চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: অস্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর মৃত্যুর পর পেরিয়ে গেছে ২৯দিন। কিন্তু এই নেতার মরদেহের দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন এখনও হাতে না আসায় আলোচিত এই মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা সিআইডি।
৬ ডিসেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য দিয়াজের মরদেহ কবর থেকে তোলার আদেশ দেন।
পরে ১০ ডিসেম্বর সিআইডি পুনঃময়নাতদন্তের জন্য ফের তোলা হয় দিয়াজের মরদেহ। সেই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন শেষে চিকিৎসকরা দিয়াজের শরীরে আঘাতের চিহৃ পাওয়ার কথা জানান।
দিয়াজের মামলার তদন্তে দায়িত্বে থাকা সিআইডির চট্টগ্রাম জোনের এএসপি অহিদুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন আমরা এখনও হাতে পায়নি। তাই তদন্তের কাজ পুরোপুরি শুরু করতে পারিনি। ’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘দিয়াজের ব্যবহৃত মোবাইলের আইএমইআই নাম্বার তার পরিবার দিতে পারেনি। তাই এই বিষয়েও আমরা তদন্ত করতে পারিনি। ’
এদিকে ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা .সোহেল মাহমুদসহ দিয়াজের ময়নাতদন্তকারী অপর দুই চিকিৎসক চট্টগ্রামে আসার কথা রয়েছে। তারা এসে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন, পুলিশ ও দিয়াজের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করবেন।
তবে তারা আসার আগে দিয়াজের তদন্তে দায়িত্বে থাকা সিআইডির চট্টগ্রাম জোনের কর্মকর্তাদের চিঠির মাধ্যমে জানাবেন। কিন্তু সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) পর্যন্ত এই ধরনের কোনো চিঠি সিআইডি’র চট্টগ্রাম জোনের কর্মকর্তারা পাননি বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন।
এএসপি অহিদুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের তিন সদস্য চট্টগ্রামে এসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন। তবে আসার আগে তারা আমাদের চিঠির মাধ্যমে জানাবেন। আজও তারা আমাদের কোনো কিছু জানাননি। ’
গত ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দে'র আদালতে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতিসহ ১০ জনকে আসামি করা হয়।
আদালত সরাসরি মামলা গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দিয়ে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।
এদিকে দিয়াজের মৃত্যুর তদন্তে কোনো অগ্রগতি না থাকায় তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে হতাশ দেখা দিয়েছে। সঠিক তদন্ত নিয়েও তারা সংশয় প্রকাশ করছেন।
দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা বাংলানিউজকে বলেন, ‘দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়েছে প্রায় নয় দিনের মত। এখনও পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি দেখছিনা। আজও কেউ বাসায় এসে আমাদের সঙ্গে কথা বলেনি। ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেনি। ’
ময়নাতদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা.সোহেল মাহমুদ মুঠোফোনে বাংলানিউজকে বলেন, ‘দিয়াজের স্টমাক, কিডনি ও লিভারের নমুনা সংগ্রহ করে মহাখালী সিআইডি রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া গলার টিস্যুর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ঢামেকের হিস্টোপ্যাথলিজ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। তবে এগুলোর প্রতিবেদন আমরা এখনও পাইনি। ’
তিনি বলেন, ’২৬ ডিসেম্বর সরাসরি আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করব। পাশাপাশি প্রথম ময়নাতদন্তের ভিসেরা এবং হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট আমরা বিবেচনা করব। ’
গত ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন রাতে দিয়াজের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। পরে ২৩ নভেম্বর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে দিয়াজের মৃত্যু আত্মহত্যাজনিত কারণে বলে মত দেন ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা। তবে এই প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে আদালতে মামলা করেন দিয়াজের মা।
বাংলাদেশ সময়: ২০১৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
জেইউ/টিএইচ/টিসি