ঢাকা, শুক্রবার, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ মে ২০২৪, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সেলিনার চার মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন আ জ ম নাছির

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
সেলিনার চার মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিলেন আ জ ম নাছির ...

চট্টগ্রাম: সম্প্রতি পুলিশের উপহার হিসেবে পেয়েছেন ঘর। হয়েছে চার মেয়ের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই।

কিন্তু স্বামীহীন সংসারে দিন যাপনই ছিল কষ্টের। ঘর উপহার পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কান্না করেছিলেন সেলিনা আক্তার।
এবার তার চার মেয়ের লেখাপড়ার দায়িত্ব নিচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন।

সেলিনা আক্তারের বাড়ি হাটহাজারী উপজেলার গুমানমর্দ্দন গ্রামে। ১২ বছর আগে একদিন ঘর ছেড়েছিলেন সিএনজিচালক স্বামী মজিবুর রহমান। আর ফেরেননি। খোঁজ নেননি স্ত্রী আর চার মেয়ের। তখন থেকেই একাকী সংগ্রাম সেলিনার।

বড় মেয়ে ২০২০ সালে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিল। করোনা মহামারির প্রভাবে লকডাউন শুরু হলে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয়জনের এবার এসএসসি দেওয়ার কথা থাকলেও ফরম পূরণ করাতে পারেননি সেলিনা। তৃতীয় ও ছোট মেয়ে এবার যথাক্রমে নবম ও ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ছে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) রাতে নিজ বাসায় সেলিনা আক্তারকে ডেকেছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। এর আগে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সেলিনার বক্তব্য দেখে আগ্রহী হয়েছিলেন তিনি। জেলা পুলিশ লাইন্সে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে চট্টগ্রাম প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হয়েছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে আ জ ম নাছির উদ্দীনও উপস্থিত ছিলেন।

সেলিনার সঙ্গে সাক্ষাতে মাহে রমজান উপলক্ষে নগদ ৫০ হাজার টাকা উপহার দেন আ জ ম নাছির। চার মেয়ের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতে চান তিনি। এছাড়া জীবনধারণের জন্য রিকশা কিনে দেওয়ার প্রস্তাব দেন তিনি।  

উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বাংলানিউজকে এসব তথ্য জানিয়েছেন সেলিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমি আজ উনার বাসায় গেছিলাম। উনি আমাকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছেন। আর বলেছেন যে আমার মেয়েদের পড়াশোনার সব খরচ উনি চালাবেন। আমি রাজি হয়েছি। ’

মেয়েরা পড়াশোনায় আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার মেয়েরা পড়তে চায়। কিন্তু আমি তো পারি না, সামর্থ্যহীন। পড়াশোনার জন্য আগ্রহী ওরা। বড় মেয়েটা ভালো আর্ট করে। ’

তিনি বলেন, ‘আমার সংসার কীভাবে চলবে, সেটা নিয়ে বলেছেন তিনি (নাছির)। যদি এলাকার মধ্যে মানুষ পাই, তাহলে রিকশা উনি দেবেন। কী করা, আল্লাহ মালিক, আল্লাহর ওপর ভরসা। ’

নিজের জীবন সংগ্রামের কথা জানিয়েছেন সেলিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমার ছোট মেয়েটা যখন তিন মাস বয়স, তখন সে (স্বামী) আমাদের ফেলে চলে গেছে। তখন আমার মেয়েগুলো ছোট ছোট। বেঁচে আছি, না মারা গেছি, কোথায় আছি খোঁজই নেয়নি। ছোট মেয়েটা বাবা কী সেটাই জানে না। তখন থেকেই অনেক পরিশ্রম করে তাদের বড় করেছি। প্রায় ১২ বছর চলছে। অনেক কষ্টে জীবনযাপন করেছি। আমার কোনো ঘরবাড়ি ছিল না। পুলিশ আমাকে একটা ঘর করে দিয়েছে। মানুষের সহযোগিতায় আজকে আমি চলছি। আমার এলাকার চেয়ারম্যান-মেম্বারও আমাকে অনেক সহযোগিতা দিছে। ’

মেয়েদের পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ায় সাবেক চসিক মেয়র আ জ ম নাছিরের বেশ তারিফ করলেন সেলিনা আক্তার। তিনি বলেন, ‘আমি তো কখনো উনাকে দেখিনি। পুলিশের মাধ্যমে উনাকে দেখছি। ’  

জানা যায়, রোববার সেলিনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দুঃখ-দুর্দশার কথা জানানোর সময় পুলিশ ‍সুপারকে নিজের সহায়তার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন আ জ ম নাছির। পুলিশ সুপার ডিআইজির সঙ্গে পরামর্শ সাপেক্ষে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) মো. জাহাঙ্গীরকে দায়িত্ব দেন। পরে জাহাঙ্গীর সেলিনাকে নাছিরের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন। মঙ্গলবার হাটহাজারী থানার এসআই আকরাম সেলিনাকে নাসিরের কাছে নিয়ে যান।

এর আগে গত রোববার প্রধানমন্ত্রীকে সেলিনা বলেছিলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনার কথা মতো বাংলাদেশ পুলিশ আমাকে জমিসহ একটা সুন্দর বাড়ি করে দিয়েছে। এখন আমি মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছি। আমার মেয়েগুলো আশ্রয় পেয়েছে। আমি অনেক দুশ্চিন্তায় থাকতাম। মেয়েগুলো আস্তে আস্তে বড় হচ্ছে। আমি কোথায় রাখবো ওদের, কীভাবে আশ্রয় দেবো। আপনার কথা মতো আজ পুলিশ আমাদের একটা ঘর করে দিয়েছে। এতে আমি অনেক খুশি এবং অনেক আনন্দিত। ’

আ জ ম নাছির উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, ‘আবাসন কার্যক্রমের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীকে বলা ওই নারীর কথাগুলো শুনে তার পাশে দাঁড়ানোর চিন্তা করি। আমি মেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ আজীবন পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি তাকে। অনুরোধ করেছি যেন যেকোনো প্রয়োজনে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। ’

মুজিববর্ষ উদযাপনে ২০২০ সালে নানা পরিকল্পনা নিয়েছিল বাংলাদেশ পুলিশ। কিন্তু করোনার কারণে সেসব পুরোপুরি বাস্তবায়ন না হওয়ায় বেশ কিছু অর্থ থেকে যায়। সেখান থেকে গৃহহীনদের জন্য গৃহ নির্মাণ করে প্রধানমন্ত্রীর আবাসন কার্যক্রমে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুলিশ।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০২২
বিই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।