কলকাতা: ভারতের ষোড়শ লোকসভা নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। এ বছর ভারতের লোকসভা নির্বাচন হবে মোট ৯ দফায়।
দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই চালু হয়ে গেছে নির্বাচন কমিশনের “মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট”। এই আইনের বলে ভোটের দিন ঘোষণার পর থেকে পুলিশ এবং প্রশাসন নিয়ন্ত্রিত হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে।
“মডেল কোড অফ কন্ডাক্ট” চালু হবার সঙ্গে সঙ্গেই মিটিং-মিছিল, সভা-সমিতির উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ এবং নজরদারি রাখতে শুরু করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন।
এই নিয়মাবলীর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলিকে প্রচারের ব্যাপারে বেশ কিছু নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেমন ধর্ম, জাতি ইত্যাদিকে আঘাত করে, এমন কোন বিষয়কে প্রচারে আনা যাবে না।
কোনভাবেই কোন ধর্মীয় স্থানকে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করা যাবে না। কোন ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে মালিকের অনুমতি ছাড়া কোন ধরনের প্রচার কাজ করা যাবে না।
নির্বাচনের দিন ঘোষণার পর থেকেই এই বিধি চালু হয়ে গেছে। এই নিয়মের ফলেই ভোটের প্রচারে নেতা-মন্ত্রীরা সরকারী গাড়ি ব্যবহার করতে পারবেন না।
কোন সরকারী কর্মকর্তাকে এই সময়ের মধ্যে বদলি করা যাবে না। এমনকি নতুন করে কোন সরকারী কাজের জন্য দরপত্র, প্রকল্পের ঘোষণা বা এই ধরনের অন্য কোন কাজ করা যাবে না।
এই নিয়মে আরও বলা হয়েছে- কোন ভাবেই মিছিল করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে যাওয়া যাবে না। গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা চলার সময় মাইক ব্যবহারের উপরও নিষেধাঞ্জা জারি থাকবে।
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের সময় কমিশন হেলিকপ্টার ভাড়ার উপরও নজর রাখবে। এছাড়াও বিধি নিষেধ জারি থাকবে ‘হেলি প্যাড’ ব্যবহারের উপরেও। বিশেষ নিয়ম মানতে হবে বিভিন্ন গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রেও।
নির্বাচন কমিশনের তরফে রাজনৈতিক দলগুলির কাছে প্রচারের ক্ষেত্রে বিশেষ ভাবে প্লাস্টিক ব্যবহার না করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রার্থীদের যে কোন উপহার বিতরণের ক্ষেত্রেও।
এই বিধিতে বিশেষ ভাবে বলা হয়েছে ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগে নির্বাচনী এলাকায় বসবাসকারী মানুষ নয় এমন কোন ব্যক্তি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এলাকায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না।
এই বিধিতে রাত ১০টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত ভোট প্রচারসহ যে কোন অনুষ্ঠানে কোন মাইকে ব্যবহার করা যাবে না।
নিষিদ্ধ করা হয়েছে মিডিয়ায় যেকোনো ধরনের “একজিট পোল” অনুষ্ঠান । এমনকি যে কোন ধরনের প্রচার মূলক ‘এস এম এস’-এর ক্ষেত্রেও ভোট শুরুর ৪৮ ঘণ্টা আগেনিষেধাঞ্জা থাকবে ।
সরকারী নির্বাচন পরিদর্শক ছাড়া কোন ব্যক্তি ভোট কেন্দ্রের ১০০ মিটারের ভেতর মোবাইল ফোন বহন করতে পারবেন না।
ভোটের দিন কোন ব্যক্তিকে কোন রাজনৈতিক দলের তরফে কোন ধরনের যানবাহন করে ভোট কেন্দ্রে নিয়ে আসা যাবে না।
এছাড়াও নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত সবার জন্য নির্বাচন কমিশন আরও কিছু নির্দেশ জারি করছে। এর মধ্যে মিডিয়া, ভোটকর্মী, ভোট প্রার্থী, ভোটার, পোলিং এজেন্টদের জন্য রয়েছে বিশেষ বিশেষ কিছু নিয়ম।
আগামী ৭ এপ্রিল আসাম ও ত্রিপুরার ৬টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের মাধ্যমে শুরু হবে ভারতের লোকসভা নির্বাচন। ৯ এপ্রিল অরুণাচল প্রদেশ, মনিপুর ,মেঘালয়, মিজোরাম এবং নাগাল্যন্ডের ৭টি লোকসভা আসনে ভোট হবে।
১০ এপ্রিল নির্বাচন হবে বিহার, ছত্তিশগড় হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কেরল,কর্ণাটক, উড়িষ্যা, উত্তরপ্রদেশ, লাক্ষা দ্বীপ, আন্দামান-নিকবোর দ্বীপপুঞ্জ এবং দিল্লির কয়েকটি কেন্দ্রসহ দেশের মোট ৯২টি লোকসভা কেন্দ্রে ।
১২ এপ্রিল আসাম ,ত্রিপুরা এবং সিকিম এই তিন রাজ্যের ৫টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে।
১৭ এপ্রিল ভোট হবে বিহার, ছত্তিশগড়, গোয়া, জম্মু-কাশ্মীর, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মনিপুর, উড়িষ্যা, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গের ১২২টি লোকসভা কেন্দ্রে।
