চট্টগ্রাম: দেশের বিভিন্ন জেলায় শারদীয় দুর্গাপূজা চলাকালে মণ্ডপ-মন্দিরে তাণ্ডব, পূজা পরবর্তী হিন্দুদের ওপর সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অগ্নিসংযোগ ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা।
শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে, আসকারদীঘির পাড় এস এস খালেদ রোড, পাহাড়তলী কৈবল্যধাম এলাকা সহ বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদ চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগর, রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন, চট্টগ্রাম জেলা সৎসঙ্গ, শ্রীশ্রী রাম ঠাকুর সেবাশ্রম সহ বিভিন্ন সংগঠনের ব্যানার নিয়ে মানববন্ধনে যোগ দেন হাজারও মানুষ।
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধনে বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাশগুপ্ত বলেন, কুমিল্লার ঘটনায় ইকবাল হোসেন নামে যাকে শনাক্ত করা হলো তাকে ‘ভবঘুরে’ সাজিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হচ্ছে। এরকম যাদের ধরা হয়, কখনও বলে পাগল, না হয় ভবঘুরে সাজানো হয়।
তিনি পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার (২৩ অক্টোবর) সারা দেশে গণঅবস্থান, গণঅনশন ও বিক্ষোভে সবাইকে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ভোর ৬টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারাদেশে এ কর্মসূচি চলবে।
ঢাকার শাহবাগ ও চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা চত্বর, দেশের বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে কর্মসূচির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন পূজা উদযাপন পরিষদের নেতারাও।
বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদ চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ ও মহানগরের উদ্যোগে শুক্রবার (২২ অক্টোবর) সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, বাংলাদেশ ব্রাহ্মণ সংসদ কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় যুগ্ম সম্পাদক অর্পণ কান্তি ব্যানার্জী, সাংগঠনিক সম্পাদক পণ্ডিত দীলিপ চক্রবর্ত্তী, সমন্বয় পরিষদের সদস্য সচিব সমীর চক্রবর্ত্তী, মহানগর সাধারণ সম্পাদক পণ্ডিত আশুতোষ চক্রবর্ত্তী, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক মাস্টার উত্তম কুমার চক্রবর্ত্তী, সহ-সভাপতি সন্তোষ চক্রবর্ত্তী ও শ্যামল চক্রবর্ত্তী, মহানগর সহ-সভাপতি পণ্ডিত তপন ভট্টাচার্য্য, যুগ্ম সম্পাদক পণ্ডিত বিশ্বজিত চক্রবর্ত্তী (বিশু), দক্ষিণের যুগ্ম সম্পাদক দেবর্ষি চক্রবর্ত্তী, উত্তরের যুগ্ম সম্পাদক পণ্ডিত লিটন ভট্টাচার্য্য, দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক মনতোষ চক্রবর্ত্তী, আনোয়ারা উপজেলা কমিটির সভাপতি সম্ভু চক্রবর্ত্তী।
উপস্থিত ছিলেন কল্যাণ চক্রবর্ত্তী, রূপম চক্রবর্ত্তী, শিক্ষিকা সঙ্গীতা ব্যানার্জী, প্রাণজিৎ আচার্য্য, সুমন ভট্টাচার্য্য, ঝুন্টু চক্রবর্ত্তী, বিপ্লব ভট্টাচার্য্য, অনিক ব্যানার্জী, দোলন ভট্টাচার্য্য, বিজয় চক্রবর্ত্তী, কাঞ্চন চক্রবর্ত্তী, সঞ্জয় চক্রবর্ত্তী, অনুপ চক্রবর্ত্তী প্রমুখ।
চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমের সম্পাদক স্বামী শক্তিনাথানন্দ বলেন, বর্তমানে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন বিনষ্ট হচ্ছে তেমনি শান্তি ও প্রগতির পথও রুদ্ধ হতে চলেছে। আমরা সারাদেশে সংঘটিত অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার নিমিত্তে রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের ভক্ত-শুভানুধ্যায়ীরা মানববন্ধন করেছেন।
নোয়াখালীর চৌমুহনীতে শ্রীশ্রী ঠাকুর রামচন্দ্র দেবের সমাধি মন্দিরে তাণ্ডবের প্রতিবাদ জানিয়ে নগরের কৈবল্যধামের সামনে আয়োজিত মানববন্ধন শেষে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশ-বিদেশে সকল রাম ঠাকুরের ভক্ত ও আশ্রিতজনের কাছে মন্দিরটি পবিত্র ও শ্রদ্ধার স্থান। এই মন্দিরে নরপিশাচদের পৈশাচিক বর্বরতা ও ঠাকুরের সমাধিতে উঠে তাণ্ডব নৃত্য আমাদের হৃদয়কে রক্তাক্ত করেছে। এই সাম্প্রদায়িক অপশক্তিকে থামাতে তারা প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২২, ২০২১
এসি/টিসি