ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ পৌষ ১৪৩১, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বাংলানিউজকে জহিরুল ইসলাম

সর্বাধুনিক উপায়ে জাহাজ কাটতে আমরা রেডি

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
সর্বাধুনিক উপায়ে জাহাজ কাটতে আমরা রেডি মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম । ছবি: সোহেল সরওয়ার

পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। ২০০৮ সালে পিএইচপি ফ্যামিলির এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব নেন তিনি।

চট্টগ্রাম: পিএইচপি শিপ ব্রেকিং অ্যান্ড রি-সাইকেলিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। ২০০৮ সালে পিএইচপি ফ্যামিলির এ প্রতিষ্ঠান পরিচালনার দায়িত্ব নেন তিনি।

জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এ তরুণ উদ্যোক্তা আধুনিক ইয়ার্ড গড়লেন, বিশ্বে প্রথম এ শিল্পে টাওয়ার ক্রেনের ব্যবহার করলেন, আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং কর্মীদের সেফটি ইক্যুইপমেন্ট সরবরাহ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রযুক্তির সহায়তায় পাল্টে দিলেন পুরো শিল্পটি। জাদুকরী শক্তির অধিকারী সেই অদম্য তরুণ উদ্যোক্তা এবার বাংলানিউজকে শোনালেন অন্য এক যুদ্ধজয়ের গল্প।
কথা বলেছেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মো. মহিউদ্দিন ও আল রাহমান

তৈরি পোশাকশিল্পে রানা প্লাজা ধসের মতো বিপর্যয় জাহাজভাঙা শিল্পে নেমে আসার আগেই বিশ্বমানের ইয়ার্ড গড়ে তুলছেন জানিয়ে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, পরিবেশ সুরক্ষার মধ্য দিয়ে সর্বাধুনিক উপায়ে জাহাজ কাটার জন্য আমরা রেডি। আমরা এখন কমপ্লায়েন্স ইয়ার্ড। ২৫ কোটি টাকা খরচ করে আমরা প্রথমে নিজেদের ইয়ার্ডকে আগামী ১০ বছরের উপযোগী করে ঢেলে সাজিয়েছি। এখন আমাদের ইয়ার্ড রোল মডেল।  

তিনি বলেন, যেহেতু আমি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সেমিনার সিম্পোজিয়ামে যাই। সেখানে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। ফলে আমরা যদি কমপ্লায়েন্স শিপ ইয়ার্ড (বেস্ট ইয়ার্ড) গড়ে তুলতে না পারি তাহলে তো এই শিল্পের যারা বিরোধী তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে পারবো না। এ চিন্তা থেকেই ইয়ার্ড সংস্কারে বিনিয়োগ করেছি।  

আগামীতে সব শিপ ইয়ার্ডকে হংকং কনভেনশন বাস্তবায়ন করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, যেহেতু করতে হবে তাই আমরা এখনই বাস্তবায়ন করেছি। ২০১৭ সালে বিশ্বসেরা অডিট প্রতিষ্ঠানকে পিএইচপি শিপ ইয়ার্ডে আমন্ত্রণ জানানো হবে। তাদের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এইচ কে সি সনদ পেলে বিশ্বে আমাদের এ শিল্পের ভাবমূর্তি আরও বেশি উজ্জ্বলতর হবে।

পিএইচপি শিপ ইয়ার্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম

বেলা নামে একটি বেসরকারি সংস্থার বিরোধিতার কারণে এ শিল্প প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, তখন পুরো দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে গিয়েছিল। কারণ লোহার দাম দুই গুণ বেড়ে গিয়েছিল। ফলে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে যায়।

সরকার জাহাজভাঙা শিল্পের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এ খাতকে শিল্প ঘোষণা দেওয়ায় প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, সরকার অত্যন্ত আন্তরিক। সরকার যখন সহযোগিতা করছে; এ শিল্পের উন্নয়নে আমাদের কাজ করা উচিত, এ বোধ থেকেই আমরা ঝুঁকি নিয়েছি। সব প্রতিকূলতাকে একে একে জয় করেছি।    

শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে সব ধরনের সহযোগিতা পাচ্ছেন জানিয়ে তিনি বলেন, শিপ রি-সাইকেলিং বোর্ড গঠনের আশ্বাস দিয়েছে সরকার। এই বোর্ডে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শাখা থাকবে। এক জায়গা থেকেই সব কাজ সম্পন্ন করা হবে। ২০১৮ সালে বোর্ডের কার্যক্রম শুরু হতে পারে আশা করেন তিনি।