২৪ এপ্রিল আসাম, বিহার ,জম্মু–কাশ্মীর , মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, রাজস্থান, তামিলনাড়ু ,কর্ণাটক, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গসহ কেন্দ্রশাসিত পন্ডিচেরীর ১১৭ টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে।
৩০ এপ্রিল ৯টি রাজ্যের ৮৯ টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট হবে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গসহ বিহার, অন্ধ্রপ্রদেশ, গুজরাট, জম্মু-কাশ্মীর, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ ছাড়াও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল দারা, দিউ, দমন এবং নগর হাভেলিতে লোকসভা নির্বাচন হবে।
৭ মে ৭টি রাজ্যের ৬৪টি লোকসভা কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হবে। অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, হিমাচলপ্রদেশ, জম্মু-কাশ্মীর, উত্তরখণ্ড, উত্তর প্রদেশ ছাড়াও ভোট হবে পশ্চিমবঙ্গে।
১২ মে নির্বাচনের শেষ দিন ভোট হবে বিহার, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে।
এবার পশ্চিমবঙ্গের পাঁচ দফা নির্বাচনের প্রথম দফা নির্বাচন ১৭ এপ্রিল ভোট হবে কুচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি এবং দার্জিলিং লোকসভা কেন্দ্রে।
২৪ এপ্রিল ভোট রায়গঞ্জ, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ এবং বালুরঘাট কেন্দ্রে।
৩০ এপ্রিল ভোট হবে বর্ধমান পূর্ব এবং দুর্গাপুর, বোলপুর এবং বীরভূম কেন্দ্রে।
৭ মে ভোট হবে ঝাড়গ্রাম, আসানসোল, মেদেনিপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুর কেন্দ্রে। ১২ মে ভোট হবে বহরমপুর, কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, বনগাঁ, ব্যারাকপুর, বারাসাত, বসিরহাট ,জয়নগর, মথুরাপুর , ডায়মন্ড হারবার, তমলুক, কাঁথি এবং ঘাটাল কেন্দ্রে।
একইদিন ১২ মে ভোট হবে কলকাতা উত্তর, কলকাতা দক্ষিণ, যাদবপুর এবং দমদম কেন্দ্রেও।
৩০ মে ভোট হবে হাওড়া, উলুবেড়িয়া, শ্রীরামপুর, হুগলী, আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে।
ফলাফলের বিচারে গত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি পেয়েছিল ১টি আসন। বামফ্রন্ট পেয়েছিল ১৫টি আসন। জাতীয় কংগ্রেস পেয়েছিল ৬টি আসন তৃনমূল কংগ্রেস পেয়েছিল ১৯টি আসন, ১টি আসনে জিতেছিলেন নির্দল প্রার্থী।
গত নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে লড়াই করেছিল জাতীয় কংগ্রেস এবং তৃনমূল কংগ্রেস। এবার সেই জোট হয়নি। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের কাছে দেখার বিষয়- এর কোন প্রভাব নির্বাচনের ফলাফলে পড়ে কিনা।
ভোটের দিন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নিয়ম কানুন মেনেই প্রচার শুরু হয়ে গেছে। নির্বাচন কমিশনের তরফে প্রতিটি এলাকায় নির্বাচনের সমস্ত বিধি মানা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে কড়া নজর রাখতে বলা হয়েছে প্রশাসনকে।
বিভিন্ন জায়গায় ভোট দানের অধিকার এবং নিয়ম কানুনের সঙ্গে পরিচিত করাতে প্রচার শিবিরের আয়োজন করেছেন নির্বাচন কমিশন।
ভোটদান পর্ব পুরোটাই হবে ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন(ইভিএম)’-এর মাধ্যমে। এই নির্বাচনেই প্রথম এই মেশিনে যুক্ত হবে “না ভোট” বা “নোটা”।
এছাড়াও মেশিনে আনা হচ্ছে আরও একটি পরিবর্তন। ভোট দেবার পরেই এই বার প্রথম একমাত্র ভোটাররা দেখতে পাবেন তার ভোটটি তিনি কোন প্রার্থীকে দিলেন। মেশিন থেকে বেড়িয়ে আসবে একটি কাগজ যেটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে অন্য একটি বাক্সে গিয়ে জমা হবে।
ভোটাররা চোখে দেখতে পেলেও কাগজটিতে কোনভাবে হাত দিতে পারবেন না। এর মাধ্যমে ভোটাররা নিশ্চিত হতে পারবেন যে মেশিনে কোন প্রকার গোলমাল নেই এবং তার ভোটটি তিনি যে প্রার্থীকে দিতে চেয়েছেন তাকেই দিয়েছেন।
প্রতিটি বুথে থাকবে পুলিশ। এছাড়াও বিশেষ বিশেষ বুথে থাকবে আধা সামরিক বাহিনী। বুথে বুথে ঘুরে নির্বাচন দেখবেন বিশেষ পর্যবেক্ষকরা।
এখন এটাই দেখার বৃহত্তম গণতন্ত্রের এই বিরাট কর্মকাণ্ড কতটা দক্ষতার সঙ্গে এবং শান্তিপূর্ণভাবে সফল করতে পারেন ভারতের নির্বাচন কমিশন।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২৪ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