চট্টগ্রাম: বাংলা ও বাঙালির বিশ্ব-জাগৃতির অন্তর্লীন সত্তা মহান মুক্তিযুদ্ধ। বিজয়ের ৪৫ বছর উপলক্ষে তির্যক নাট্যদল শুক্রবার (২৩ ডিসেম্বর) থেকে তিন দিনব্যাপী তির্যক নাট্যমেলা-২০১৬ আয়োজন করেছে।
৪৩ বছরের পথচলায় তির্যক নাট্যদলের নানান বিষয় নিয়ে বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম কার্যালয়ে কথা হয় তির্যক নাট্যদলের প্রধান নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দারের সাথে।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম’র চট্টগ্রাম ব্যুরো এডিটর তপন চক্রবর্তীর এক প্রশ্নের জবাবে নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, স্বাধীনতার পরপরই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে ১৯৭৪ সালের ১৬মে ‘তির্যক’ নাট্যদলের আত্মপ্রকাশ ঘটে।
৪২ বছর নাট্যচর্চা করে এখন ৪৩ বছরে পা দিয়েছে তির্যক নাট্যদল। তবে নাট্যকর্মীদের মতানৈক্যের কারণে মাঝখানে দু’ভাগে ভাগ হয় এ সংগঠনের কর্মীরা। তারপরও থেমে নেই তির্যক নাট্যদলের নাট্যচর্চা ও পরিবেশন। তির্যক নাট্যদলে বর্তমানে ৫০/৬০ জন সদস্য রয়েছে। নাট্যকর্মীদের পদভারে মুখরিত তির্যক নাট্যদল সৃষ্টিশীল নাটকের মাধ্যমে দর্শক শ্রোতাদের মনে স্থান করে নিয়েছে। পূর্বসুরীদের অকৃত্রিম নিষ্ঠা ও ধারাবাহিকতায় সৃষ্টি-নির্মাণে পূর্ণতা ও পরিচিতি পাচ্ছে তির্যক নাট্যদল।
গঠনের পর থেকে বিভিন্ন নাটক পরিবেশন করেছে। ইতোমধ্যে তির্যক নাট্যদল ৪৪টি নাটক ২ হাজার ৭১২ বার বিভিন্ন মঞ্চে মঞ্চস্থ করেছে। ১৯৯১ সাল থেকে রবীন্দ্র নাট্যভূবনে মঞ্চ পরিক্রমার সূত্রপাত হয়। এরমধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ৫টি নাটক, কাব্য নাটক এবং রবীন্দ্র কবিতার নবতর মঞ্চ রূপায়ন ‘ছন্দনাটক’। রবীন্দ্র নাটকের মধ্যে ‘রথযাত্রা’ তির্যক নাট্যদল প্রথম মঞ্চস্থ করে নগরীর মুসলিম হলে ১৯৯১ সালের ৭ আগস্ট। এটি ইতোমধ্যে ১৭৪ বার মঞ্চায়ন করা হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ‘বিসর্জন’ প্রথম মঞ্চস্থ হয় ১৯৯৫ সালের ৯ আগস্ট। এটি ২১৩ বার মঞ্চায়ন হয়েছে। এছাড়াও রবীন্দ্রনাথের টাপুর টুপুর, নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ, ডাকঘর, রক্তকবরী, রাজা, দেবতার গ্রাস নাটকগুলো অসংখ্যবার মঞ্চায়ন করা হয়েছে।
নাট্যজন আহমেদ ইকবাল হায়দার বলেন, সচেতন দর্শক, বিদগ্ধ সমালোচক নিষ্ঠাবান নাট্যকর্মীর সবচেয়ে আপনজন। আমরা শিল্পীত সৃজনের প্রশংসা যেমন প্রত্যশা করি তেমনি সচেতনভাবেই উম্মুখ থাকি সমালোচিত হবার জন্য। কেননা গঠনমূলক সমালোচনার মধ্য দিয়ে ভুলত্রুটি জানতে পারবো।
তির্যক নাট্যদল ৫ বার রবীন্দ্র নাট্যোৎসব আয়োজন করেছে। ১৯৯৫ সালে ৪ দিনব্যাপী, ১৯৯৬ সালে ৫ দিনব্যাপী, ১৯৯৭ সালে ৫ দিনব্যাপী, ১৯৯৯ সালে ৪ দিনব্যাপী ও ২০০৮ সালে সপ্তাহব্যাপী নাট্যোৎসব পালন করে তির্যক নাট্যদল। এ নাট্যোৎসব নাট্যচর্চাকে বেগবান করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
নাটকের প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে ইকবাল হায়দার বলেন, যারা সাংস্কৃতিক কাজে জড়িত, তারা কখনো খারাপ কাজে লিপ্ত থাকে না। সমাজের যেসব অসঙ্গতি, কুসংস্কার, অবক্ষয় আছে, তা নাটকের মাধ্যমে দূর করা সম্ভব। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের নাট্যকর্মীরা কাজ করে যাচ্ছে।
তবে চট্টগ্রামের নাট্যকর্মীরা প্রচারণার দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে। এখানে নাট্যকর্মীদের নিয়ে খুব একটা প্রচার দেখা যায় না। তবে পিছিয়ে নেই আমাদের নাট্যচর্চা। সারাদেশের ন্যায় আধুনিক যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আমরা নাট্যচর্চা করে যাচ্ছি। এখন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোতে নাটক বিষয় নিয়ে পড়াশোনা চালু হয়েছে। এতে অনেক নাট্যকর্মী বাড়বে। নাটক আরও বিস্তার লাভ করবে।
তবে নাটকের জন্য বরাদ্দ কম থাকায়, অনেকে ক্ষেত্রে নাটক মঞ্চায়নে হিমসিম খেতে হচ্ছে। কোন অনুষ্ঠানে সংগীত শিল্পীদের জন্য মোটা অংকের বাজেট থাকলেও নাটকের ক্ষেত্রে তা নগণ্য। একটি নাটক প্রোডাকশন করতে, কমপক্ষে ২০/৩০ জন লোক কাজ করে। এক্ষেত্রে অনেকে ৪০/৫০ হাজার টাকার বাজেট দিতেও গড়িমসি করে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০১৬
এসবি/আইএসএ/টিসি