তিনি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের টানা তিনবারের মেয়র।
১৯৪৪ সালের ১ ডিসেম্বর রাউজানের গহিরা গ্রামের বক্স আলী চৌধুরী বাড়িতে জন্ম মহিউদ্দিন চৌধুরীর।
এরপর শ্রমিক রাজনীতিতে যুক্ত হন মহিউদ্দিন চৌধুরী। যুবলীগের নগর কমিটির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন তিনি। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হলে প্রতিশোধ নিতে মৌলভী সৈয়দের নেতৃত্বে ‘মুজিব বাহিনী’ গঠন করেন। ওই সময় ‘চট্টগ্রাম ষড়যন্ত্র মামলা’র আসামি করা হলে তিনি কলকাতায় চলে যান। এরপর ১৯৭৮ সালে দেশে ফেরেন।
মহিউদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রামে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন, বন্দর রক্ষা আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনেও নেতৃত্ব দিয়েছেন। প্রায় দুই যুগ মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক থাকার পর ২০০৬ সালের ২৭ জুন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। মেয়র থাকাকালীন তার চশমা হিলের বাসা ছিল সবার জন্য উন্মুক্ত।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর বেওয়ারিশ মরদেহ নিজ কাঁধে বহন করে দাফন ও সৎকার করেছেন। অস্থায়ী হাসপাতাল বানিয়ে চিকিৎসকদের মাধ্যমে শত শত ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছেন। কালুরঘাটে গার্মেন্টসে আগুনে পুড়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিকের মৃত্যু ও বন্দরটিলায় সংঘর্ষে নিহত ব্যক্তিদের দাফন-সৎকারে সবার আগে এগিয়ে এসেছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী।
এরশাদ সরকারের শাসনামলের শেষদিকে গ্রেফতার হয়েছিলেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। এর প্রতিবাদে অচল হয়ে পড়েছিল পুরো চট্টগ্রাম। ১৯৯৬ সালেও তিনি গ্রেফতার হয়েছিলেন। মুহুর্তের মধ্যে প্রতিবাদে চট্টগ্রামের মানুষ নেমে পড়েছিল রাস্তায়।
মহিউদ্দিন চৌধুরী রাজনীতির পাশাপাশি মেয়র হিসেবেও সাফল্য দেখিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের তিনি ‘সেবক’ নাম দিয়েছিলেন। যখনই সাধারণ মানুষের অধিকার হরণ হয়েছে, চট্টলবীর গণমানুষের এই নেতা তাৎক্ষণিকভাবে তার প্রতিবাদ করেছেন।
১৯৯০ সাল থেকে প্রতিবছর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় মেজবানের আয়োজন করেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। তার মৃত্যুর পর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বর্তমানে এ আয়োজনে সমন্বয় করছেন বড় ছেলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, শিক্ষা উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। প্রতিবছর সেই মেজবানে খাওয়ানো হয় ৪০ হাজার মানুষকে।
মহিউদ্দিন চৌধুরী কখনও চট্টগ্রাম ছেড়ে থাকতে পারেননি। মন্ত্রী ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়ার প্রস্তাব তিনি সানন্দে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি চট্টগ্রামবাসীকে নিজের আত্মীয়ের মতো ভালবাসতেন। ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর হৃদযন্ত্র ও কিডনির জটিলতায় নগরের একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। চট্টলদরদী এই মহান মানুষটিকে হারিয়ে সেদিন চট্টগ্রামবাসী কেঁদেছে, এখনও কাঁদছে তার গুণগ্রাহীরা।
নগর আওয়ামী লীগের কর্মসূচি
রোববার (১৫ ডিসেম্বর) চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা, চট্টলবীর এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ২য় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মহানগর আওয়ামী লীগ ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছেন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকাল ৯টায় চশমা হিলস্থ মরহুমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও জিয়ারত, সকাল ১১টায় কাজীর দেউড়ি ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে আলোচনা সভা। সভায় প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমির হোসেন আমু এমপি। সভাপতিত্ব করবেন মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী। কর্মসূচিতে মহানগর আওয়ামী লীগের সকল কর্মকর্তা, সদস্য, থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগসহ সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন আহ্বান জানিয়েছেন।
এদিকে বিকেল ৪টায় মুক্তিযুদ্ধের বিজয়মেলা পরিষদ আয়োজিত মহিউদ্দিন চৌধুরীর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হবে।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৪, ২০১৯
টিসি