দোহাজারী থেকে ফিরে: দোহাজারী বাজার থেকে সবজির ‘বাগান’ লালিয়ার চরের দূরত্ব নদীপথে কমপক্ষে দুই কিলোমিটার। নৌকাযোগে সেখান থেকে বাজারের ঘাট পর্যন্ত আনার বিনিময়ে একশ কেজি ওজনের দুই ঝুড়ি মুলার পেছনে একজন কৃষককে গুণতে হয় ৪০ টাকা।
বীজ রোপন থেকে পরিচর্যা খরচ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একশ কেজি মুলা বাজার পর্যন্ত আনতেই কৃষকের খরচ হচ্ছে ৩৯০টাকা। কৃষকরা এই একশ কেজি ওজনের দুটি ঝুড়ি মুলা বাজারে তুলে পাচ্ছেন ৮০০ টাকা। অর্থাৎ বাজারে বিক্রি করে প্রতি কেজি মুলার পেছনে কৃষক দাম পাচ্ছেন মাত্র ৮ টাকা।
এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর কাজির দেউড়ি বাজার পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। নগরীর অন্যান্য বাজারগুলোতেও একই দামে শীতের এই সবজি বিক্রি করতে দেখা গেছে।
সেই হিসেবে প্রতি কেজিতে কৃষক যেখানে পাচ্ছেন মাত্র ৮ টাকা সেখানে ৪৫ কিলোমিটার দূরত্বের চট্টগ্রাম নগরে এই সবজি বিক্রি করে বিক্রেতারা পাচ্ছেন তার কয়েকগুণ লাভ।
তাই ক্ষোভ ঝরে কৃষক নেতা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবুল কালাম আজাদ ঢালির কণ্ঠে।
তিনি বলেন, ‘আমি একজন কৃষক-এটা আমার জন্য গর্বের। কিন্তু আমি ও আমার কৃষক ভাইরা সঠিক মূল্য পাচ্ছি না। উৎপাদন খরচ ছাড়া শুধুমাত্র জমি থেকে বাজারে আনার খরচসহ প্রতি কেজি মুলায় ৮ টাকা করে পাচ্ছি। সেটার সঙ্গে যদি উৎপাদন খরচটা যোগ করি আমাদের থাকে কী?
একই হতাশা বাংলাদেশ কৃষক সমিতির স্থানীয় শাখার প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ওসমানেরও। বুধবার সকালে দোহাজারী বাজারে কথা হয় তার সঙ্গে।
মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘প্রায় অর্ধ লাখ মানুষ সবজি চাষের সঙ্গে জড়িত। আমরাই পুরো চট্টগ্রাম শহরসহ নানা উপজেলার মানুষের সবজির চাহিদার যোগান দিচ্ছি। কিন্তু আমাদের দিকে কেউ তাকায় না। দরদামে সবাই আমাদের ঠকাতে পারলেই যেন বাঁচে। প্রশাসন উদ্যোগ না নিলে অদূর ভবিষ্যতে অনেক কৃষক সবজি চাষে আগ্রহ হারাবে। এতে তো ক্ষতি হবে দেশেরই। ’
সিন্ডিকেটে বন্দি কৃষকরা:
দোহাজারী বাজারে অনেক কৃষকের সঙ্গে কথা হয় বাংলানিউজের। প্রায় সবার একই কথা-ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট এই বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। এই সিন্ডিকেট সবজির দাম কমিয়ে দেয়। কৃষকরাও বাধ্য হয়ে তাদের পছন্দমতো দামে সবজি বিক্রি করেন।
অবিক্রিত সবজি ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই:
দোহাজারী বাজার-দক্ষিণ চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় বাজার বলে খ্যাত। প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার বিকিকিনি হয় এই বাজারে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হলো এই বাজারে নেই কোনো হিমাগার। আর এই সুযোগটাই নেয় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটটি। কারণ দিনশেষে বিক্রি না হলে সবজি ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকে না কৃষকদের। ফলে যা দাম পান তাতেই একপ্রকার বাধ্য হয়ে বিক্রি করেন সবজি।
বাংলাদেশ কৃষক সমিতির স্থানীয় শাখার প্রচার সম্পাদক মোহাম্মদ ওসমান বলেন, ‘এত বড় বাজার। কিন্তু আমাদের কোনো হিমাগার নেই। ফলে দিনশেষে সবজি বিক্রি না হলে সেই সবজি নদীতে ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। কারণ এসব সবজি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। আর সবজি জিনিসটি পচনশীল। ভালোভাবে রাখতে না পারলে কিছু কিছু সবজি দিনে দিনেই পচে যায়। হিমাগার না থাকার সুযোগে ব্যবসায়ীরাও তাদের ইচ্ছেমতো দাম হাঁকান। আমাদেরও বাধ্য হয়ে তাদের কাছে বিক্রি করতে হয়। একটা হিমাগার তৈরি করা হলে এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্য বড় উপকার হবে। ’
বাংলাদেশ সময়: ১০৪০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
টিএইচ/আইএসএ/টিসি