ঢাকা, রবিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ক্যাম্পাসে মাদক ঠেকাতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ 

মিনহাজুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০২২
ক্যাম্পাসে মাদক ঠেকাতে প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ  ...

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবাধে ঢুকছে মাদক। কিন্তু নজরদারি নেই কর্তৃপক্ষের।

ফলে মাদকাসক্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা, নষ্ট হচ্ছে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ। অপরাধবিজ্ঞানীরা বলছেন, মাদকের রুট চিহ্নিত করে এখনই ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে ক্যাম্পাসে অপরাধ প্রবণতা বাড়ার পাশাপাশি বাড়বে নৈতিক অবক্ষয়।

এদিকে মাদকের চাহিদা বাড়ায় ক্যাম্পাস ঘিরে মাদক ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটও দিন দিন বড় হচ্ছে। করোনা মহামারির পর উল্লেখযোগ্য কোনো অভিযান না হওয়ায় কর্তৃপক্ষের নির্লিপ্ততার সুযোগে আরও সরব হয়েছে মাদকের সিন্ডিকেট।

বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা তথ্যমতে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের পশ্চিম পাশ, শাহজালাল ও শাহ আমানত হলের সামনের বেশ কয়েকটি কটেজ, বিশ্ববিদ্যালয় রেলস্টেশনের পূর্বপাশে, আইন অনুষদ ক্যান্টিনের পাশে, এএফ রহমান হলের বিপরীতে ট্যাঙ্কির পাহাড়, টেনিস কোর্ট, স্লুইস গেইট, চবি কলেজের পেছনে, জাদুঘরের সামনে, ফরেস্ট্রি হেলিপ্যাড, ফরেস্ট্রি গ্যারেজের পেছনে, কলা অনুষদ ঝুপড়ির পাশের পুকুর, চাকসুর পেছনে, প্রাইমারি স্কুল ও হিলসাইড স্কুলের গলির ভেতর, লেডিস ঝুপড়ির পেছনে, শহীদ মিনার চত্বর এবং মুক্তমঞ্চে আড্ডায় বসে মাদকসেবনের আসর। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে অবাধে চলে মাদক সেবন। এমন পরিস্থিতিতে মাদক প্রতিরোধে প্রশাসনের তদারকি বাড়ানোর তাগিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে অবাধে মাদক সেবনের সুযোগে বহিরাগত মাদকসেবীরাও এখন ক্যাম্পাসে ঢুকছে দল বেঁধে। বহিরাগতদের বড় একটি অংশ ক্যাম্পাসের পাশের জোবরা গ্রাম, রেলগেইট, মদনহাট, ফতেয়াবাদ এলাকা থেকেই আসছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত পার্বত্য অঞ্চলের কিছু শিক্ষার্থীও মাদক সরবরাহের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। যার ফলে সন্ধ্যা হলেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে নিয়মিত বসছে মাদকের আসর। সম্প্রতি মাদকসেবন করে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক হলে মাতলামো করতেও দেখা গেছে অনেককে।  

মাদক নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষের করণীয় প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক মো. সাখাওয়াত হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, ক্যাম্পাসে মাদক ব্যবসা ঠেকাতে হলে এটি আসার পথ বন্ধ করতে হবে। এজন্য সিসিটিভি ক্যামেরা, নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আগের করা মাদক মামলার বিচার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হবে। শনাক্ত করতে হবে কোন কোন সড়ক ব্যবহার করে চট্টগ্রাম শহরে মাদক আসে। সব রাস্তা ব্যবহার করে তো আর মাদক আসে না। কিছু কিছু বিশেষ রাস্তা আছে, সেখান থেকে মাদক আসে। সেটা শনাক্ত করতে হবে। সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে।  

‘যে রাস্তা দিয়ে মাদক আসে সেই রাস্তাগুলোতে সিকিউরিটি ফোর্স বা পুলিশ সদস্যদের ডিউটি দিতে হবে। পুরো ২৪ ঘন্টা ডিউটি দিতে না পারলেও যে সময়টাতে মাদক আসে সেই সময়টায় ডিউটি দিতে হবে। যারা মাদক উৎপাদন, পাচার করে ও সেবনের সাথে জড়িত থাকে এই তিন ধরনের মানুষকে কেউ না কেউ সমর্থন করে বা বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। যারা শুধু মাদক পাচার করে তাদেরকে পাচার কাজের জন্য কিছু টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু এর মূল টাকা অন্য একজন নিয়ে নেয়। পাচারকারী ধরা পড়লে তাকে আমরা শাস্তি দিই কিন্তু এর মূল হোতাকে শনাক্ত করতে হবে’ বলেন তিনি।

চবি ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের প্রভাষক মো. মাজহারুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, অপরাধ বিজ্ঞানে র‌্যাশনাল চয়েস থিওরি নামে একটি থিওরি আছে। কেউ যদি অপরাধ করে, তাহলে অপরাধের লাভ-ক্ষতি জেনে অপরাধ করে। কোনো অপরাধে যদি ক্ষতির চেয়ে লাভের অংকটা বেশি হয় তখন মানুষ অপরাধ করে। মাদক পাচারে অল্প পরিশ্রমে বেশি টাকা উপার্জন করা যায়। অভাবী কাউকে যখন মাদক ব্যবসার সাথে জড়াতে চায় তাহলে তা সহজেই সম্ভব। অনেক বড় বড় রাঘব বোয়ালরা অপরাধ করে পুলিশের খাতায় অন্যের নাম লিখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে।  

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও শাটলে করে মাদক আসে। ঐ ট্রেনে কিছু মাদক সরবরাহকারীও আসে। ওরা রাতে মাদক সরবরাহ করে। ওরা আসার পেছনে রয়েছে ওদের কাস্টমার। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি এমন সিস্টেম চালু করা হতো- শাটল ট্রেনে স্টুডেন্ট ছাড়া বহিরাগত কেউ উঠতে পারবে না, তাহলে মাদক পাচার অনেক কমে যাবে।  

চবি ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুল্লাহ মামুন বাংলানিউজকে বলেন, সাধারণত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা পড়তে আসেন, তাদের মধ্যে একটি বড় অংশ মধ্যবিত্ত। হতাশা, আর্থিক দৈন্যতা সহ নানান কারণে তাদের একটি মাদকাসক্ত হয়ে যায়। আবার বিত্তশালী শিক্ষার্থীদের পাল্লায় পড়েও অনেকে অন্ধকার পথে পা বাড়ায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সবসময় কঠোর। প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা প্রতিদিন রাতে গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে টহল দেন। হতে পারে মাদকসেবিরা আমাদের টহল শেষ হওয়ার পরে এসব করে।  

এছাড়া আবাসিক হলগুলোতে মাদক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আমরা হল প্রভোস্টদের বলেছি। হল কর্তৃপক্ষ যদি আমাদের সহযোগিতা চায় অথবা আমরা যদি কারও কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ বা তথ্য পাই তাৎক্ষণিক মাদকবিরোধী অভিযান চালাবো। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিং করার বিষয়টিও ভাবতে হবে আমাদের।

বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০২২
এমআই/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।