ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বেড়েছে কর্ণফুলী নদীর গভীরতা

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
ক্যাপিটাল ড্রেজিং, বেড়েছে কর্ণফুলী নদীর গভীরতা ...

চট্টগ্রাম: ২০১১ সালে মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ’র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। কাজ শুরুর দুই বছরের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়।

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে সেই কাজ শেষ করতে যাচ্ছে সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের সিস্টার কনসার্ন ই-ইঞ্জিনিয়ারিং।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সঙ্গে ২০১৮ সালের মে মাসে কর্ণফুলীর ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ করার সময় নদীর তলদেশ থেকে পলিমাটি উত্তোলনের কথা ছিল ৪২ লাখ ঘনমিটার।

ওই বছরের ১৭ অক্টোবর ড্রেজিংয়ের কাজ শুরু হয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল ২০২২ সালের মে মাস পর্যন্ত। প্রকল্পটি সংশোধনের পর পলিমাটি তোলা হচ্ছে ৫১ লাখ ঘনমিটার। ফলে প্রকল্পের ব্যয় ২৫৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২৯৫ কোটি টাকা হয়েছে।  

মালয়েশিয়ান মেরিটাইম অ্যান্ড ড্রেজিং করপোরেশন কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হওয়ায় মূল ঠিকাদার স্থানীয় এক এজেন্টকে প্রকল্পের সাব-কন্ট্রাক্টর নিয়োগ করে। কিন্তু তাদের কাজে দক্ষতা না থাকার কারণে ২০১৩ সালে বন্দর কর্তৃপক্ষ মালয়েশিয়ান মেরিটাইম এর সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে বাধ্য হয়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলে প্রতিষ্ঠানটি আদালতে মামলা দায়ের করে। ফলে আইনি জটিলতায় বন্ধ হয়ে যায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রকল্পের নাম পরিবর্তন করে পুনরায় ড্রেজিং শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়। বর্তমানে ‘সদরঘাট টু বাকলিয়ার চর ড্রেজিং প্রকল্প’ নামে ক্যাপিটাল ড্রেজিংয়ের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

বুয়েটের সমীক্ষায় কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ১৩ ফুট পর্যন্ত পলিথিন থাকার ধারণা নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও পলিথিনের স্তর মিলেছে ২১ ফুট পর্যন্ত। এজন্য ২০১৯ সালের মার্চে চীন থেকে ৩২ ইঞ্চি ব্যাসের সাকশন ড্রেজার এনেও কাজ চলমান রাখা যায়নি। পরে দেশিয় গ্র্যাব ড্রেজার দিয়ে খনন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।

কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ হওয়ায় সদরঘাট থেকে বাকলিয়া নদীর এই অংশে ৪ মিটার গভীরতা বেড়েছে। এর সুফল পাবে বন্দর। জেটিতে ভিড়তে পারবে বড় জাহাজ, লাইটার জাহাজ বেশি পরিমাণে নদীতে নোঙর করতে পারবে এবং নদীর তীরে সদরঘাট এলাকায় চালু হবে ৪টি লাইটার জেটি। ফলে বহির্নোঙর থেকে পণ্য জেটিতে নামানো সহজ হবে। খরচও কমবে পণ্য খালাসে। এছাড়া নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পেলে লাইটারেজ জাহাজ চলাচল এবং বন্দরের অন্যান্য কার্যক্রমে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে।  

এদিকে কর্ণফুলী নদীর ক্যাপিটাল ড্রেজিং হওয়ায় নদীর পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বর্ষায় শহরে জলাবদ্ধতা কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

চট্টগ্রাম বন্দরের চিফ হাইড্রোগ্রাফার ও প্রকল্প পরিচালক কমান্ডার মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ক্যাপিটাল ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ চূড়ান্ত হস্তান্তর করার জন্য বুয়েটের তত্ত্বাবধানে জরিপ কার্যক্রম চলছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্পের অধীনে ৫১ লাখ ঘনমিটার মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ পলিথিনের আবর্জনা রয়েছে। ড্রেজিংয়ের ফলে সদরঘাট থেকে বাকলিয়া নদীর এই অংশে ৪ মিটার গভীরতা বেড়েছে। নদীর এই গভীরতা ধরে রাখতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলমান থাকবে।

শহরের ময়লা আসা বন্ধ না হলে এক বছর পরই আগের অবস্থায় ফিরে যাবে কর্ণফুলী নদী। তাই নদীতে যেন ময়লা না আসে সেজন্য সিডিএ ও সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩১, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।