ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সভা-সমাবেশেই সীমাবদ্ধ ছিল বিএনপির কার্যক্রম

জমির উদ্দিন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২১৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
সভা-সমাবেশেই সীমাবদ্ধ ছিল বিএনপির কার্যক্রম ফাইল ছবি।

চট্টগ্রাম: কাজির দেউড়ির নাসিমন ভবনে অবস্থিত নগর বিএনপির কার্যালয়ের সামনে ছোট একটি খোলা জায়গা। বোয়ালখালী আসনের উপ-নির্বাচন ও সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনের কয়েকটি সভা-সমাবেশ সহ ২০২০ সালে অধিকাংশ অনুষ্ঠান এই কার্যালয়ের সামনেই আয়োজন করেছে সংগঠনটি।

রাজপথে ছিল না কোনও কর্মসূচি।  

বড় আকারের যেসব সমাবেশ হয়েছে তাও করোনার প্রাদুর্ভাবের আগে।

দেশে করোনার সংক্রমণের পর এখনও পর্যন্ত বড় কোনো সমাবেশ করতে পারেনি নগর বিএনপি। তবে বিএনপি নেতাদের দাবি, করোনার সময় তারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে ত্রাণ বিতরণ করে মানুষের পাশে থেকেছেন। আর কার্যালয়ের বাইরে বড় সমাবেশ করতে না পারার কারণ হিসেবে পুলিশের বাধাকে দায়ী করেছেন।

নগর বিএনপি সূত্র জানায়, ২০২০ সালে ছোট-বড় যেসব সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে- এর মধ্যে ৯০ ভাগ কার্যালয়ের সামনে, বাকি ১০ ভাগ কার্যালয়ের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়েছে।  

কার্যালয়ে বিএনপির সভা-সমাবেশেও তেমন নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়নি। বিএনপির সভা চলাকালে যেখানে পুলিশের উপস্থিতি ছিলো ১৫-২০ জন, সেখানে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ২০-৩০ জন।

নগর বিএনপি কার্যালয়ের বাইরে যেসব সভা হয়েছে, সেগুলো চট্টগ্রাম-৮ (চান্দগাঁও-বোয়ালখালী) আসনের উপ-নির্বাচন ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে। এসব সভাও ছিলো স্বল্প সময়ের জন্য।

১৩ জানুয়ারি জাসদ নেতা মঈন উদ্দীন খান বাদলের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপ-নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান। ওই সময়ে নির্বাচন ঘিরে নগরের অলি-গলিতে গণসংযোগ করেছে বিএনপি।  

এছাড়া চলতি বছরের ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। করোনার কারণে ২১ মার্চ সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার আগ পর্যন্ত বিএনপি গণসংযোগ করে। কিন্তু লকডাউনের পর বিএনপি যে ঘরে ঢুকেছিলো, সেই থেকে এখন পর্যন্ত বের হতে পারেনি।

যদিও করোনার সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে ত্রাণ বিতরণ ও দলীয় নানান কর্মসূচিতে ওয়ার্ডগুলোতে সরব থেকেছে নগর বিএনপি। হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য অপসারণের হুমকি দিলে সেই ইস্যুতেও নিশ্চুপ ছিল বিএনপি।  

নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, করোনার সময় বড় কোনো সমাবেশ করতে না পারলেও, ত্রাণ কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলো নগর বিএনপি। করোনাকালে এক লাখ ২২ হাজার পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছি।

তিনি বলেন, কয়েকটি সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, সেখানে পুলিশ বাধা দিয়েছে। সর্বশেষ বাকলিয়ায় একটি সভা পুলিশের বাধার কারণে পণ্ড হয়ে যায়। আমরা এখন সিটি নির্বাচন উপলক্ষে আবারও মাঠে নেমেছি।  

বয়স্কদের নিয়ে নগর ছাত্রদলের কমিটি

কয়েকটি বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা নিয়েও ২০২০ সালে  আলোচনায় ছিলো বিএনপি। বিবাহিত গাজী সিরাজের বয়স ৪৮ ছুঁই ছুঁই আর বেলায়েত হোসেন বুলুর ৪৬। তারা এখন ছাত্র নন। ৩০ নভেম্বর সিরাজকে সভাপতি ও বুলুকে সাধারণ সম্পাদক করে নগর ছাত্রদলের আংশিক কমিটিকে ২৭২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা হয়।

কমিটিতে শুধু তারা দুজন নয়, দায়িত্ব পাওয়া বেশিরভাগ নেতার বয়স ৪৫ বছর পার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একদিকে বয়স, অন্যদিকে অছাত্র ও সুবিধাবাদীরা দায়িত্ব পাওয়ায় সমালোচনার ঝড় ওঠে নগর ছাত্রদলে। তাই কমিটি ঘোষণার পর নগর বিএনপি কার্যালয়ে আগুন দেন ক্ষুব্ধ ছাত্রদল নেতাকর্মীরা।

তাদের অভিযোগ, কমিটিতে ত্যাগী নেতারা মূল্যায়ন পায়নি। অছাত্র, মাদকাসক্ত ও মাদক ব্যবসায়ীদের দিয়েই ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া অনেক সুবিধাবাদী টাকার বিনিময়ে পদ পেয়েছেন বলে অভিযোগ ছিলো তাদের।

কমিটিতে অনেক ত্যাগী নেতা স্থান পায়নি, ওই সময়ে বিষয়টি স্বীকার করে গাজী সিরাজ কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করবেন বলে বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন।  

আলোচনায় বিএনপির দুই আহ্বায়ক কমিটি 

চলতি মাসের ২৩ ডিসেম্বর ডা. শাহাদাত হোসেনের নেতৃত্বে নগর এবং গোলাম আকবর খোন্দকারের নেতৃত্বে উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন দেয় বিএনপি। দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ৩৯ সদস্যের মহানগর কমিটি ও ৪৩ সদস্যের উত্তর জেলার আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ দুটি আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে তৃণমূলে ক্ষোভ দানা বাঁধে। এর মধ্যে উত্তর জেলার কমিটিতে ত্যাগী নেতাদের অনেকেই ঠাঁই পাননি বলে অভিযোগ। অন্যদিকে নগর কমিটিতে আরও কয়েকজন নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করার সুযোগ ছিল বলে মনে করেন সিনিয়র নেতারা।

উত্তর জেলার সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেনকে নতুন কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত না করায় তৃণমূলের নেতাকর্মীদের এই ক্ষোভ। তাদের দাবি, কয়েক বছর ধরে আন্দোলন-সংগ্রামে থেকেছেন তিনি। এছাড়া একাধিক রাজনৈতিক মামলায় জেলও খেটেছেন। তবুও কমিটিতে না থাকার কারণ হিসেবে দলীয় কলহকে দায়ী করেছেন তারা।

পাশাপাশি সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক চাকসু ভিপি মো. নাজিম উদ্দিনকেও আহ্বায়ক কমিটিতে না রাখায় সমালোচনার মুখে পড়ে এই কমিটি।

বাংলাদেশ সময়: ১২১২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০
জেইউ/এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।