ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

বিনা দোষে কারাগারে কনডেম সেলে ৭ বছর!

মিনহাজুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২৫৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৩, ২০২২
বিনা দোষে কারাগারে কনডেম সেলে ৭ বছর! প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রাম: লোহাগাড়া থানার জানে আলম হত্যা মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন।  তার খালাস পাওয়ার আদেশ যথাসময়েই উচ্চ আদালত থেকে পৌঁছেছে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালতে।

 কিন্তু আদেশ কারা কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেনি ৭ বছর ৩ মাস ১১ দিনও।  একটি মামলায় ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত হাজিরা দিতে আসলে আবুল কাশেমকে শোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।
 সেই দিন থেকে কারাগারের কনডেম সেলে আছেন আবুল কাশেম।  আবুল কাশেম, লোহাগাড়া থানার আমিরাবাদ ইউনিয়নের রাজঘাটা আমিরখান চৌধুরী পাড়ার বেলায়েত আলীর ছেলে।

আদালত সূত্র জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ মার্চ রাজঘাটা আমিরখান চৌধুরী পাড়ায় জানে আলেম হত্যা মামলার আসামি ছিলেন আবুল কাশেম।  লোহাগাড়া থানার মামলা নম্বর ২১ (৩১.০৩.২০০২) ও দায়রা নম্বর ৩০৮/২০০৪।  ১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত ২০০৭ সালের ২৪ জুলাই আবুল কাশেমসহ ১২ জন আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও ৮ জন আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।  আবুল কাশেম রায়ের সময় পলাতক ছিলেন।  হাইকোর্টে ডেথ রেফারেন্স নম্বর ৫৪/২০০৭।  গত ২০১৩ সালের ১১ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এ.কে.এম. আসাদুজ্জামান ও শহীদুল করিমের বেঞ্চ ডেথ রেফারেন্স শুনানীতে আসামি আবুল কাশেমকে খালাস প্রদান করেন।  ২০১৩ সালের ১১ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট বিভাগের রায়ে পলাতক আবুল কাশেমের করণির ভুলের কারণে কার্যকর অংশে অন্তর্ভুক্ত না হওয়াতে একই বেঞ্চ বিগত ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সম্পূরক আদেশে আবুল কাশেমকে খালাস প্রদানের বিষয়ে সুস্পষ্ট আদেশ দেন।  অন্য একটি মামলায় ২০১৫ সালের ১৪ এপ্রিল অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত হাজিরা দিতে আসলে আবুল কাশেমকে শোন এ্যারেস্ট দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়।  সেই থেকে আবুল কাশেম চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের কনডেম সেলে রয়েছে।  

কারাগারে থাকা আবুল কাশেমের বোন শাহেদা বেগম সাজু বাংলানিউজকে বলেন, দীর্ঘ ৭ বছর  তিন মাস ১১দিন বিনা বিচারে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের ৬ নম্বর কনডম সেলে আছে আমার ভাই। আমার ভাইয়ের মুক্তি চাই, এভাবে বিনা বিচারে আর কত দিন কারাগারে থাকবে? দেশে কি আইনের শাসন নেই? আমার ভাই বিনা বিচারে কারাগারে থাকাটার সময়টা কেউ কি ফিরিয়ে দিতে পারবে?

আবুল কাশেমের ছেলে ইফতেখার হোসেন নোহাশ বাংলানিউজকে বলেন, আমার বাবা দীর্ঘদিন বিনা বিচারে কারাগারে আছেন।  তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। একটি মামলা ছিল,সেটাতে জামিন ছিলেন।  আমার বাবার মুক্তি চাই।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী সেলিম উল্লাহ চৌধুরী জানান, জানে আলম হত্যা মামলায় হাইকোর্টে ২০১৩ সালে একটি আদেশ হয়েছে, সেখানে রায়ের অপারেটিভ অংশে আসামী আবুল কাশেমের বিষয়ে কোন মন্তব্যই করা হয়নি।  পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সম্পূরক আদেশে আসামী আবুল কাশেমের বিষয়ে ক্লিয়ার করে তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।  ২০১৩ সালের হাইকোর্টের রায় কপি সংশ্লিষ্ট কোর্টে পাওয়া গেলে ও ২০১৬ সালের সম্পূরক আদেশের কপি না পাওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।  আমাকে আমার মক্কেল ২০১৬ সালের রায়ের সার্টিফাইড কপি এনে দিয়েছেন।  ওই আদালতের বেঞ্চ সহকারীসহ সকল স্টাফ নথি খুঁজে পেতে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।  আমার মক্কেল আমাকে জানিয়েছেন তিনি হাইকোর্টে তাদের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীর সাথেও যোগাযোগ করছেন।  আগামী দু'এক দিনের মধ্যে বিষয়টির ইতিবাচক সমাধান হবে বলে আমি আশা করছি।

তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মামলাটি এসেছে মাস দেড়েক আগে।  ইতিপূর্বে কি হয়েছে বলতে পারবোনা।  আমার জুনিয়র আজ এই বিষয়ে আদালতে গিয়েছিলেন,সংশ্লিষ্ট পেশকার আগামীকাল নথি বের করে শুনানির জন্য দরখাস্ত উপস্থাপন করবেন বলে আমার জুনিয়রকে জানিয়েছেন।
 
আদালতের এডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর দিনমনি দে বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনা সম্পর্কে আমি অবগত নই।  আগামীকাল আদালতে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো।  

আদালতের বেঞ্চ সহকারী নিজাম উদ্দীন বাংলানিউজকে বলেন, আবুল কাশেমের আপিলটা ২০১৬ সালে নিস্পত্তি হয়েছে।  তখন আমি এই কোর্টে ছিলামনা।  হাইকোর্টের আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত কোন ধরণের মন্তব্য করা যাবেনা।  কাশেমের পক্ষে একটি আবেদন দিয়েছে, সেটি বৃহস্পতিবার (৪ আগস্ট) শুনানি করা হবে।  

সুশাসনের জন্য নাগরিক চট্টগ্রামের সম্পাদক আখতার কবির চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিনা অপরাধে কোন আসামি একদিনের জন্য কারাগারে থাকা এর চেয়ে দু:খ জনক  বিষয় কিছু হতে পারেনা।  কোনও কর্তৃপক্ষ কারাগারের সময়টা ফিরিয়ে দিতে পারবেনা।  খালাসের পর কারাগারে থাকা মানুষের জীবন নিয়ে তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।  এটা খুবই দু:খজনক ও বেদনা দায়ক।  দ্রুত সমেয়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাই।

বাংলাদেশ সময়: ২২৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ০৩, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।