ঢাকা, বুধবার, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ০৩ জুলাই ২০২৪, ২৫ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

অ্যাসিডে দগ্ধ শ্যালক হাসপাতালে, অপরাধী দুলাভাই ঘুরছে প্রকাশ্যে 

মিজানুর রহমান, স্টাফ করসেপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭০৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
অ্যাসিডে দগ্ধ শ্যালক হাসপাতালে, অপরাধী দুলাভাই ঘুরছে প্রকাশ্যে 

চট্টগ্রাম: সারা শরীরে পোড়া ক্ষত, হাতে ব্যfন্ডেজ। শুকিয়ে আসা এসব ক্ষত জুড়ে অসহ্য চুলকানি।

কিন্তু চাইলেও হাত লাগাতে পাড়ছেন না তিনি। এমনই দুঃসহ যন্ত্রণায় হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছেন অ্যাসিডে দগ্ধ টিটু বড়ুয়া।
 

আপন দুলাভাইয়ের ছোঁড়া অ্যাসিডে দগ্ধ হয়ে গত ২৬ অক্টোবর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। এক মাস ধরে চলছে চিকিৎসা। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হননি । সর্বশেষ বুধবার (২৩ নভেম্বর) করা হয় সার্জারি।  

চমেক হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, টিটুর অবস্থা আগের চেয়ে ভালো রয়েছেন। তাঁর পায়ের টিস্যু নিয়ে হাতে ঝলসে যাওয়া অংশে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অন্যান্য ক্ষতগুলোও প্রায় শুকিয়ে এসেছে। আশা করছি কয়েক দিনের মধ্যে ছেড়ে দিতে পারবো। এর আগে তাঁর আরেক ভাইকে কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়ে।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দগ্ধ টিটু বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, দোকান থেকে রাতে ফেরার পথে আমাকে এবং আমার চাচাত ভাই দিপক বড়ুয়াকে আমার ভগ্নিপতি অ্যাসিড ছুঁড়ে মারে। পরে উদ্ধার করে স্থানীয়রা কক্সবাজার মেডিক্যালে পাঠায়। সেখান থেকে আমাদের চমেক হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময় আমার ভগ্নিপতি আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছেন। এ ঘটনার মাস দুয়েক আগেও আমাকে এবং আমার চাচাত ভাই দিপককে ছুরিকাঘাত করেন। সৌভাগ্যক্রমে আমি বেঁচে গিয়েছি। তিনি (ভগ্নিপতি) আরও একটি বিয়ে করায় আমাদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়। এরপর থেকে তিনি আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ।  

এদিকে, গত ২৮ অক্টোবর ভগ্নিপতি পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে অভিযুক্ত করে রামু থানায় মামলা দায়ের করেন টিটু বড়ুয়ার মা প্রকৃতা বড়ুয়া। ২০০২ সালের অ্যাসিড অপরাধ দমন আইনের ৫ (খ)/৭ ধারায় দায়ের করা এ মামলায় নিখিল বড়ুয়া ছাড়াও অজ্ঞাত আরও ৩ থেকে ৪ জনকে আসামি করা হয়। কিন্তু ঘটনার এক মাস পেরিয়ে গেলেও অভিযুক্ত ভগ্নিপতি নিখিল বড়ুয়াকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।  

মামলার অগ্রগতি জানতে চাইলে রামু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ আনোয়ারুল হোসাইন বাংলানিউজকে বলেন, অভিযুক্ত নিখিল বড়ুয়া বর্তমানে পলাতক রয়েছে। তাকে আটকের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে।

রামু থানার ওসি নিখিল বড়ুয়াকে পলাতক দাবি করলেও বর্তমানে বাড়ি আছেন এবং প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার। উল্টো মামলা তুলে নিতে পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন অভিযুক্ত নিখিল বড়ুয়া।  

টিটু বড়ুয়ার বাবা নিরধন বড়ুয়া বাংলানিউজকে বলেন, আমার ছেলে একমাস ধরে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এ ঘটনায় মামলা হওয়ার পরও প্রধান অভিযুক্তকে এখনও আটক করেনি পুলিশ। সে বিভিন্নভাবে হুমকি দিচ্ছে পরিবারের সদস্যদের।  

তিনি বলেন, আমার ছেলে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। অনেক কষ্ট করে আমাদের সংসার চলছে। এর আগেও আমার ছেলেকে ছুরিকাঘাত করেছিল নিখিল বড়ুয়া।  

মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা রামু থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) মোহাম্মদ আমীর হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, মামলাটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত চলছে। ইতোপূর্বে টিটু বড়ুয়া ও দিপক বড়ুয়ার উপর প্রথম দফা ছুরিকাঘাতের ঘটনায় করা মামলায় রিপন বড়ুয়া নামে এক আসামিকে আটক করা হয়েছে। রিপন বড়ুয়া অ্যাসিড হামলার সঙ্গেও সম্পৃক্ত। এছাড়া এ ঘটনার প্রধান আসামি নিখিলকে আটকের চেষ্টা চলছে এবং নিখিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।  

জানা গেছে, অভিযুক্ত পুলিশ কনস্টেবল নিখিল বড়ুয়াকে সম্প্রতি সিআইডি চট্টগ্রাম থেকে সিআইডি কুমিল্লা বিশেষ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে বদলি করা হয়।  

সিআইডি কুমিল্লার বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, কোনো পুলিশ সদস্য যদি অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকে, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ দেওয়া হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। তাছাড়া যদি কোনো মামলা হয়ে থাকে তাহলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা চাইলে অপরাধীকে গ্রেফতার করতে পারেন। আমাদের এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার নেই।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এমআর/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।