চট্টগ্রাম: মো. আবুল মনসুর। বয়স আশি ছুঁই ছুঁই।
নাতি ফারহান শাহরিয়ারও কিন্তু এই স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থী। ২০১৪ সালে এই স্কুল থেকেই এসএসসি পাস করেন তিনি।
ঠিক এভাবেই বাবার হাত ধরে ছেলে বা নাতির হাত ধরে দাদা এসে যোগ দিয়েছেন পুনর্মিলনী উৎসবে। ১৮৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজিয়েট স্কুলের ১৮০ বছরপূর্তি উৎসবে এরকম কয়েক প্রজন্মের মিলনমেলা দেখা গেছে।
অনুভূতি জানতে চাইলে মো. আবুল মনসুর বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের বাড়ি আলকরণ এলাকায়। সেই ১৯৫৩ সালে কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পাস করেছি। অনেক স্মৃতি এ স্কুলে। বন্ধুরা মিলে অনেক দুষ্টুমি করতাম। পুনর্মিলনীতে এসেছি কোন বন্ধু-বান্ধুবকে দেখতে পাবো বলে। কিন্তু এখনো পাইনি। অনেকেই বেঁচে নেই।
৮০ বছর আগের কথা। আমরা ৫ ভাই এ স্কুলে পড়েছি। আবুল কাশেম, আবুল বশর, আবু তাহের, আবু তালেব এবং আমি। এরপর আমার ছেলে পড়েছে মুসলিম হাইস্কুলে। পরবর্তীতে আমার নাতি ফারহান শাহরিয়ারও এ স্কুল থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পাস করেছে।
নাতি ফারহান শাহরিয়ার এবার সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। সে আমাকে পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে নিয়ে আসলো। খুব ভাল লাগছে। সেই পুরনো দিনের কথাগুলো মনে পড়ছে। এবার আমাকে কলেজিয়েটস কমিটি সম্মাননা দিয়েছে যা আমার জন্য অত্যন্ত গৌরবের।
তবে ফারহান শাহরিয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করলেন অন্যভাবে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, আমরা দুই প্রজন্ম দাদা-নাতি কলেজিয়েট স্কুলের ১৮০ বছরপূর্তিতে আসতে পেরে ধন্য হয়েছি। আমার দাদারা ৬ ভাইয়ের মধ্যে ৫ ভাই কলেজিয়েট স্কুলে পড়েছেন। আব্বু পড়েছেন মুসলিম হাইস্কুলে। তবে আমিও এ স্কুলের ছাত্র। ২০১৪ সালে জিপিএ-৫ নিয়ে এসএসসি পাস করেছি। এ স্কুলের মাঠে কত ক্রিকেট খেলেছি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়েছি। প্রাইভেট পড়তাম স্যারের কাছে। অনেক স্মৃতিকথা এখন চোখের সামনে ভাসছে।
অন্যদিকে ১৯৪০ সালে মেট্রিকুলেশন পাস করা রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীও কলেজিয়েট স্কুলের ১৮০ বছরপূর্তি উৎসবে এসেছেন নাতির হাত ধরে।
অনুভূতি জানতে চাইলে রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, তখন আমার বাড়ি ছিল ঘাটফরহাদবেগের ফতেয়া মাতবর লেইন এলাকায়। ফতেয়া মাতবর আমার দাদু ছিলেন। সেখান থেকে হেঁটে এ স্কুলে আসতাম। তখন আমরা লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। সহপাঠীদের নিয়ে অনেক কিছু করেছি।
বয়স এখন ৯২ বছর। বয়সের ভারে অনেক স্মৃতি ভুলে গেছি। তবে তখন যেই শিক্ষকরা ছিলেন, ওনারা আমাদের অত্যন্ত যত্ন সহকারে পড়াতেন। আমরাও প্রাণপন চেষ্টার মাধ্যমে লেখাপড়া করতাম। আজ এখানে আসতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে হচ্ছে। আমাদের স্কুলের অনেক কৃতি শিক্ষার্থী দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে রয়েছেন। তা নিজ চোখে দেখলাম। সত্যিই প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর পরিবেশে এ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান উদযাপিত হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৬
এসবি/আইএসএ/টিসি