চট্টগ্রাম: করোনা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে উদ্ভূত সংকট মোকাবিলায় চট্টগ্রামে সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কাজ করছেন প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। করোনা মোকাবিলায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয় নানান উদ্যোগ।
দিনমজুরদের বাড়ি বাড়ি খাবার বিতরণ
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারাদেশে দুই মাসের বেশি সময় অঘোষিত ‘লকডাউন’ জারি করে সরকার। এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন দরিদ্র দিনমজুরেরা।
চট্টগ্রামে করোনার প্রভাবে কর্মহীন হয়ে পড়া এ রকম দরিদ্র দিনমজুরদের বাড়ি বাড়ি চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেয় জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের প্রায় ১ লাখ দিনমজুর পরিবারকে শুকনো খাবার পৌঁছে দেওয়া হয় এ সময়ে।
৩৩৩-এ ফোন পেয়ে গভীর রাতে ত্রাণ
সরকারি তথ্য সেবা নম্বর ৩৩৩-এ ফোন পেয়ে নগরের বায়েজিদ থানার খাজা গরীবে নেওয়াজ লেন এলাকায় এক দিনমজুর পরিবারের জন্য গভীর রাতে ত্রাণ সহায়তা পাঠায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
শুধু ওই পরিবার নয়, মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোকে রাতের আঁধারে গোপনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দিতে আলাদা কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়। কন্ট্রোল রুমে ফোন পেয়ে কয়েক হাজার পরিবারকে রাতে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হয়।
সব হাসপাতালের তথ্য নিয়ে ওয়েবসাইট
করোনায় স্বাস্থ্যখাতে চাপ বাড়ে। সঠিক তথ্যের অভাবে রোগী নিয়ে এই হাসপাতাল থেকে ওই হাসপাতালে ঘুরতে হয় স্বজনদের। এই কারণে চট্টগ্রামের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতাল-ক্লিনিক থেকে সেবা প্রাপ্তির অনলাইন প্ল্যাটফর্ম হাসপাতাল তথ্য বাতায়ন ‘হসপিটাল ফাইন্ডার’ চালু করে জেলা প্রশাসন।
এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কোন হাসপাতালে কত বেড খালি, কোথায় কতটি আইসিইউ বেড আছে- তা জানা যায় ঘরে বসেই। এছাড়া মুঠোফোনে হাসপাতালের বেড বুকিংসহ জরুরি স্বাস্থ্য সেবা বিষয়ক সব তথ্য মিলে এই তথ্য বাতায়নে।
বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
করোনা সংক্রমণ শুরুর পর স্বাস্থ্যখাতে বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক হাসপাতাল রোগী ভর্তি না করিয়ে ফিরিয়ে দিতে থাকে। এই অবস্থায় স্বাস্থ্যখাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।
করোনা উপসর্গ কিংবা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফিরিয়ে দিলে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিলসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। এরপর বেসরকারি হাসপাতালে রোগী ভর্তি শুরু হয়।
মানুষকে ঘরে রাখতে মাঠে ম্যাজিস্ট্রেট
করোনায় মানুষকে ঘরে রাখতে রাত-দিন মাঠে কাজ করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।
এই সময়ে সরকারি নির্দেশনা না মেনে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসা লোকজনকে, বিদেশ থেকে এসে কোয়ারেন্টিন না মানা প্রবাসীদের জেল-জরিমানা করা হয়। লেকজন জড়ো হয়ে আড্ডা কিংবা সমাবেশ বন্ধ করা হয়।
একটি উদ্যোগ, ৫০০০ চাষীর মুখে হাসি
হাটহাজারীতে করোনার কোপে দিশেহারা প্রায় ৫ হাজার সবজি চাষীর মুখে হাসি ফোটায় উপজেলা প্রশাসনের একটি উদ্যোগ। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রুহুল আমিনের নির্দেশনায় করোনায় সরকারি চাল সহায়তার সঙ্গে নগদ বরাদ্দের টাকা দিয়ে নিজ নিজ এলাকার কৃষকের কাছ থেকে সবজি কিনে কর্মহীনদের মাঝে বিতরণ করেন সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানরা।
ইউপি চেয়ারম্যান ক্ষেতে গিয়ে প্রান্তিক চাষীদের কাছ থেকে বাজারদরে সরাসরি সবজি কেনার কারণে করোনাকালে সবজি বাজারে পাঠানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকা কৃষকরা ক্ষেতেই তাদের সবজি ন্যায্য দামে বিক্রি করতে সক্ষম হন। লোকসানের হাত থেকে বেঁচে যান।
সামাজিক দূরত্ব রক্ষায় খোলা মাঠে বাজার
নিত্যপণ্য কিনতে আসা লোকজনের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে আনোয়ারা উপজেলার সব হাট-বাজার খোলা মাঠে সরিয়ে নেয় প্রশাসন। উপজেলার ১৮টি হাট-বাজারের সবগুলো খোলা মাঠে সরিয়ে নেওয়া হয়।
আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জোবায়ের আহমেদ বাংলানিউজকে জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব অপরিহার্য। সপ্তাহিক হাট-বাজারে নিত্যপণ্য কিনতে আসা লোকজনের ভিড় থাকে। সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকে না। এ কারণে গ্রামের সব হাট-বাজার পাশের খোলা মাঠে সরিয়ে নিই আমরা।
দোকানের সামনে তিন ফুট দূরে দূরে গোলচিহ্ন
করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিদেশ ফেরত লোকজনের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশের প্রতিটি স্থানে লোকজনকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচলের নির্দেশনা দেয় সরকার। এ জন্য পুরো দেশে জারি করা হয় অঘোষিত ‘লকডাউন’।
সরকারি নির্দেশনা মেনে মানুষ বাড়িতে থাকলেও ওষুধ, কাঁচা বাজার কিনতে বা জরুরি প্রয়োজনে বের হন অনেকে। জরুরি প্রয়োজনে বের হও্য়া এসব মানুষের সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে রাউজান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জোনায়েদ কবীর সোহাগ নেন ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। তার উদ্যোগে রাউজানের ওষুধ ও মুদির দোকানের সামনে অন্তত তিন ফুট দূরে দূরে গোলচিহ্ন এঁকে দেওয়া হয়। ক্রেতারা এসে এসব চিহ্নত স্থানে দাঁড়ান। সামনের ব্যক্তি কেনাকাটা সেরে গোলচিহ্নিত স্থান ত্যাগ করলেই পেছনের জন কেনাকাটার সুযোগ পান। এতে একজন অন্যজনের সংস্পর্শ ছাড়াই কেনাকাটার সুযোগ পান।
বাংলাদেশ সময়: ০৬১০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩০, ২০২০
এমআর/টিসি