চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ভর্তি হওয়া বেশিরভাগই দূর-দূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থী। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে অনেকেই আবাসিক হলে অবস্থান করে পড়ালেখা চালিয়ে যেতে চান।
কিন্তু ভালো ফলাফল ও মৌখিক পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে যখন শেষমেশ সিট বরাদ্দ পান তখনও তারা হলে অবস্থান করতে পারেন না।
ফলে আবাসিক হল শুধু নামের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। হলে যারা থাকেন তারা বেশিরভাগই সিট বরাদ্দ না পাওয়া শিক্ষার্থী। ফলে অবৈধ দখলের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও পাচ্ছে না সিট বরাদ্দ সংক্রান্ত আয়।
হল প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এবং বাংলানিউজের অনুসন্ধানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এ এফ রহমান হলের ৩৩৩ নম্বর কক্ষে অ্যালটমেন্ট পাওয়া শিক্ষার্থী ও নৃ-বিজ্ঞান বিভাগের মোকাররম বাংলানিউজকে বলেন, ‘গত মার্চে এ এফ রহমান হলে ৩৩৩ নম্বর কক্ষে আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অ্যালটমেন্ট দেয়। এজন্য তারা আমার কাছ থেকে সিদ বরাদ্দ বাবদ এক হাজার টাকা ফি নেয়। পাঁচ মাস ধরে তারা শুধু হলে উঠাবে বলে আশ্বাসই দিয়েছে। কিন্তু তারা উঠাতে পারেনি। পরে বাধ্য হয়ে অ্যালটমেন্ট প্রত্যাহার করলে এক হাজার টাকার মধ্যে তারা তিনশ টাকা ফেরত দেয়। ’
শুধু মোকাররম নন ওই হলে অ্যালটমেন্ট পাওয়া নাম প্রকাশ করতে না চাওয়া সাংবাদিকতা বিভাগের আরেক শিক্ষার্থীও তার নিজস্ব কক্ষে উঠতে পারছেন না বলে বাংলানিউজকে অভিযোগ করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শাহজালাল হল ও শাহ আমানত হল দুটিতে অবস্থান করাদের মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
এর মধ্যে শাহ জালাল হলে পুরোটা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির অনুসারীদের দখলে। শাহ আমানত হলে কিছুদিন আগে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক অুনসারীরা ভাগাভাগি করে থাকলেও বর্তমানে সাধারণ সম্পাদক অনুসারীরা এককভাবে থাকছেন।
সোহরাওয়ার্দী, আলাওল, এ এফ রহমান, আব্দুর রব ও মাস্টারদা সূর্য সেন হলের অবস্থাও একই। এসব হলগুলোতে বেশিরভাগই ছাত্রলীগের দুই নেতার অনুসারীরা থাকেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি হলের প্রাধ্যক্ষের কাছে তাদের হলে কতজন বৈধ ও অবৈধ শিক্ষার্থী অবস্থান করছেন জানতে চাইলে তারা সঠিক পরিসংখ্যান দিতে পারেন নি। কেউ কেউ পরিসংখ্যন দিলেও নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, স্ব-স্ব হলে ফিরে যাওয়ার জন্য ও বৈধ উপায়ে থাকতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে বারবার বলা হয়েছে। কিন্তু তারা কোনো ইতিবাচক সাড়া দেয়নি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু বাংলানিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেটা বলছে সেটা সঠিক নয়। বরং আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বলেছি স্ব-স্ব হলে অ্যালটমেন্ট দিতে। ’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সুজনের বক্তব্যও একই।
জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ কমিটির প্রধান ও শাহ জালাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে থাকছে তাদের আমরা তালিকা করেছি। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেছি। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বাংনিউজকে বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের স্ব-স্ব হলে যাওয়ার জন্য বলেছে। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে কোনো ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি’।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. কামরুল হুদা বাংলানিউজকে বলেন, ‘যারা অবৈধভাবে থাকছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে স্ব-স্ব হলের প্রশাসনকে আগে থেকে বলা আছে। ’
বাংলাদেশ সময়:১৩২৬ ঘণ্টা, ২৫ডিসেম্বর ২০১৬
জেইউ/টিসি