বাংলাদেশে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড বন্ধ করতে যারা তৎপর তাদের উদ্দেশে জহিরুল ইসলাম বলেন, একটি জাহাজকে আমরা শতভাগ রি-সাইকেল বা রি-ইউজড করি। কারণে জাহাজ থেকে প্রতি বছর ৫ হাজার টন ফার্নিচার পাই। এই ফার্নিচার না পেলে কী পরিমাণ গাছ কাটতে হতো সেটি বিবেচনা করলে তো আমরা পরিবেশ রক্ষায় কাজ করছি।

তবে এনজিওগুলো সমালোচনা করতে গিয়ে অনেক ইতিবাচক পরামর্শও দেন জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের ভালো পরামর্শগুলো আমরা গ্রহণের চেষ্টা করি। আমার শ্রমিকরা আহত হোক, কষ্ট পাক তা আমি চাই না। তবে একবারে এ শিল্প বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে আমি নই। কারণ শিল্প বন্ধ হলে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ৫০ হাজার লোক বেকার হবে। পরোক্ষভাবে সমস্যায় পড়বে অন্তত ৫ লাখ লোক।  

অত্যাধুনিক টাওয়ার ক্রেন

এনজিওগুলো এ শিল্পের বেকারদের চাকরির সংস্থান ও লোহার দাম দুই গুণ বাড়বে না এমন নিশ্চয়তা দিলে এই শিল্প বন্ধ করতে কোনো আপত্তি নেই বলেও মন্তব্য করেন জহিরুল ইসলাম।

বলেন, ঢালাও সমালোচনা মেনে নেওয়া যায় না। মাথাব্যথার জন্য মাথা কেটে ফেলতে হয় না। পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি ব্যক্তিগতভাবে আমি অত্যন্ত ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। আমার সন্তানদের বিষয়টি এক্ষেত্রে সামনে চলে আসে। তাদেরতো আমি দূষিত পরিবেশে রেখে যেতে পারি না। তাই জাহাজ যদি কাটতেই হয় তবে বিশ্বমানের সেফটি ইক্যুইপমেন্ট ও প্রযুক্তি ব্যবহার করেই করতে বদ্ধপরিকর আমি। এ কারণেই আমরা রোলমডেল।   

ম্যাগনেটিক ক্রেন

তিনি বলেন, এই শিল্প বন্ধ হলে রড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল সংকটে ভুগবে। এ শিল্প দেশের স্টিল ইন্ডাস্ট্রির সেরা কাঁচামাল জোগান দিচ্ছে। তাই এ শিল্পের গুরুত্ব অনেক বেশি। এরপর জাহাজের আসবাব, জেনারেটর, বৈদ্যুতিক মোটর, টিভি, ফ্রিজ, এয়ারকুলার, ফিল্টার, প্রপেলার. কমপ্রেসার, ক্যাবল (তার), তামা, পিতল, অ্যালুমিনিয়াম, তেল ইত্যাদি অর্থনীতিতে কী অবদান রাখছে তা-ও বিবেচনায় নিতে হবে। এর মধ্যে প্রপেলার, থামা, পিতল ইত্যাদি অনেক কিছু রফতানি হচ্ছে।    

তিনি জানান, বাংলাদেশ শিপ ব্রেকিং অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসবিএ) সদস্যরা বছরে হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দিচ্ছে সরকারকে। একসময় এ শিল্পে অনেক ভুলভ্রান্তি ছিল। এখন আমরা মিডিয়াকে ইয়ার্ডে ঢুকতে দিচ্ছি। অনেক দেশে যা দেয় না। নরওয়ে সরকার ১২ কোটি টাকার তহবিল দিয়েছে এ শিল্পের উন্নয়নে স্টাডির জন্য। নেদারল্যান্ডস দূতাবাস প্রশিক্ষণের জন্য বিএসবিএকে দিয়েছে ৬০ লাখ টাকা।   

চট্টগ্রামের সব শিল্পের জন্য ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে সীতাকুণ্ডে ২০ একর জায়গার ওপর ট্রিটমেন্ট স্টোরেজ ডিসপোজাল ফ্যাসিলিটি (টিএসডিপি) গড়ে তোলার যে পরিকল্পনা তা বাস্তবায়িত হলে জাহাজভাঙা শিল্প নিয়ে বাংলাদেশ গর্ব করতে পারবে বলে মনে করেন আধুনিক শিপ ইয়ার্ডের এ পথিকৃৎ।  

বাংলাদেশ সময়: ১০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬

এমইউ/এআর/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।