কলকাতা: কলকাতার তাপমাত্রা বিগত বছরগুলোকে ছাপিয়ে গিয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তথ্য মতে, শহরে ৪১ ডিগ্রি গরম থাকলেও অনুভূতি হবে ৪৩ ডিগ্রির মতো।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) ছিল বাইশ রোজা। নিউ মার্কেটের দোকানদাররা মনে করেছিল ১৫ থেকে ১৬ রোজার পর ফের ব্যাপক বাংলাদেশিদের আগমন ঘটবে। কিন্তু তেমনটা ঘটেনি। তাদের অভিমত, প্রকৃতির বিরূপ মনোভাবের কারণে, ঈদের কেনাকাটায় বাংলাদেশিদের সংখ্যা কমেছে। তবে একেবারেও বাংলাদেশি নেই বলাটাও ঠিক নয়। যে সব বাংলাদেশি আছেন এখন তারা বঙ্গবাসীর ভিড়ে মিশে গেছেন।
প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক বিশ্বে পোশাক শিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান একেবারে প্রথম সারিতে। বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কয়েক হাজার কোটি টাকার পোশাক বিদেশে রপতানি হয়। এই পোশাক শিল্পের জন্যেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক কাঠামো অনেকটা চাঙ্গা হয়। তবুও বাংলাদেশিদের পোশাকের জন্য পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা অনেকটাই ভরসা। ঈদের কারণে প্রচুর বাংলাদেশি কলকাতায় আসেন শপিং করতে।
যেসব বাংলাদেশি কেনাকাটার জন্য এই মুহূর্তে কলকাতায় অবস্থান করছে তাদের অভিমত, বাংলাদেশে পোশাকের দাম কলকাতা তুলনায় অনেকটাই বেশি। সে কারণে, নিজের পাশপাশি পরিবারের জন্য কেনাকাটা করতেই কলকাতায় আসা। রমজানের শেষলগ্নে আনোয়ার হোসেন বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) চিকিৎসার কারণে ঢাকা থেকে এসেছেন। পেশায় চাকরিজীবী। তার অভিমত, চিকিৎসা এবং পরিবারের জন্য কেনাকাটা। এই দুই কারণে এবারে ঈদের আগে কলকাতায় আসা।
বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণে পোশাক উৎপাদন হলেও কেন কলকাতায় কেনাকাটা? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় জিনিষপত্রের দাম অনেকটাই বেশি। তার মধ্যে পোশাক রয়েছে। বিশেষ করে নারী পোশাক। তাই যখন চিকিৎসার জন্য কলকাতায় আসা তখন নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটি করা। কিছুটা সাশ্রয় হয়। কিন্তু, কারেন্সি যেখানে গেছে তাতেও কি সাশ্রয় হয়? তার অভিমত, সেই হিসেবে হয়ত নয়। তবে এখানে পোশাকের ভ্যরাইটিও অনেক।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে ১০০ টাকায় কলকাতার মানি এক্সচেঞ্চ থেকে মিলছে ৭৩.৫০ রুপি।
শফিক কাজ করেন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। তিনিও শেষ বেলায় কেনাকাটা করতে কলকাতা এসেছেন। তার অভিমত, বাংলাদেশের যে সমস্ত পোশাক তৈরি হয় তার বেশিরভাগটাই চলে যায় বিদেশে। সেসবের গুণগত মান প্রথম শ্রেণির। বাংলাদেশের যারা মধ্যবিত্ত তারা এই সমস্ত পোশাক কিনতে পারেন না। কলকাতায় আসতে খরচ হলেও এখানকার পোশাক নাগালের মধ্যে মেলে। তাই প্রতিবছর চেষ্টা করি ঈদের আগে যেকোন সময় একবার কলকাতার নিউমার্কেট থেকে কেনাকাটা করতে।
শফিনুর বেগম বলেন, কলকাতার নিউমার্কেটে নারী পোশাকে যত ধরনের বৈশিষ্ট্য আছে সচরাচর এতটা বাংলাদেশে দেখা যায় না। যে কারণে কলকাতায় আসা। তাছাড়া পরিবার আত্মীয়-স্বজন সকলের জন্য আমায় কিনতে হয়।
তিনি আরও বলেন, এখানে প্রসাধনী সামগ্রীও সস্তা।
জান্নাতুন্নেসা নামে অন্য এক নারী জানান, কলকাতায় এলেই চেষ্টা করেন একবছরের প্রসাধনী ও জুতা কেনার। তার অভিমত, এখানে জুতা অনেক সস্তা এবং স্টাইলিস্ট। বিশেষ করে কলকাতার এক বাঙালি কোম্পানির জুতো বেশি পছন্দ করেন বাংলাদেশিরা। এত সস্তায় কিভাবে এত ভালো লেদার দেয়! ভেবে পাই না।
ফলে গরমেও শেষ বেলায় জমে উঠেছে কলকাতার নিউমার্কেট চত্বরে কেনাকাটা। আর সেই কেনাকাটা রমজানের শেষ লগ্নে শপিং সারছেন মুষ্টিমেয় কিছু বাংলাদেশি। বিক্রেতাদের মতে আর দু’একদিন এ অঞ্চলে বাংলাদেশিদের দেখা মিলবে। এরপর আবার ঈদের দিন তিনেক পর।
বাংলাদেশ সময়: ১০১০ ঘণ্টা, এপিল ১৫, ২০২৩
ভিএস/এসএ