ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

‘শেষ ঠিকানায় আইসাও শান্তি নাই’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০২১১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০২০
‘শেষ ঠিকানায় আইসাও শান্তি নাই’ ছিন্নমূল মানুষের শীতের কষ্ট। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: মিসকিন শাহ মাজার সংলগ্ন কবরস্থানের পাশে শুয়ে ছিলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষটি। রাতে শীতের তীব্রতায় পাতলা কম্বল গায়ে জড়িয়েও পারছিলেন না কষ্ট সহ্য করতে। কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলে চেঁচিয়ে ওঠেন তিনি। বললেন- নাম দিয়া কাম কি? শেষ ঠিকানায় আইসাও শান্তি নাই। কম্বল দিবা নাকি?

মিসকিন শাহ মোল্লা (র.) চট্টগ্রামে আগত সুফি দরবেশদের একজন। মহসিন কলেজের বিপরীত দিকে পাহাড়ের ওপর শাহী মসজিদের পাশে তার মাজার।

মাজার সংলগ্ন কবরস্থান। এই মাজার ঘিরে ছিন্নমূলদের আনাগোনা থাকে সবসময়।

ছিন্নমূল মানুষের শীতের কষ্ট।  ছবি: বাংলানিউজ

এছাড়া জিইসি মোড়ের গরীব উল্ল্যাহ শাহ, পাথরঘাটার বদর শাহ, হালিশহরের মনির উদ্দিন রুহুল্লাহ ও বশির শাহ মাইজভাণ্ডারী, হযরত আলী শাহ, নুর আলী শাহ, দক্ষিণ কাট্টলীর আব্দুল আলী শাহ, কর্নেল হাটের মঈন উদ্দিন শাহ, অক্সিজেন এলাকার শের এ বাংলা শাহ মাজার সহ নগরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে থাকা মানুষের কষ্টের শেষ নেই।

বিবিএসের সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী, দেশে মোট বস্তির মধ্যে ১৬ শতাংশ বা ২ হাজার ২১৬টি ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকায়। এসব বস্তিতে ছিল মোট ১ লাখ ২৮ হাজার পরিবার। গত চার বছরে এসব পরিবারের সংখ্যা হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

ছিন্নমূল মানুষের শীতের কষ্ট।  ছবি: বাংলানিউজ

এছাড়া নগরের ১৫ লাখ ভাসমান মানুষের জন্য নেই পর্যাপ্ত টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রায় ১০-১৫ লাখ মানুষ নগরে দৈনন্দিন কাজ সেরে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে যায়। শীতের রাতে ঝুঁকি নিয়ে সড়কদ্বীপে কম্বল গায়ে ভাসমান মানুষদের শুয়ে থাকতে দেখা গেছে।

নগরের সিআরবি এলাকা, নিউ মার্কেটের পাশে ও জিপিও ভবনের নিরাপত্তা দেয়াল ঘেঁষে ফুটপাতে, টাইগার পাস মোড়ের বস্তিতে, দেওয়ানহাট এলাকায় রেললাইনের দুই পাশে, জহুর আহমেদ স্টেডিয়াম, আগ্রাবাদ হোটেলের পাশে গড়ে উঠা বিভিন্ন বস্তিতেও বসবাসকারী ভাসমান মানুষদের এখন দুর্ভোগের শেষ নেই।

ছিন্নমূল মানুষের শীতের কষ্ট।  ছবি: বাংলানিউজ

রেল স্টেশনে থাকেন জমিলা খাতুন। শীতে কাঁপছিলেন তিনি। অসহায় এ মানুষ গরম কাপড়ের অপেক্ষায়। খোলা আকাশের নিচে বাস করা অনেক মানুষের কাছে শীত আসে কষ্ট নিয়ে। কোথাও শীতের তীব্রতা সহ্য করতে না পেরে কুকুরও আশ্রয় নিয়েছে এসব মানুষের পাশে, একটু উষ্ণতা পাওয়ার আশায়। ফুটপাত-বস্তিতে থাকা মানুষের শীত নিবারণে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে বিতরণ করা হচ্ছে শীতবস্ত্রও।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) ভাসমান জনগোষ্ঠীর সুবিধার্থে আধুনিক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে।

বাংলাদেশ সময়: ২১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৯, ২০২০
এসএস/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।