থেকে আজাদীর জন্য দৈনিক ১৮ ঘণ্টা করে পরিশ্রম করেছি। তখন রিপোর্টার কম ছিল, নিজেই রিপোর্ট লিখতাম, ছবি তুলতাম, আমি এপিপি’র ফটোগ্রাফার ছিলাম। রাতে নিচতলায় প্রেসে কাগজ ছাপার কাজ দেখতাম। তারপর ঘণ্টা কয়েক ঘুমিয়ে নিতাম। ভোর চারটা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত হকারদের কাগজ দিতাম, এভাবে কেটেছে ৪০ বছর। নতুন একটি দিনের শুরু হতো।
‘এত পরিশ্রম করেছি শুধু একটি কারণে। সেটি হলো যদি আজাদী নিয়মিত বের করতে না পারতাম তবে লোকে বলবে, আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার কাগজটি বের করে ভালো একটি কাজ করেছিলেন, তার ছেলে তা-ও ধরে রাখতে পারল না। এ উপলব্ধিই ছিল আমার চালিকাশক্তি। ’
সেই চালিকাশক্তির জোরেই এখনো পর্যন্ত পথচলা অব্যাহত রয়েছে চট্টগ্রামবাসীর প্রিয় এ দৈনিকটির।
বাংলাদেশ সময়: ১১১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৭, ২০১৬
টিএইচ/আইএসএ/টিসি