চট্টগ্রাম: সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম মহানগরীতে ৩ হাজার টাকার বেশি ভর্তি ফি নেওয়ার সুযোগ না থাকলেও বাংলাদেশ মহিলা সমিতি উচ্চ বিদ্যালয়ে (বাওয়া) প্রেপ-ওয়ান শ্রেণির ভর্তিতে অভিভাবকদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী ভর্তির যোগ্যতা অর্জন করেও অতিরিক্ত ৭ হাজার টাকা গুনতে হচ্ছে অভিভাবকদের।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নতুন স্কেলে বেতন দিতে বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গত শনিবার (১৭ ডিসেম্বর) লটারির মাধ্যমে প্রেপ-ওয়ান শ্রেণিতে প্রাত: ও দিবা শাখায় ৩৪০ জন ভর্তিচ্ছু ছাত্রীকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচন করে স্কুল কর্তৃপক্ষ। এসময় জেলা প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ভর্তিচ্ছু ছাত্রীদের অভিভাবকেরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বাওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ নোটিশবোর্ডে বিজ্ঞপ্তি আকারে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিতদের তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে সোমবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ১০টা থেকে ১২টার মধ্যে মূল প্রবেশপত্রসহ বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে গিয়ে রশিদ বই সংগ্রহ করে ইউ সি বি ব্যাংক দামপাড়া শাখায় জানুয়ারী মাসের বেতনসহ ১০ হাজার ৩৫০ টাকা জমা দিয়ে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বলা হয়।
নীতিমালা না মেনে প্রতিজন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হলে ৩৪০ জন ভর্তিচ্ছু ছাত্রীদের কাছ থেকে ২৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বেশি আদায় করা হবে। ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা জানিয়েছেন, অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত ৭ হাজার টাকা আদায় করা হচ্ছে।
সায়মা নামে বাওয়া স্কুলে ভর্তিচ্ছু এক ছাত্রীর অভিভাবক বাংলানিউজকে বলেন, মেয়ের বয়স সাড়ে চার বছর হয়েছে। ২০০ টাকা দিয়ে আবেদন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছি। আমার মেয়ে লটারির মাধ্যমে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছে। তবে ভর্তি করাতে পারবো কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। কারণ প্রেপ-ওয়ান শ্রেণির ভর্তিতে এবার দশ হাজার টাকা নিচ্ছে বাওয়া স্কুল কর্তৃপক্ষ।
গতবছর পাশের বাসার এক ছাত্রীকে বাওয়া স্কুলের প্রেপ-ওয়ানে ৫ হাজার টাকা দিয়ে ভর্তি করিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, এবার দশ হাজার টাকা নিচ্ছে। এ ছোট্ট মেয়েকে ভর্তি করাতে যদি দশ হাজার টাকা দিতে হয় তা তো অভিভাবকের পক্ষে সম্ভব হবে না। ভর্তি ফি নিয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
বাংলাদেশ মহিলা সমিতি স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম বাংলানিউজকে বলেন, প্রেপ-ওয়ান শ্রেণির প্রাত. ও দিবা শাখার ৩৪০ আসনে ২ হাজার ৮৭২টি আবেদন জমা পড়েছিল। যাচাই বাচাই করে ৩৭টি আবেদন বাতিল হয়।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফোরকান এলাহী অনুপম ও আবেদনকারী ছাত্রীদের অভিভাবকদের সামনে লটারির মাধ্যমে দুই শিফটে (প্রাত. ও দিবা) ৩৪০ জন শিক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয়। এরমধ্যে প্রাত. শাখায় ১৬০ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ জন, স্থায়ী শিক্ষকের পোষ্য কোটায় ১ জন এবং দিবা শাখায় রয়েছে ১৬১ জন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ৯ জন।
ইতোমধ্যে বিজ্ঞপ্তি আকারে জানুয়ারী মাসের বেতনসহ দশ হাজার ৩৫০ টাকা ব্যাংকে জমা দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচিত ছাত্রীদের অভিভাবকেরা রশিদ বই সংগ্রহ করে ভর্তি কার্যক্রম সম্পন্ন করছে।
প্রেপ-ওয়ান শ্রেণির ভর্তিতে গতবছরের চেয়ে ৫ হাজার টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে, এ প্রশ্নের জবাবে অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম বলেন, স্কুলের খণ্ডকালীন শিক্ষকদের নতুন স্কেলে বেতন দেওয়ার জন্য নেওয়া হচ্ছে। স্কুল পরিচালনা কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে এ ভর্তি ফি নির্ধারণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
তবে ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী চট্টগ্রাম নগরীতে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকার বেশি নেওয়ার কোন সুযোগ নেই।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মো. সামসুল আরেফিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রেপ-ওয়ান শ্রেণির ভর্তিতে দশ হাজার টাকা খুব বেশি। ভর্তিচ্ছু ছাত্রীর কোন অভিভাবক যদি এ বিষয়ে অভিযোগ জমা দেয়, তাহলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা হবে। তবে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভর্তিতে দশ হাজার টাকা আদায় করার বিষয়টি দৃষ্টিগোচর।
বাংলাদেশ সময় : ২০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৬
এসবি/টিসি