দোহাজারী থেকে ফিরে: সাংগু নদীর উত্তর পাড়ের লালিয়ার চর। সেখানে চার কানি জমির উপর ফুলকপি, বাধাকপি আর মুলার চাষ নিয়ে কৃষক আনোয়ার হোসেনের ভরা ‘সংসার’।
ঘড়িতে তখন সকাল সাড়ে সাতটা।
ঘড়ির কাঁটা সাড়ে আটটা ছুঁতেই ছেলের দিকে তাকিয়ে আনোয়ার হোসেনের হাঁক, ‘বাবা কাজ শেষ করো এবার, স্কুল ধরতে হবে যে। ’
কবির উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। প্রতিদিন ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত-এই তিন ঘণ্টা বাবাকে সবজি চাষে সহযোগিতা করে সে।
শুধু কবির আহমদ নয়, তার আরও দুই ভাই আছে। তারাও একইভাবে প্রতিদিন ভোরে বাবাকে সহযোগিতা করে।
বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সকালে সেখানে কথা হয় কবির আহমদের সঙ্গে।
বাংলানিউজকে সে বলে, ‘আমরা তিন ভাই। বড় ভাই দেলোয়ার হোসেন একই বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। ছোটভাই রাফি হোসেন কালিয়াশ আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল খোলার দিনগুলোতে ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত বাবাকে সহযোগিতা করি। স্কুল বন্ধ থাকলে আরও বেশি সময় দেই। ’
শুধু কবির আহমদরা নয়, এরকম আরও অনেকেই সকালে সবজি চাষে সহযোগিতার পর বই-খাতা আর কলমভর্তি ব্যাগ নিয়ে ছুটে স্কুলে।
সবজি বাগানের আরও একটু ভেতরে যেতেই দেখা হয় নুরুল ইসলাম নামের এক কিশোরের সঙ্গে।
সে উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।
শুধু কবির আহমদরা নয়, এরকম আরও অনেকেই সকালে সবজি চাষে সহযোগিতার পর বই-খাতা আর কলমভর্তি ব্যাগ নিয়ে ছুটে স্কুলে।
সবজি বাগানের আরও একটু ভেতরে যেতেই দেখা হয় নুরুল ইসলাম নামের এক কিশোরের সঙ্গে।
সে উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্র।
নুরুল ইসলাম জানায়, তাদের পাঁচ কানি জমিতে এবার ফুলকপি, বাধাকপি, মুলা ও ধনে পাতার চাষ করা হয়েছে। সে ও তার ভাই আলী আহমদ একই স্কুলের ছাত্র। প্রতিদিন ভোরে জমিতে সবজি চাষ ও পরিচর্যার কাজ করে তারা।
‘আমার আরও অনেক পড়ালেখা করা বন্ধু ও পাড়ার ছোট ভাইও তাদের পরিবারের সদস্যদের প্রতিদিন ভোরে সবজি খেতে সহযোগিতা করে। ’
অন্যদিকে সাংগু নদীতে বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে মিলে মুলা পরিস্কার করার কাজ করছিল ফাতেমা বেগম নামের এক কিশোরী। সে স্থানীয় একটি মাদরাসার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী।
তারও বাবা-ভাইকে সহযোগিতা করার পর একই গন্তব্য-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
শুরুতেই বলেছিলাম কিশোর কবির আহমদের কথা। ছেলের পাশাপাশি বাংলানিউজের কথা হয় তার বাবা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গেও।
তিনি বলেন, ছেলেরা নিজ থেকেই আগ্রহ দেখায়। তাই প্রতি ভোরে তারা চলে আসে জমিতে। তবে পড়ালেখার ক্ষতি যাতে না হয় সেদিকে আমার নজর আছে।
আনোয়ার হোসেনরা সবজি উৎপাদন শেষে সেই সবজি বিক্রির জন্য তোলেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সবজির বাজার বলে পরিচিত দোহাজারী বাজারে।
প্রতিদিন ভোর ছয়টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এই হাটে বসে সবজির মেলা। সবজির পসরা সাজিয়ে বিক্রেতারা বসেন এখানে। চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ক্রেতারা এখান থেকে সবজি নিয়ে ফেরেন নিজ নিজ গন্তব্যে। প্রতিদিনিই ১০০ থেকে ১৫০ পিকআপ সবজি বিক্রি হয় এই বাজারে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হাজারীবাজার, বারতখানা, চাগাচর, জামিরজুরী, লালটিয়া, দিয়াকুল, রায়জোয়ারা, কিল্লাপাড়া, লালিয়ার চর সহ নানা এলাকায় সবজি চাষ হচ্ছে। বিশাল এলাকাজুড়ে অবস্থিত এসব জায়গার অবস্থান সাংগুর উত্তরপাড়ে। এখানে বছরভর সবজি চাষ হয় বলে জানিয়েছেন কৃষকরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২১, ২০১৬
টিএইচ/আইএসএ/টিসি
আরও পড়ুন