চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় গ্রেফতার হওয়া চার যুবকের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম সাহাদাৎ হোসেন ভূঁইয়া জামিন মঞ্জুরের আদেশ দিয়েছেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ।
হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলার মধ্যে আক্রান্ত সাংবাদিকদের পক্ষে বাংলানিউজের বিশেষ প্রতিনিধি রমেন দাশগুপ্তের মামলায় রোববার জামিনের আবেদন জানানো হয়। অপর মামলায় আগেই জামিন পেয়েছেন চার যুবক।
জামিন শুনানিতে অংশ নিয়ে অ্যাডভোকেট চন্দন দাশ বলেন, কারাগারে থাকা চার যুবকের অভিভাবকেরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গিয়ে সাংবাদিক নেতাদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। সাংবাদিক নেতারা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অবসানকল্পে তাদের ক্ষমা করেছেন এবং জামিনে আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন।
এসময় আইনজীবী চন্দন দাশ আদালতে উপস্থিত বাদি রমেন দাশগুপ্তকে জামিনে কোন আপত্তি আছে কিনা তা জানতে চাওয়ার জন্য অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিমের কাছে অনুরোধ করেন। আদালত এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাদি জামিনে আপত্তি নেই বলে জানান। এরপর আদালত জামিন মঞ্জুর করেন।
জামিন পাওয়া চার যুবক হল, অজয় দত্ত, পিয়াল শর্ম্মা, নয়ন সরকার ও অনুভব মজুমদার।
সাংবাদিকদের পক্ষে মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটির আহ্বায়ক এবং বিএফইউজের সহ সভাপতি শহীদ উল আলম বাংলানিউজকে বলেন, হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত ক্ষমা চেয়ে লিখিত চিঠি দিয়েছেন। আটক যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকেও ক্ষমা চাওয়া হয়েছে। এরপরও নির্দিষ্ট কিছু শর্তের ভিত্তিতে আমরা জামিনে আপত্তি না জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মামলা পরিচালনা সংক্রান্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অঞ্জন কুমার সেন বাংলানিউজকে বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা নিজেরাও ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেছেন এবং ক্ষমা চেয়েছেন। যাদের বিরুদ্ধে আমরা মামলা করেছি তাদের ক্ষমা করে দেয়ার জন্য বিনীত অনুরোধ করেছন। আটক যুবকদের সংশোধন হওয়ার জন্য তাদের ক্ষমা করে দেয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
এর আগে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) রাতে আটক চার যুবকের অভিভাবকেরা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিক নেতাদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চান। এসময় জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশ ও হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ, চট্টগ্রাম মহানগর এবং বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর শাখার নেতারাও প্রেসক্লাবে আসেন এবং ঘটনার জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। তারাও চার যুবককে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য সাংবাদিক নেতাদের অনুরোধ করেন।
আন্দোলন পরিচালনা ও বিরোধ নিষ্পত্তি কমিটির আহবায়ক এবং বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ সভাপতি শহীদ উল আলমের সভাপতিত্বে ও যুগ্ম আহবায়ক অঞ্জন কুমার সেনের সঞ্চালনায় সার্বিক বিষয় তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল।
বক্তব্য রাখেন জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদ, বাংলাদেশের সভাপতি দেবাশীষ পালিত ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট চন্দন তালুকদার, মহানগর কমিটির সভাপতি কাজল কান্তি দত্ত, হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের মহানগর কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার পরিমল কান্তি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, মহানগর পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অরবিন্দ পাল অরুণ ও সাধারণ সম্পাদক সুজিত দাশ।
সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, মোস্তাক আহমদ ও এজাজ ইউসুফী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মহসিন চৌধুরী, সিইউজের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি কাজী আবুল মনসুর, সিইউজের সিনিয়র সহ সভাপতি রতন কান্তি দেবাশীষ, বিএফইউজের যুগ্ম মহাসচিব তপন চক্রবর্তী, নির্বাহী সদস্য আসিফ সিরাজ এবং মামলার বাদি চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ ও রমেন দাশগুপ্ত
মামলায় বাদিপক্ষে অংশ নেন অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সালাহউদ্দিন হায়দার সিদ্দিকী, রেজাউল করিম চৌধুরী, কফিল উদ্দিন চৌধুরী, মাহফুজুর রহমান খান, নিতাই প্রসাদ ঘোষ, আবিদ হোসেন, ইব্রাহীম কুতুবী, সাইফুদ্দিন মোহাম্মদ খালেদ, যীশু রায় চৌধুরী ও গোলাম মাওলা মুরাদ এবং আসামীপক্ষে এডভোকেট চন্দন দাশ, হুমায়ুন কবীর রাসেল, চন্দন তালুকদার, ভুলন ভৌমিক প্রমুখ।
গত ৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় ঐক্যবদ্ধ সনাতন সমাজের ব্যানারে মানববন্ধন থেকে কিছু উচ্ছৃঙ্খল যুবক প্রেসক্লাবে হামলা, ভাংচুর এবং সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করে। এসময় তারা একুশে টেলিভিশনের গাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে চার যুবককে আটক করে।
এই ঘটনায় ৭ ডিসেম্বর চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ এবং আক্রান্ত সাংবাদিকদের পক্ষে বাংলানিউজের বিশেষ প্রতিনিধি রমেন দাশগুপ্ত বাদি হয়ে কোতয়ালি থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬
আরডিজি/টিসি